চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনে আমাদের করনীয় কী ?
--------------------------------------------------------------
আজ চন্দ্র গ্রহন। অনেকেই গর্ভবতী মহিলাদের উপর চন্দ্র/সূর্য গ্রহণের প্রভাবের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছেন।
*
কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সূর্য গ্রহন ও চন্দ্র গ্রহনের কোন প্রভাব গর্ভবতী মা, বা তার গর্ভস্থ ভ্রুনের উপর পড়ে না।
*
গর্ভবতী মা কোন কিছু কাটলে, ছিঁড়লে বাচ্চা ঠোঁট কাটা জন্মাবে, কোন কিছু ভাঙলে, বাঁকা করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেবে – এধরনের যত কথা প্রচলিত আছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা, যার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর কোন সম্পর্ক নেই। চন্দ্র, সূর্য বা অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু অদৃশ্য ভাবে কারও উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে এধরনের বিশ্বাস রাখা তাওহীদের পরিপন্থী।
*
যে আল্লাহ তা’য়ালা ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে তার মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে চন্দ্র, সূর্যের গ্রহণও একেকটি নিদর্শন।
*
কেউ যদি চন্দ্র বা সূর্য গ্রহন দেখে, তার উচিত হবে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ করা ও বেশী বেশী করে সে সময় আল্লাহকে স্মরণ করা।
রাছূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন -
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ، لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللهَ وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُو
•► “চন্দ্র এবং সূর্য এ দুটি আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম। কারও জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এদের গ্রহন হয় না। তাই তোমরা যখন প্রথম গ্রহণ দেখতে পাও, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর তার নিকট দুয়া কর এবং তাকবীর দাও,ছলাত আদায় কর এবং সদকাহ প্রদান কর।”
[সহিহ বুখারীঃ৯৯৪,৯৯৫,৯৯৭, ৪৮১৮ ]
*
অন্য বর্ণনায় রাসুল (সাঃ) বলেছেন-
•► “চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ কারও জন্ম বা মৃত্যুর কারণে লাগেনা বরং এদুটো আল্লাহর নিদর্শন, যা দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সতর্ক করেন। অতএব তোমরা যখন গ্রহণ লাগতে দেখ, আল্লাহর জিকিরে মশগুল হও যতক্ষণ তা আলোকিত না হয়ে যায়।”
[সহীহ মুসলিমঃ ১৯৭২]
আমাদের উচিত যা কিছু কুরআন ও রাসুল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) এর সুন্নাহতে রয়েছে সে সম্পর্কে জানা ও সে অনুযায়ী আমল করা।
*
ছলাতুল কূসুফ ওয়াল খুসূফ বা চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের ছলাতঃ
১।এ নামায চারটি রুকু ও চারটি সিজদার মাধ্যমে সর্বমোট দু'রাকাত আদায় করতে হয়।
২।অন্যান্য ছলাতের মতই কিরাত হবে, তবে লম্বা সিজদা,লম্বা রুকূ ও লম্বা কিরাত এই ছলাতের সুন্নাহ।বলতে গেলে যতক্ষন না গ্রহন শেষ নাহয় ততক্ষন ছলাত রত থাকা।১ম রাকাতে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদায় না গিয়ে আবার দীর্ঘ একটি সুরা পাঠ করবেন,তারপর দুটি সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দণ্ডায়মান হবে এবং এ রাকাতও প্রথম রাকাতের ন্যায় দুটি রুকু ও দুটি সিজাদার মাধ্যমে আদায় করবেন।
[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম,প্রশ্নঃ৩৩৬-শায়খ সালেহ আল উসাইমীন]
৩।জামাতে ছলাত আদায় করা এবং তা মাসজিদে হওয়া উত্তম, তবে কেউ যদি বিশেষ কারনে একা একা এবং ঘরেও পড়ে তবুও হবে তবে সুন্নাহ হচ্ছে একসাথে জামাতে পরা।
৪।পুরুষ মহিলা সবাই এ ছলাত পড়তে পারবে।
৫।সালাত শেষে ইমাম খুতবা দিবে এটিও এর অন্তর্ভুক্ত।
৬।যদি সাধারন নিয়মেও ২ রাকাত কুসূফ বা খুসূফের সালাত আদায় করে তবুও হয়ে যাবে।
*
বিজ্ঞানের যুক্তি : সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় চলে আসে। ফলে সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণী শক্তি বেশী মাত্রায় পৃথিবীর উপরে পতিত হয়। এর প্রচন্ড টানে অন্য কোন গ্রহ থেকে পাথর বা কোন মহাজাগতিক বস্ত্ত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে পৃথিবী ধ্বংসের একটা কারণও হ’তে পারে। ১৯০৮ সালের ৩০ শে জুন ১২ মেগাটন টিএনটি ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিশালাকার জ্বলন্ত পাথর (মিটিওরাইট) রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জঙ্গলে পতিত হয়ে ৪০ মাইল ব্যাস সম্পন্ন ধ্বংসগোলক সৃষ্টি করেছিল। আগুনের লেলিহান শিখায় লক্ষ লক্ষ গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।
[ ঢাকা, দৈনিক ইনকিলাব, ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০০০, পৃঃ
১১। উল্লেখ্য যে, ১০ লাখ টনে এক মেগাটন হয়।]
*
আল্লাহ যেন আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন এবং আমাদেরকে রাসুল (সাঃ) এর দেওয়া শিক্ষাকে দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে থাকতে সাহায্য করুক। আমীন।
No comments:
Post a Comment