‘রুকন’ অর্থ স্তম্ভ। এগুলি অপরিহার্য বিষয়। যা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায়। যা ৭টি। যেমন-
(১) ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো : আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)
(২) তাকবীরে তাহরীমা : ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠানো। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩)- অর্থাৎ তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর। রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘ছালাতের জন্য সবকিছু হারাম হয় তাকবীরের মাধ্যমে এবং সবকিছু হালাল হয় সালাম ফিরানোর মাধ্যমে’।[আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী ১২১ পৃঃ]
(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, (লা ছালা-তা লেমান লাম ইয়াক্বরা’ বেফা-তিহাতিল কিতা-বে) ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না’।[ইবনুল ক্বাইয়িম, বাদায়ে‘উল ফাওয়ায়েদ ৩/৮৯-৯০; মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, মাসআলা-৩২০, ১/২৩৬ পৃঃ]
( ৪ ও ৫) রুকূ ও সিজদা করা : আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ কর ও সিজদা কর...’(হজ্জ ২২/৭৭)।
(৬) তা‘দীলে আরকান বা ধীর-স্থির ভাবে ছালাত আদায় করা :
‘আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি তাকে সালামের জওয়াব দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। এইভাবে লোকটি তিনবার ছালাত আদায় করল ও রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবার ফিরিয়ে দিলেন।(অতঃপর তিনি তাকে ধীরে-সুস্থে ছালাত আদায় করা শিক্ষা দিলেন)’।[মুত্তা
ফাক আলাইহ,মিশকাত হা /৭৯০,সালাতের বিবরণ’ অনু১০]
(৭) ক্বা‘দায়ে আখীরাহ বা শেষ বৈঠক:
শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানোটাই ছিল রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নাত।[বুখারি , মিশকাত হা/
৯৪৮’তাশাহহুদে দুয়া অনুচ্ছেদ-১৭]
কঠিন অসুখ বা অন্য কোন বাস্তব কারণে অপারগ অবস্থায় উপরোক্ত শর্তাবলী ও রুকন সমূহ ঠিকমত আদায় করা সম্ভব না হ’লে বসে বা শুয়ে ইশারায় ছালাত আদায় করবে।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৭, ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।] কিন্তু জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোন অবস্থায় ছালাত মাফ নেই।
#ছালাতের ওয়াজিব সমূহ কি কি?
রুকন-এর পরেই ওয়াজিব-এর স্থান, যা আবশ্যিক। যা ইচ্ছাকৃতভাবে তরক করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায় এবং ভুলক্রমে তরক করলে ‘সিজদায়ে সহো’ দিতে হয়। যা ৮টি।
[আবুদাঊদ হা/৮৪০; ঐ, মিশকাত হা/৮৯৯ অনুচ্ছেদ-১৪।] যেমন-
১. ‘তাকবীরে তাহরীমা’ ব্যতীত অন্য সকল তাকবীর।[আবুদাঊদ হা/৮৩৮; ঐ, মিশকাত হা/৮৯৮ অনুচ্ছেদ-১৪, টীকা, পৃঃ ১/২৮২; মির‘আত ৩/২১৭-১৮; ইরওয়া হা/৩৫৭।]
২. রুকূতে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’ বলা।[‘কেননা দুই হাতও সিজদা করে যেমন মুখমন্ডল সিজদা করে থাকে’। -মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৯০৫ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।]
৩. ক্বাওমার সময় ‘সামি‘আল্লা-হু লেমান হামেদাহ’ বলা।[ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২৩; আবুদাঊদ, তিরমিযী, নায়লুল আওত্বার ৩/১২১।
৪. ক্বওমার দো‘আ কমপক্ষে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ অথবা ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ’ বলা। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৭৯২ অনুচ্ছেদ-১০, হা/৮৮৮ অনুচ্ছেদ-১৪।]
৫. সিজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ বলা।[মুত্তাফাক্ব ‘আলআইহি, মিশকাত হা/৮৯১ অনুচ্ছেদ-১৪।]
৬. দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ও দো‘আ পাঠ করা। যেমন কমপক্ষে ‘রবিবগফিরলী’ ২ বার বলা।[আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮০১।]
৭. প্রথম বৈঠকে বসা ও ‘তাশাহহুদ’ পাঠ করা।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৮ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।]
৮. সালামের মাধ্যমে ছালাত শেষ করা।[আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৬ পৃঃ।]
No comments:
Post a Comment