পেশাব-পায়খানার আদব (آداب الخلاء) :
+++++++++++++++++++++++++
(১) টয়লেটে প্রবেশকালে বলবে, اَللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুব্ছে ওয়াল খাবা-ইছ (হে আল্লাহ! আমি পুরুষ ও মহিলা জিন (-এর অনিষ্টকারিতা) হ’তে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। অন্য বর্ণনায় শুরুতে بِسْمِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হ’ বলার কথা এসেছে।[87] অতঃপর বের হওয়ার সময় বলবে غُفْرَانَكَ ‘গুফরা-নাকা’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করছি’)।[88] অর্থাৎ আপনার হুকুমে পেশাব-পায়খানা হয়ে যাওয়ায় যে স্বস্তি ও অফুরন্ত কল্যাণ লাভ হয়েছে, তার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতে না পারায় হে আল্লাহ আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এর আরেকটি তাৎপর্য এই যে, হে আল্লাহ! আপনার দয়ায় যেভাবে আমার দেহের ময়লা বের হয়ে স্বস্তি লাভ করেছি, তেমনি আমার যাবতীয় অসৎ কর্মের পাপ হ’তে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
(২) খোলা স্থানে হ’লে দূরে গিয়ে আড়ালে পেশাব-পায়খানা করবে।[89] এ সময় ক্বিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ ফিরে পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ।[90] তবে ক্বিবলার দিকে আড়াল থাকলে বা টয়লেটের মধ্যে হ’লে জায়েয আছে। [91]
(৩) সামনে পর্দা রেখে বসে পেশাব করবে।[92] অনিবার্য কারণ ব্যতীত দাঁড়িয়ে পেশাব করা যাবে না।[93]
(৪) রাস্তায় বা কোন ছায়াদার বৃক্ষের নীচে (যেখানে মানুষ বিশ্রাম নেয়) পেশাব-পায়খানা করা যাবে না।[94] কোন গর্তে পেশাব করা যাবে না।[95] আবদ্ধ পানি, যাতে গোসল বা ওযূ করা হয়, তাতে পেশাব করা যাবে না। [96]
(৫) নরম মাটিতে পেশাব করবে। যেন পেশাবের ছিটা কাপড়ে না লাগে। পেশাব হ’তে ভালভাবে পবিত্রতা হাছিল করা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন কর। কেননা অধিকাংশ কবরের আযাব একারণেই হয়ে থাকে’।[97]
(৬) পায়খানার পর পানি দিয়ে বাম হাতে ইস্তেঞ্জা করবে।[98] অতঃপর মাটিতে (অথবা সাবান দিয়ে) ভালভাবে ঘষে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলবে।[99]
(৭) পানি পেলে কুলূখের (মাটির ঢেলা) প্রয়োজন নেই। [100] স্রেফ পানি দিয়ে ইস্তেঞ্জা করায় ক্বোবাবাসীদের প্রশংসা করে আল্লাহ সূরা তওবাহ ১০৮ আয়াতটি নাযিল করেন।[101] তবে পানি না পেলে কুলূখ নিবে। এজন্য তিনবার বা বেজোড় সংখ্যক ঢেলা ব্যবহার করবে।[102] ডান হাত দিয়ে ইস্তেতঞ্জা করা যাবে না এবং শুকনা গোবর, হাড় ও কয়লা একাজে ব্যবহার করা যাবে না। [103]
(৮) কুলূখ নিলে পুনরায় পানির প্রয়োজন নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন যে, ‘পানির বদলে কুলূখই যথেষ্ট হবে (فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ)’।[104] কুলূখ নেওয়ার পরে পানি নেওয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তার কোন ভিত্তি নেই।[105]
(৯) পেশাবে সন্দেহ দূর করার জন্য কাপড়ের উপর থেকে বাম হাতে লজ্জাস্থান বরাবর সামান্য পানি ছিটিয়ে দিবে।[106] এর বেশী কিছু করা বাড়াবাড়ি। যা বিদ‘আতের পর্যায়ভুক্ত। ভালভাবে এস্তেঞ্জার নামে ও সন্দেহ দূর করার নামে কুলূখ ধরে ৪০ কদম হাঁটা ও বিভিন্ন ভঙ্গিতে কসরৎ করা যেমন ভিত্তিহীন, তেমনি চরম বেহায়াপনার শামিল। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
(১০) পেশাব রত অবস্থায় কেউ সালাম দিলে পবিত্রতা অর্জনের পর তার জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব (যদি সালাম দাতা মওজুদ থাকে)। [107] নইলে হাজত সেরে এসে ওযূ বা তায়াম্মুম ছাড়াও জওয়াব দেওয়া যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন।[108]
(১১) হাজত রত অবস্থায় (যরূরী প্রয়োজন ব্যতীত) কথা বলা যাবে না। [109]
---------------------------------
[87] . ইবনু মাজাহ হা/২৯৭; মিশকাত হা/৩৫৮। উল্লেখ্য যে, টয়লেট থেকে বের হবার সময় আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আযহাবা ‘আন্নিল আযা ওয়া ‘আ-ফা-নী বলার হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৭৪)। [88] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৭; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৫৯ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ-২। [89] . তিরমিযী হা/১৪, ২০। [90] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৪। [91] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৫, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৩। [92] . আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৭১। [93] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৪। [94] . আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৫৫। [95] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৫৪। [96] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৫৩। [97] . দারাকুৎনী হা/৪৫৩, হাকেম পৃঃ ১/১৮৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০২; ইরওয়া হা/২৮০। [98] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৪৮। [99] . আবুদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/৩৬০। [100] . তিরমিযী হা/১৯; মির‘আত ২/৭২। [101]. আবুদাঊদ হা/৪৪; আলবানী, ইরওয়া হা/৪৫, পৃঃ ১/৮৩-৮৪। [102] . মুসলিম, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৬, ৩৪১। টয়লেট পেপার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা ভাল। কেননা ইউরোপে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে (ডাঃ তারেক মাহমূদ, ‘সুন্নাতে রাসূল (সঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান’ (উর্দু থেকে অনুবাদ, ঢাকা : ১৪২০ হিঃ) ১/১৬৪। [103] . মুসলিম, মিশকাত হা/৩৩৬; ইবনু মাজাহ, আবুদাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/৩৪৭, ৩৭৫। [104] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৩৪৯; মির‘আত ২/৫৮ পৃঃ। [105] . আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৪২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য। [106] . আবুদাঊদ হা/৩২-৩৩; আবুদাঊদ, নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৩৪৮, ৬১, ৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ-২; আবুদাঊদ হা/১৬৬-৬৮। [107] . আবুদাঊদ হা/১৬-১৭; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৭ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬। [108] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬; মির‘আত ২/১৬১, ১৬৩। [109] . আবুদাঊদ হা/১৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৫৫; ছহীহাহ হা/৩১২০।
No comments:
Post a Comment