Sunday, October 15, 2017

বর্তমানে বা পূর্বে ব্যবহৃত তাজবী বা জপ মালা এবং কাউন্টার মেশিন দিয়ে তাসবিহ পাঠ সুন্নাত না বিদায়াত?



Image may contain: one or more people and text


প্রশ্ন : বর্তমানে বা পূর্বে ব্যবহৃত তাজবী বা জপ মালা এবং কাউন্টার মেশিন দিয়ে তাসবিহ পাঠ সুন্নাত না বিদায়াত? আশা করছি দলিল ভিত্তিক উত্তর প্রদান করে সাহায্য করবেন৷
==========================
উত্তর: হাতের আঙ্গুল দিয়ে তাসবীহ গণনা করা উত্তম। কেননা, এই আঙ্গুলগুলো কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দিবে। তবে কারও আঙ্গুলে গুণতে সমস্যা থাকলে বা অসুস্থ বা বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে সংখ্যা মনে রাখতে না পারলে তখন তাসবীহ দানা বা ডিজিটাল কাউন্টার মেশিন দিয়ে গণনা করতে পারে।

*প্রশ্ন: তাসবীহ কি আঙ্গুল দ্বারা উত্তম না তাসবীহ দানা দ্বারা?*
উত্তর: শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) বলেছেন, তাসবীহ্ দানা ব্যবহার করা জায়েয। তবে উত্তম হচ্ছে, হাতের আঙ্গুল ও আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা নবী (সা) বলেন,
اعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ
“*আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ্ গণনা কর। কেননা (ক্বিয়ামত দিবসে) এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে এবং এগুলোকে কথা বলানো হবে।*” (আহমাদ। আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ছালাত, অনুচ্ছেদঃ কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ দু’আ, অনুচ্ছেদঃ তাসবীহ্ পাঠ করার ফযীলত।)
তাছাড়া তাসবীহ্ ছড়া হাতে নিয়ে থাকলে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবের উদ্রেক হতে পারে। আর যারা তসবীহ্ ছড়া ব্যবহার করে সাধারণতঃ তাদের অন্তর উপস্থিত থাকে না। এদিক ওদিকে তাকায়। সুতরাং আঙ্গুল ব্যবহার করাই উত্তম ও সুন্নাত সম্মত। [দ্র: ফতোয়া আরকানুল ইসলাম ২৬০ নং প্রশ্নের উত্তর.   

🔘 প্রশ্ন : আমাদের দেশে সন্ধ্যা হলে অবশ্যই ঘরে বাতি জালানো হয়, সবাই বলে সন্ধ্যায় বাতি জ্বালানো না হলে অমঙ্গল হয় আবার অনেকে বলে ঘরে শয়তান আসে, আমি জানতে চাচ্ছি এ কথাগুলোর কি কোনো সত্যতা আছে? ============== উত্তর : “সন্ধ্যা হলে বাতি জ্বালাতে হবে; না হলে ঘরে শয়তান আসবে”- এমন কোন হাদীস হাদীসের কিতাবে অনুসন্ধান করে পাই নি।
তবে 'সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ঘরে বাতি জ্বালাতে হবে না হলে অকল্যাণ হবে' এমন একটা হিন্দুয়ানী কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। ইসলামে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বাতি জ্বালানোর নির্দেশনা নেই। তবে অন্ধকার হলে স্বাভাবিক নিয়মতেই বাতি জ্বালানো প্রয়োজন। এটা আমারা আমাদের প্রয়োজনেই করে থাকি।
উল্লখ্য যে, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ঘরে যদি সূরা বাকারা পাঠ করা হয় তাহলে শয়তান ঘরে আসবে না বা ঘর থেকে বের হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে ঘরে প্রবেশের সময় দুআ পাঠ, সালাম প্রদান, সকাল-সন্ধ্যার দুআ ও যিকির পাঠ, নফল সালাত আদায় ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ঘরকে শয়তানের অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম   

🔘 প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায় যে, গোস্তে, মাছের শরীরে, গাছের পাতায়, গরুর গায়ে আল্লাহ লিখা দেখা গেছে। আমার প্রশ্ন এমন ঘটনায় কি কিছুর আলামত প্রকাশ করে? ভালো বা খারাপ? বা এসব দেখে আমাদের কি কিছু করনীয় আছে? 
==================
উত্তর : গোস্তের টুকরা, গাছের পাতা, মাছের গায়ে, রুটিতে, বাচ্চার শরীরে কোন চিহ্ন যা দেখতে আল্লাহ, মুহাম্মদ বা ইসলামের বিশেষ কোন চিহ্নের মত মনে হলে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। হতে পারে বিষয়টি কাকতালীয়। এটি ইসলামের সত্যতার প্রমাণ বহন করে না। কেননা, এমন বহু চিহ্ন দেখা যায়, যা দেখতে খৃষ্টানদের ক্রুশ, হিন্দুদের গণেশ বা অন্যান্য ধর্মের ধমীর্য় সিম্বল মনে হয়। তাই বলে তখন সেগুলো সে সব ধর্মের সত্যতার প্রমাণ হয়ে যায় না।
সুতরাং এ সব চিহ্ন, দাগ বা আকৃতি দেখে আমাদের কোন কিছুই করণীয় বা বর্জনীয় নেই। আমাদের কতর্ব্য কুরআন-সুন্নাহ দেখে ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করা এবং তদানুযায়ী আমল করা। আল্লাহ তাওফিক দানকারী। 
  

🔘 প্রশ্ন : কোনো পিতা মাতা যদি তাদের কয়েকজন সন্তানের মধ্যে কোনো সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন এবং অন্যান্য সন্তানের চেয়ে সে সন্তানের চাহিদা বেশি পুরন করে থাকেন এ ক্ষেত্রে কি পিতামাতা গুনাহ হবেন? 
===================== 
উত্তর : পিতা-মাতার জন্য সন্তানদের প্রতি লেনদেন ও সে সন্তানের চাহিদা প্রদানের ক্ষেত্রে পার্থক্য করা জায়েয নাই। তবে মনের টান ও ভালবাসার মনের বিষয়। এটা মানুষের নিয়ন্ত্রনে নেই। তাই কোন সন্তানের কিছু স্বতন্ত্র গুণ-বৈশিষ্টের কারণে বাবা মা যদি তাকে অতিরিক্ত ভালবাসে তবে তাতে গুনাহ নেই। কিন্তু অধিকার দেয়ার দেয়ার ক্ষেত্রে সন্তানদের মাঝ্যে কোন পার্থক্য করা যাবে না। আল্লাহু আলাম। 
  

🔘 প্রশ্ন : বাবা -মা য়ের প্রতি কার বেশি দায়িত্ব? ছেলে নাকি মেয়ের? জানাবেন শাইখ। ================= উত্তর : ছেলে ও মেয়ে উভয়ের দায়িত্ব বাবা মার খেদমত করা ও তাদের দেখাশোনা করা। তবে একজন মেয়ে বিয়ের পর তার মূল দায়িত্ব স্বামীর অনুগত্য করা ও তার খেদমত করা। তবে স্বামীর বাড়িতে থাকা অবস্থায়ও সাধ্যানুযায়ী খোঁজ-খবর নিবে এবং স্বামীর অনুমতি স্বাপেক্ষে তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করবে।   
🔘 প্রশ্ন : মাইকে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা কি ঠিক হবে? 
================
উত্তর : মানুষ মৃত্যু বরণ করলে স্থানীয় লোকজনকে খবর দেয়ার উদ্দেশ্যে মাইকে মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা জায়েজ আছে। 
 

🔘 প্রশ্ন : আমি আমার স্বামীর জন্মদিনে তাকে কিছু উপহার দিলে কি গুনাহ হবে? ================== উত্তর : জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা ইসলামী কালচার নয়। বরং তা অপসংস্কৃতি। তাই এ উপলক্ষে, কোন ধরণের আয়োজন-অনুষ্ঠান, শুভেচ্ছা বিনিময় বা উপহার লেনদেন বৈধ নয়। আপনি আপনার স্বামীকে উপহার দিতে চাইলে বছরের যে কোন সময় দিতে পারেন। উপহার দিলে পারস্পারিক ভালবাসা বৃদ্ধি পায়।
রাসূল সা. বলেছেন: “তোমরা একে অপরকে উপহার প্রদান কর তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে।” (মুয়াত্তা মালিক:১৪১৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিদআত ও অপসংস্কৃতি বর্জন করে ইসলামিক পদ্ধতিতে জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment