Monday, September 11, 2017

গোটা মুসলিম উম্মাহ শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, এই আক্রমন হতে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?



Image may contain: text


শায়খ আপনি জানেন যে, গোটা মুসলিম উম্মাহ শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, এই আক্রমন হতে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?
উত্তর দিয়েছেনঃ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তার রাসুলের উপর শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলিম উম্মাহ তার শত্রুদের দ্বারা বিপদগ্রস্থ হচ্ছে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি এবং জেনে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কে মুজাহিদ ও কে দৃঢ়পদে রয়েছে?” সুরা মুহা’ম্মদঃ ৩১। 
মুসলিম উম্মাহ অবশ্যই তার শত্রুদের দ্বারা বিপদগ্রস্থ হবে, এবং তাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদেরকে প্রাণ ও সম্পদ উভয় ক্ষেত্রে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া আহলে কিতাব ও মুশরিকদের হতে বহু কষ্টদায়ক কথা শুনতে হবে। এ অবস্হায় তোমরা যদি ধৈ্য্য ধারণ করো এবং আল্লাহভীরুতার নীতি অনুসরণ করো, তাহলে তা হবে খুব বড় ধরণের দুঃসাহসিক কাজ।” আলে ইমরানঃ ১৮৬। 
তিনি আরো বলেছেন, “যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো তাহলে তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা।তারা যা করছে আল্লাহ তা সবই জানেন।” আলে ইমরানঃ ১২০।
অতএব উম্মাহর কর্তব্য হল ধৈর্যধারণ করা, আত্নসমালোচনা করা, দ্বীনকে শক্তভাবে আকড়ে ধরা, শত্রু কি বলছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা, আল্লাহর কিতাব ও রাসুল (স) এর সুন্নতকে অনুসরণ করা, কথা, কাজ, আকিদা (বিশ্বাস) দিয়ে সুদৃঢ় ভুমিকা গ্রহন করা, এবং আল্লাহর শরীয়তকে তার বান্দাদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। সবগুলা ইসলামি দেশের জন্য এ মুহূর্তে এটাই কর্তব্য। যদি কথা, কাজ, আকিদা (বিশ্বাস) দিয়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ সত্যিকার অর্থে আল্লাহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তবে শত্রুদের হৈচৈ ও ষড়যন্ত্র কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর বাণী পূ্বেই উল্লেখ করেছি, “যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, তারা যা করছে আল্লাহ তা সবই জানেন।” আলে ইমরানঃ ১২০।
এ ব্যপারে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল তার কিতাবে আরো বলেন, “তোমরা ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই আছেন।” আনফালঃ ৪৬।
"তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, তোমাদের পা-কে দৃঢভাবে প্রতিষ্টিত রাখবেন।" মুহাম্মদঃ ৭।
“আল্লাহ সেইসব লোককে অবশ্যই সাহায্য করবেন যারা তাকে সাহায্য করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও পরক্রমাশীল। এরা এমন লোক যে আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে ক্ষমতা প্রদান করি তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, ভালো কাজের আদেশ করবে, খারাপ কাজের নিষেধ করবে। আল্লাহর হাতে সমস্ত কাজের পরিণতি।" হজ্বঃ ৪০-৪১।
"মুমিনদের সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য " রুমঃ ৪৭। 
মুমিনরাই আল্লাহর আদেশের দৃঢভাবে ধারণকারী ও হারাম সমূহ পরিত্যাগকারী। তারা আল্লাহর হুদুদের সামনে থেমে যায় এবং তার শরীয়তকে দৃঢভাবে প্রতিষ্ঠাকারী। এরাই হল প্রকৃত মুসলিম ও আল্লাহর ওয়ালী।
আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যদি ঈমান আনো,নেক আমল করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফত দান করবেন,যেমন দিয়েছিলেন পূর্ববতীগণকে। আল্লাহ তাদের জন্য যে দ্বীন মনোনীত করেছেন সে দ্বীনকে তিনি তাদের উপর দৃঢ ভিত্তির উপর কায়েম করে দিবেন। তাদের বর্তমান ভীতিজনক অবস্হাকে নিরাপত্তায় রুপান্তরিত করবেন। তারা যেন শুধু আমার ইবাদত করে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে। নুরঃ ৫৫। 
মুসলমানেরা যখনই আল্লাহর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরবে, আল্লাহর পক্ষ হতে আগত বিধি নিষেধকে মেনে চলবে, হারাম বস্তু থেকে দূরে অবস্হান করবে, তার শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা করবে, তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করবেন, শত্রুর বিপক্ষে শক্তি যোগাবেন, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য কল্যাণ, শান্তি, নিরাপত্তা, সৌভাগ্য নির্ধারণ করে দিবেন।
আল্লাহ বলেন, “সত্যিকার নিরাপত্তা ও শান্তি তাদের জন্য,যারা ঈমান এনেছে এবং ঈমানকে জুুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি। তারাই সত্যিকার সৎপথ প্রাপ্ত।” আনআমঃ ৮২। 
ঈমান যখন সাধারণ অর্থে বা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় তখন তার ভিতরে আল্লাহ ও তার রাসুলের সমস্ত আদেশ ও নিষেধ অন্তভুক্ত হয়। এক্ষেত্রে তার অর্থ দাড়ায়, আল্লাহর একত্ববাদের উপর সুদৃঢভাবে প্রতিষ্টিত হয়েছে। আল্লাহর হক আদায় করেছে এবং তার হারামসমুহ হতে দুরে অবস্হান করেছে। তাই দুনিয়া ও আখিরাতে উভয়তে রয়েছে তাদের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা, হিদায়াত। তারা যদি সত্যকে শক্তভাবে আঁকড়ে দরে তাহলে শত্রুরা তাদের কোনরুপ ক্ষতিই করতে পারবেনা। কিন্তু তারা যদি কোনরুপ হারাম কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর বিধানের প্রতি অমনোযোগী হয় তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্হ হবে। নবী (স) ছিলেন সৃষ্টিকুলের সেরা। তিনি যখন ওহুদ যুদ্ধে তীরন্দাজদের যে দায়িত্ব দিয়েছিল তা তারা পালন করতে ব্যার্থ হল তখন শত্রুরা তাদের উপর চড়াও হল, মুসলিমরা পরাজয় ও লাছ্ঞনার সম্মুখীন হল। তাদের অনেজে নিহত ও আহত হলো।
মহান আল্লাহ এর কারণ উল্লেখ করেছেন, “আল্লাহ তোমাদের (সাহায্য সহযৌগিতার) যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তা তিনি পুর্ণ করেন। শুরুতে তেমরা তার নির্দেশেই তাদের হত্যা করেছিলে। কিন্তু তোমরা যখন দুর্বলতা প্রকাশ করছিলে এবং নিজেদের ভিতরে মতানৈক্য করছিলে, এবং যা তোমাদের অতীব প্রিয় ছিলো, আল্লাহ যে মাত্র দেখালেন, তোমরা তোমাদের নির্দেশ লংঘন করে বসলে” আলে ইমরান:১৫২। 
অর্থাৎ তিনি কাফেরদেরকে তোমাদের উপর প্রাধান্য ও ক্ষমতা দান করলেন। সারকথা হলো ব্যক্তি অথবা রাষ্ট্র হিসাবে সকলের উচিত আল্লাহর দ্বীনের উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্টিত থাকা, তার শরীয়তকে আকঁড়ে ধরা। কথা, কাজে ও আকিদা বিশ্বাসে তার হুদুদকে মেনে চলা এবং এরই আলোকে ঘৃণা ভালবাসা,বন্ধুত্ব শত্রুতা পোষন করা। এটাই মহান আল্লাহর সাহায্য ও সৌভাগ্যলাভের পথ। মুসলমানেরা যদি এ নীতি অনুসরণ করে তাহলে কাফেররা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা। নিম্নোক্ত আয়াতে এ কথায় বলা হয়েছে, 
“যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো তাহলে তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা,তারা যা করছে আল্লাহ তা সবই জানেন।” আলে ইমরানঃ ১২০। 
মুসলমানদের অবহেলা ও অবজ্ঞা কারণে তাদের উপর বিপদ আসবে। যখন তারা আল্লাহর কোন আদেশকে অমান্য করে এবং তাদেরকে যে প্রস্তুতি গ্রহন করতে বলা হয়েছে তা পরিত্যাগ করে এবং যে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে তা পরিত্যাগ করে তখনই তারা বিপদগ্রস্হ হয় এবং শত্রু তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে বসে। তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “যতদূর সম্ভব তাদের বিরুদ্ধে শক্তি ও অস্ত্র প্রস্তুত কর।” সুরা আনফাল।
সতর্কতা ও সদাতৎপর থাকা সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা প্রস্তুত থাকো।” নিসাঃ ৭১। 
মুসলমানেরা যখনই আল্লাহর আদেশকে অবহেলা করেছে এবং হারাম কোন কাজে লিপ্ত হয়েছে, তখনই তারা বিপদগ্রস্হ হয়েছে, শত্রুরা তাদের উপর আধিপত্য বিস্স্তার করেছে। আল্লাহ যেন মুসলিম জাতি ও সরকারকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন,তাদের হৃদয় মন, কর্মকাণ্ড পরিশুদ্ধ করেন এবং আল্লাহর শরীয়ত প্রতিষ্টা ও তার উপর ঠিকে থাকার সুযোগ দান করেন।
উৎস গ্রন্থঃ বিরোধীতার মোকাবেলায় ইসলামের কর্মনীতি, 
পৃষ্ঠাঃ ৫-৯।

No comments:

Post a Comment