তাবলীগ জামায়াতের কিতাবে শিরকি ও কুফরী
বিষয়ঃ- মৃত্যুর সময় ও স্থান অবগত হওয়া!
==========================
ঘটনাঃ ১
শায়েখ আবু ইয়াকুব ছনুছি (রঃ) বলেন, আমার একজন মুরীদ আমার নিকট আসিয়া বলিল, ‘আমি আগামিকাল জোহরের সময় মরিয়া যাইব’। তাহার কথামত অপর দিন জোহরের সময় সে হারাম শরীফে আসিল ও তাওয়াফ করিল ও কিছু দুরে গিয়া মরিয়া গেল। আমি তাহাকে গোসল দিলাম ও দাফন করিলাম। যখন তাহাকে কবরে রাখিলাম সে তখন চোখ খুলিল। আমি বলিলাম মউতের পরও জীবিত থাকা যায় না কি? সে তখন বলিল আমি জীবিত আছি এবং আল্লাহ্র প্রতিটি প্রেমিকই জীবিত থাকেন।
[ফাজায়েল ছাদাকাত- জাকারিয়া সাহারানপুরি; অনুবাদক মোঃ ছাখাওয়াত উল্লাহ; ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ২৭০; তাবলিগী কুতুবখানা ১৪২৬ হিজরী]
.
ঘটনাঃ ২
'জনৈক ব্যাক্তি বলিলেন, আমি হজরত মমশাদ দুনইউরীর খেদমতে বসিয়া ছিলাম ইত্যবসরে একজন ফকির আসিয়া বলিলঃ ’এখানে কি পাক পবিত্র কোনও জায়গা আছে? যেখানে কোনও লোক মরিতে পারে?’ হজরত মমশাদ একটি জায়গার দিকে ইশারা করিলেন যেখানে একটি ঝরনা ছিল। লোকটি সেখানে গিয়া অযু করিল নামায পড়িল ও পা লম্বা করিয়া শুইয়া পড়িল ও মরিয়া গেল।
[ফাজায়েল ছাদাকাত- জাকারিয়া সাহারানপুরি; অনুবাদক মাওলানা মোঃ ছাখাওয়াত উল্লাহ; ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ২৬৬; তাবলিগী কুতুবখানা ১৪২৬ হিজরী]
ঘটনাঃ ৩
আবু আলী রোদবারী (রহঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিলঃ ’এখানে এমন কোন পরিস্কার জায়গা আছে কি, যেখানে কোন ফকির মরিতে পারে?’ আমি তাহাকে বাজে কথা মনে করিয়া বলিলামঃ আসো, ভিতরে আসিয়া যেখানে ইচ্ছা সেখানে মর। সে ভিতরে আসিয়া অজু করিয়া কয়েক রাকাআত নামাজ পড়িল ও মরিয়া গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যাবস্থা করি। দাফনের পর আমার খেয়াল হইল কাফন হটাইয়া তাহার মুখ জমিনের মধ্যে রাখিয়া দেই, যেন আল্লাহ পাক তাহার দারিদ্রতার উপর রহম করেন। তাহার মুখ খুলিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল। আমি বলিলামঃ মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিলঃ আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি কাল কেয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে তোমার সাহায্য করিব।
[ফাজায়েলে সাদাকাত- জাকারিয়া সাহারানপুরি; অনুবাদক ছাখাওয়াত উল্লাহ; ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ২৮০; তাবলিগী কুতুবখানা; সংশোধিত সংস্করন ১৪২৬ হিজরী]
.
উপরোক্ত গল্প তিনটির মাধ্যমে আমরা যা বুঝতে পারিঃ
মুরিদ তার নিজের মৃত্যুর সময় ও স্থান জানতেন!
মৃত্যুর পরও মৃত ব্যাক্তি জীবিতদের সাথে কথা বলে!
মানুষ মরণশীল, কিন্তু আল্লাহর প্রেমিক মরে না!
উপরোক্ত বিষয়গুলির মধ্যে থেকে আরও অতিরিক্ত বুঝা যায় যে,
মুর্দার মুখ জমিনের উপর রাখিয়া দিলে আল্লাহ রহম করেন!
কিয়ামতে ফকিরেরা নিজের প্রভাব ও প্রতিপত্তি খাটিয়ে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন!
.
উপরোক্ত প্রত্যেকটি পয়েন্টই কুরআন ও হাদীস বিরোধী আকীদাহ।
এর সবগুলো একসাথে খণ্ডন করতে গেলে লেখাটা অনেক লম্বা হয়ে যাবে! তাই আমি শুধুমাত্র প্রথম পয়েন্ট সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি!আর বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে কোন এক পোষ্টে আবার দিবো,ইন-শা-আল্লাহ।
.
আসুন জানার চেষ্টা করি যে, মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো মরনের সময় ও স্থান সম্পর্কে জানার ক্ষমতা আছে কি?
.
আমরা সাধারনভাবে সবাই জানি- মানুষের মৃত্যু কখন, কোথায় ও কিভাবে ঘটবে তা মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। কিন্তু উপরোক্ত দুটি ঘটনায় দেখা যাচ্ছে ‘আল্লাহ ছাড়া মানুষেরাও জানার ক্ষমতা রাখে'! মজার বিষয় হচ্ছে, এই সমস্ত তথাকথিত 'আল্লাহর প্রেমিকেরা' মরনের সময়, স্থান ইত্যাদি গায়েবের খবর জানেন অথচ দৃশ্যমান কোনো পাক-পবিত্র জায়গা খুজে পেতে অক্ষম, যার কারনে তারা অন্যকে জিজ্ঞেস করেন,‘এখানে কোনো পাক পবিত্র জায়গা আছে কি?’
.
আল্লাহর খাস ওলীরা আগে থেকেই তাদের মৃত্যুর সময় জানতে পারে! কিন্তু হাস্যকর ব্যাপার লক্ষ্য করুন, যিনি এত বড় ওলী(!) তিনি কত বড় অন্ধ যে, একটা পাক-পবিত্র যায়গা খুজতে অক্ষম। যিনি এত বড় গায়েবের খবর যানেন তার পক্ষে এটা কতটুকু শোভনীয়?
.
যাই হোক যুক্তি আমাদের দলীল নয়, আমাদের পুঁজি কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। আসুন আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে উপরোক্ত গল্প যাচাই করি। নিম্নে আমরা আমাদের দলীলগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি ইন-শা-আল্লাহ।
কখন মরন আসবে মানুষের তা জানা নেইঃ
আল কুরআনে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন,
-কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্র নিকটই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, জরায়ুতে কি আছে তা তিনিই জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে,কেউ জানে না সে কোন জায়গায় মারা যাবে। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বাধিক অবহিত। [সূরা লুকমান ৩১:৩৪]
.
ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন,গায়েবের চাবি হল পাঁচটি, যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ জানে না-
১। কেউ জানে না যে, আগামীকাল কি ঘটবে।
২। কেউ জানে না যে, আগামীকাল সে কি অর্জন করবে।
৩। কেউ জানে না যে, মায়ের গর্ভে কি আছে।
৪। কেউ জানে না যে, সে কোথায় মারা যাবে।
৫। কেউ জানে না যে, কখন বৃষ্টি হবে।
[বুখারি অধ্যায় ১৫/২৯ হা/১০৩৯]
.
শেষ কথাঃ
উপরোক্ত কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি, প্রতিটি প্রান কখন, কোথায় হরন করা হবে তা একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। কেউ যদি বিশ্বাস করে যে আল্লাহ ছাড়া এই বিষয়ে অন্য কারো জানার ক্ষমতা রয়েছে তাহলে তা আল্লাহর সাথে শিরক ও কুফরে পরিনত হবে।
.
এই বিষয়ে কুরআন ও হাদিস থেকে আরও কতিপয় দলীল রয়েছে। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতির ভয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা না করে শুধুমাত্র একটি আয়াত ও একটি হাদিস পেশ করলাম। আমরা আশংকা করছি এরপরও হয়তো কিছু ভাই আমাদের বিরোধিতা করবেন। তাদের বিরোধিতা থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সত্য সন্ধানীর জন্য একটি প্রমাণই যথেষ্ট, আর প্রবৃত্তির অনুসারির জন্য হাজারটা দলিলও যথেষ্ট নয়।
.
আল্লাহ্ আমাদেরকে কুরআন ও হাদিসের সঠিক জ্ঞান দান করুণ এবং সকল প্রকার শিরক, কুফরি ও বাতিল আকিদাহ থেকে হেফাজত করুন। আমিন...!
No comments:
Post a Comment