Wednesday, November 1, 2017

সকল ধর্ম কী সত্য ?





বেশ কয়েকবছর আগের কথা। হিন্দুধর্মশিক্ষা বিষয়ে স্কুলপাঠ্য একটা বই নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। সম্ভবত চতুর্থ শ্রেণীর বই ছিল সেটা। তাতে একটা পরিচ্ছেদ দেখলাম নাম দেওয়া হয়েছে “সকল ধর্ম সত্য।”
কৌতূহলবশত পড়ে দেখলাম কী লেখা। দেখলাম লিখেছে-
সৃষ্টিকর্তাকে হিন্দুরা ঈশ্বর বলে, মুসলমানরা আল্লাহ্ বলে, খৃস্টানরা God বলে, আসলে তিনি একজনই। কাজেই সব ধর্মই একজনের উপাসনাই করে, শুধু ভিন্ন ভিন্ন পথে।
সুতরাং আসলে সব ধর্মই ঠিক, কোনটাকেই ভুল বলা উচিত না।
.
আমি বহু অমুসলিমের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা প্রায় সবাই এমন ধারণাই পোষণ করে। সেটা এরকম যে, সৃষ্টিকর্তা আসলে একজনই, তাঁকে একেকজন একেক নামে ডাকে। একেকজন একেকভাবে উপাসনা করে। কিন্তু সবার লক্ষ্য একটাই। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ। কাজেই সবগুলোই ঠিক, কারণ পথ ভিন্ন হলেও লক্ষ্য তো একটাই।
যেমন আমি ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাব। অনেকগুলো রাস্তা আছে যাওয়ার। কিন্তু সব রাস্তাই কুমিল্লা গিয়ে মিলেছে। কাজেই আমি যে পথই নেই না কেন লক্ষ্যে ঠিকই পৌঁছব।
.
একই রকম ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে আমি যেভাবেই উপাসনা করি না কেন তাঁকে আমি পাব, যদি আমার উদ্দেশ্য সৎ থাকে।
একজন মানুষ যদি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করে, তার কাছে হয়তো কথাগুলো যুক্তিযুক্ত মনে হবে। তাই এমনকি অনেক মুসলিমও শুনেছি এ কথা বলে যে অমুসলিমরাও জান্নাতে যেতে পারে, যদি সে পাপ না করে। কারণ সেও তো সৃষ্টিকর্তারই উপাসনা করছে, শুধু পথটা ভিন্ন।
.
উদাহরণস্বরূপ, মাদার তেরেসা বা নেলসন ম্যান্ডেলার মত ভালো মানুষেরা, যারা আজীবন মানবসেবা করে গেলেন, কেবল অমুসলিম হবার কারণেই কি তারা জাহান্নামে যাবেন?
.
এটা কি অবিচার নয়?
লালন-বাউল আর কী কী যেন মারফতি গান-কবিতা আছে সেখানেও সব ধর্মের Unity এর কথা বলা হয়। ধর্মে-ধর্মে হানাহানির মূলে নাকি এটাকে মানতে না পারার মানসিকতা। মানুষ যখন নিজের ধর্মকেই কেবল সঠিক মানে, তখনই অনর্থ সৃষ্টি হয়।
.
আজ আমার এক অমুসলিম বন্ধু বলল, মানুষ যেকোন ধর্মই পালন করুক, সে যদি সেটা ঠিকভাবে পালন করতে পারে, তাহলে কখনো পথ হারাবে না। কথা তো সত্যই, তাই নয় কী? সব ধর্মই তো ভালো কথা বলে। কাজেই কেউ যদি “ধার্মিক” হয়, যেকোন ধর্মেরই হোক, সে অবশ্যই ভালো মানুষ। তার দ্বারা খারাপ কাজ হবেনা, পাপ হবে না।
অন্যায়কাজকে কোন ধর্মই উৎসাহিত করেনা। সুতরাং সবাই নিজ নিজ ধর্ম ঠিকভাবে মেনে চললেই পৃথিবীটা
সুন্দর ও প্রাণবন্ত হত। হানাহানি, মারামারি থাকত না।
.
এতক্ষণ আমি যা আলোচনা করলাম তা হল অমুসলিমদের একটা বড় অংশের ধারণা এবং যুক্তি। সেটা হল স্রষ্টাকে পাবার হাজারটা পথ আছে, সে কারণেই ধর্মের এ বৈচিত্র্য। সবগুলো পথই ঠিক, কোনটাকেই ভ্রান্ত বলা উচিত নয়।
.
এখন আমরা দেখব ইসলাম এ ব্যাপারে কী বলে। সূরা আল-
ইমরানের ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেনঃ

যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ।
তার মানে এত যুক্তি, এত মানবতত্ত্ব, এত সম্প্রীতির বাণী ইসলাম এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছে। আর বলছে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গ্রহণ করা হবে না, কস্মিনকালেও না।
.
ইসলাম কেন এত সাম্প্রদায়িক হচ্ছে? অন্যান্য ধর্মকে এককথায় ‘বাতিল’ কেন বলছে? আসুন কারণ অনুসন্ধান করি।
.
সব ধর্মের Unification মতাদর্শের অনুসারীরা সাধারণত যে মতগুলো পোষণ করে সেগুলো এমনঃ
.
ক) যেহেতু ঈশ্বর একজনই কাজেই যে যেভাবে পারে তাঁর উপাসনা করলেই তাঁকে পাওয়া যাবে। যেমন সৃষ্টিকে একটি বিন্দু এবং ঈশ্বরকে আরেকটি বিন্দু ধরলে বলা যায়, দুটি বিন্দুর সংযোজক অসংখ্য রেখা থাকা সম্ভব।
সে প্রতিটি রেখাই একেকটি ধর্ম, যার সবগুলো ঈশ্বরের নৈকট্য লাভে সহায়ক।
.
খ) বিশ্বজগতের সবকিছু ঈশ্বরেরই সৃষ্টি। তিনিই বিভিন্ন ধর্ম সৃষ্টি করেছেন, বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্য। যেহেতু সব ধর্ম
তাঁরই সৃষ্টি, কাজেই কোনটাকেই অবজ্ঞা করা সমীচীন নয়।
.
গ) যেহেতু প্রতিটি ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে, ন্যায়ের কথা বলে, তাই যেকোন ধর্মের মানুষ নিজের ধর্ম পুরোপুরি পালন করলে সে সার্থক মানুষ, তার প্রতিদান জান্নাত।
.
আসুন ইসলামের আলোকে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করি।
প্রথমত, সৃষ্টিকে একটি বিন্দু এবং ঈশ্বরকে আরেকটি বিন্দু ধরলে বলা যায়, দুটি বিন্দুর সংযোজক অসংখ্য রেখা থাকা সম্ভব।
হ্যাঁ। কথা সত্য। অসংখ্য রেখা থাকা সম্ভব। কিন্তু এটা সত্য যে, দুইটি বিন্দুর মধ্যে যে অসংখ্য রেখা থাকা সম্ভব
তন্মধ্যে একটি বাদে সবই বক্ররেখা (Curve). কেননা জ্যামিতি সম্পর্কে যার সামান্য ধারণা আছে তিনি জানেন দুইটি বিন্দুর মধ্যে একটি এবং কেবল একটি সরলরেখা (Straight line) থাকা সম্ভব। বাকি সব কার্ভ।
এই সরল পথটাই হল সীরাতুল মুস্তাক্বীম, যাকে আমরা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ (Complete surrender to Allah)
বলি, এটাই হল ইসলাম। আর সীরাতুল মুস্তাক্বিমই হল Straight Line এর আরবী।
.
আমরা প্রতিদিন নামাজে সূরা ফাতিহায় এই কথাটিই বলি-“আমাদের সীরাতুল মুস্তাক্বীম প্রদর্শন করুন, তাঁদের পথ যারা তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়েছে; তাদের পথ নয় যারা পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্ত।”
সুতরাং বোঝা গেল যারা আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্ত,
তাঁদের পথটিই হল সীরাতুল মুস্তাক্বীম। আর সেটি Straight Line, কাজেই একটিই পথ। আদম (আ) থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সমস্ত নবী-রাসূল এই Straight Line টিরই সন্ধান দিয়েছেন, এই একটি পথেই মানুষকে ডেকেছেন। সৃষ্টির শুরু থেকে সরল পথ ঐ একটিই, তাকে যারা গ্রহণ করেছে, তারা সফল হয়েছে, আর যারা বিচ্যুত হয়ে বক্রপথ অনুসরণ করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
.
অতএব, একাধিক পথে আল্লাহ্কে পাবার মতবাদটি ইসলাম প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা সালাতের প্রতি
রাকাতে নিজের মুখ থেকেই তা স্বীকার করি।
দ্বিতীয়ত, বলা হচ্ছে যেহেতু সব ধর্ম আল্লাহরই সৃষ্টি, কাজেই কোনটাই উপেক্ষনীয় নয়।
হ্যাঁ, এটা সত্য যে মহাবিশ্বের সবকিছু আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। তিনি ভালো এবং মন্দ উভয়কেই
সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তার মানে কি এটাই যে, তাঁর সব সৃষ্টিই তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য?
.
একটা উদাহরণ দিই। ধরা যাক একজন শিক্ষক তাঁর ৬০ জন ছাত্রের পরীক্ষা নেবেন। সেজন্য প্রশ্নপত্র তৈরি করলেন। প্রশ্নপত্র বানালেন স্ট্যান্ডার্ড, মানে একেবারে সোজাও না আবার খুব বেশি কঠিনও না।
শিক্ষক জানেন তিনি এই প্রশ্নে পরীক্ষা নিলে অন্তত ৫ জন ছাত্র ফেল করবে। অথচ শিক্ষক তো চান না তাঁর কোন
ছাত্র ফেল করুক। তিনি ইচ্ছা করলে একেবারে সোজা প্রশ্ন করতে পারেন, যাতে সবাই পাশ করে। কিন্তু তা ই কি তিনি করবেন? তাহলে পরীক্ষা হবে কীভাবে?
ঠিক তেমনিভাবে বিশ্বজগতে যা কিছু ভালো, তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্, যা কিছু খারাপ তার সৃষ্টিকর্তাও আল্লাহ্; কিন্তু তিনি বান্দাদের কাছে খারাপটা কামনা করেন না, যেরূপ শিক্ষক চান না কেউ ফেল করুক। তা সত্ত্বেও শিক্ষক যেমন একেবারে সহজ প্রশ্ন বানান না,
তেমনি আল্লাহ্ও ভালোর পাশাপাশি মন্দও রেখেছেন,
যা দ্বারা মানুষের পরীক্ষা হয়ে থাকে।
.
একইভাবে আল্লাহ্ সব ধর্মই সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু অবশ্যই সব ধর্মই তাঁর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কেবল ইসলামই থাকত, অন্যধর্মের অস্তিত্ব না থাকত, তাহলে মানুষের পরীক্ষা হত কীভাবে? আল্লাহ্ জানেন তাঁর সব বান্দা পরীক্ষায় পাশ করবে না, কেউ সত্য দ্বীন গ্রহণ করবে, কেউ ভ্রান্ত পথে অটল থাকবে; তবু তিনি অন্যধর্মের অস্তিত্ব রেখেছেন, যাতে মানুষ পরীক্ষিত হয়। কাজেই
“সব ধর্ম আল্লাহ্ বানিয়েছেন, অতএব সবধর্মই আল্লাহর পছন্দ” বলা যুক্তিসঙ্গত নয়, যেভাবে “শিক্ষক প্রশ্ন কঠিন
করেছেন ছাত্রদের ফেল করাতে, অতএব ফেল করাটা
শিক্ষকের পছন্দ” বলা অযৌক্তিক।
.
প্রিয় পাঠক, আমার শরীরটা বেশী ভাল নেই তারপরও আলহামদুলিল্লাহ। এবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপারে আলোকপাত করতে যাচ্ছি, যা নিয়ে অমুসলিম তো বটেই, মুসলিমদের একটি বড় অংশও বিভ্রান্তির মধ্যে আছে।
তা হল তাদের তৃতীয় যুক্তি, যেহেতু কোনধর্মই অন্যায়কাজে উৎসাহিত করেনা, সুতরাং যেকোনধর্মের ‘ধার্মিক’ ব্যক্তিই ভালো লোক, তার জান্নাতে যাওয়া উচিত।
অথচ ইসলাম বলছে ইসলাম ব্যতীত অন্যধর্মকে গ্রহণকারী
ব্যক্তি আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ জাহান্নামে যাবে।
.
কেন এই কঠোরতা?
এটা বুঝতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে। আমরা কেন এ পৃথিবীতে?
আল্লাহ কেন আমাদের পাঠিয়েছেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য?
সূরা যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ এর উত্তর দিয়েছেনঃ
.
“আমি জ্বিন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদাত ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।”
আরবী ভাষার একটি সাধারণ নিয়ম হল, কোন ব্যাপারে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে Negetivity দিয়ে বাক্য শুরু হয়।
.
যেমন এই আয়াতটির প্রথম অংশ َّ “আমি জ্বিন ও মানবজাতিকে (কোন উদ্দেশ্যে) সৃষ্টি করিনি” দিয়ে মানব ও জ্বিন জাতির সৃষ্টির সব রকম উদ্দেশ্যকে বাতিল করা হল। এরপর আল্লাহ্ বললেন -
.
“কেবল আমার ইবাদাত করা ব্যতীত”। অর্থাৎ প্রথম অংশ দিয়ে অস্তিত্বের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সব প্রচলিত ধ্যানধারনা, মতবাদ বাতিল করা হল, আর দ্বিতীয় অংশে কেবল এবং কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের কথা বলা হল। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে আল্লাহর ইবাদাত ব্যতীত সবরকম কাজ মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্যের বহির্ভূত।
.
এটাই ইসলামের মূল কনসেপ্ট। আল্লাহ্ কখনোই বলেন নি মানুষকে “ভালো কাজ” করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, বলেছেন “ইবাদাত” করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং “ভালো কাজ” এবং “ইবাদাত” ব্যাপার দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা এখন সে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করব।
.
একটি কাজ লিটারেলি “ভালো” হতে পারে, কিন্তু ইবাদাত হল তা ই যা আল্লাহ্ আদেশ করেছেন।
সেটা যদি প্রচলিত রীতিনীতি বা আদর্শের বিরুদ্ধে যায় তবুও।
.
উদাহরণস্বরূপ, কুরবানির ঈদে গরু জবাই করা কুরবানি বিরোধীদের দৃষ্টিতে “গো হত্যা” বা “প্রাণী হত্যা” তথা নিন্দনীয় কাজ। এখন আপনি যদি “পশুর প্রতি দয়া” দেখিয়ে তাকে জবাই থেকে বিরত থাকেন, সেটা হবে তাদের দৃষ্টিতে “ভালো কাজ”, কিন্তু যদি গরু “হত্যা” করেন, তবে সেটা হবে ইবাদাত, কেননা আল্লাহর আদেশ ছিল সেটাই।
.
একইভাবে বলা যায়, জিহাদের ময়দানে শত্রুকে হত্যা করা অনেক বড় একটি ইবাদাত। অথচ আপাত দৃষ্টিতে এটি
একটি খারাপ কাজ, হানাহানি, রক্তপাত। কিন্তু এই রক্তপাতের মাধ্যমেই আল্লাহর উপাসনা হবে, কারণ আল্লাহর নির্দেশ ছিল এটাই। এই “নৃশংসতা” যদি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়, তবু এটি মেনে নিতে হবে, কারণ আল্লাহ্ নিজেই বলেছেন কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ-সেটা বিচার করার ক্ষমতা মানুষের নেই। সূরা বাক্বারাহ ২১৬ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেনঃ
.
“তোমাদের ওপর যুদ্ধকে ফরয করা হল, যদিও তোমরা একে অপছন্দ কর। হয়তো বা কোন একটি বিষয় তোমাদের জন্য
কল্যাণকর, কিন্তু তোমরা তা অপছন্দ কর। আবার কোন একটি বিষয় তোমাদের জন্য অকল্যাণকর, কিন্তু তোমরা
তা পছন্দ কর। বস্তুত তোমরা জান না, আল্লাহ জানেন।”
.
কাজেই আমাদের দৃষ্টিতে কোনটি “ভালো কাজ”, সেই বিচার দিয়ে পার পাওয়া যাবে না, বরং দেখতে হবে আল্লাহ্ কোনটিকে উত্তম বলেছেন।
যেকোন কাজ “ইবাদাত” হতে হলে মোটামুটি তিনটি শর্ত
পূরণ করতে হবেঃ
.
প্রথমত, কাজটি আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় হতে হবে।
নিজের প্রবৃত্তি যেটা ভালো বলবে সেটা নয় বরং আল্লাহ্ যেটাকে ভালো বলেছেন সেটাই করতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত, কাজটি হতে হবে রাসূল (ছাঃ) এর দেখানো পথে। যেমন নামাজ অনেক বড় ইবাদাত, কিন্তু কেউ যদি
“বেশি নামাজ পড়া ভালো” ভেবে ফজরের ২ রাকাত ফরয নামাজের জায়গায় চার রাকাত পড়ে, তবে সেটা ইবাদাত
হবে না কারণ রাসূল (ছাঃ) শিখিয়েছেন ২ রাকাত পড়ার জন্য।
.
তৃতীয়ত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি, তা হল কাজটি হতে হবে কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। কোন পার্থিব স্বার্থ বা উদ্দেশ্য থাকলে তা “ইবাদাত” বলে গণ্য হবে না এবং আখিরাতে তার কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে না।
কিয়ামতের ময়দানে প্রথম তিনজন ব্যক্তি যারা জাহান্নামী হবে তার একজন ‘আলিম একজন জিহাদে শহীদ এবং আরেকজন অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি। এই তিনজনের মর্যাদা হওয়ার কথা অনেক অনেক বেশি, উলটো তারা কি না জাহান্নামী!! কেন?
.
এটা এজন্য যে, ‘আলিম জ্ঞান অর্জন করেছিল যাতে লোকে তাকে জ্ঞানী বলে, শহীদ যুদ্ধ করেছিল যাতে লোকে তাকে “বীর” বলে, আর দানশীল ব্যক্তি দান করত যাতে লোকে তাকে দাতা বলে। অর্থাৎ কেউই আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করতে কাজ করেনি, ফলে তাদের
কাজ ইবাদাত হয়নি। অর্থাৎ আল্লাহ্ যে উদ্দেশ্যে তাদের সৃষ্টি করেছিলেন তা তারা পূরণ করেনি। তাই এত মর্যাদাপূর্ণ কাজের পরও তারা জাহান্নামী।
.
সুতরাং মানুষ যতই “ভালো কাজ” করুক, যদি তা “ইবাদাত” না হয়, তবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আল্লাহ্ বলেছেনই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ইবাদাতের জন্য, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। যেখানে মুসলিম হবার পরেও “ইবাদাত” না হওয়ায় অমন তিনজন ব্যক্তি জাহান্নামে গেলেন, সেখানে কীভাবে আশা করা যায় যে ইসলাম গ্রহণ না করেই কেউ জান্নাত পাবে?
.
অমুসলিমদের “ভালো কাজ” এর পরেও জাহান্নামে যাবার কারণ মূলত এটাই।
তবে হ্যাঁ, আল্লাহ্ ন্যায়বিচারক। তাই অমুসলিমদের “ভালো কাজ” এর জন্য আখিরাতে তারা উপকৃত না হলেও এর ফল তিনি তাদের দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। মাদার তেরেসা বা নেলসন ম্যান্ডেলা দুনিয়া জোড়া খ্যাতি পেয়েছেন, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন, নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা আল্লাহ্কে একমাত্র ইলাহ মানেন নি, কাজেই তাদের কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছিল না, এটা বলাই বাহুল্য। ফলে তা “ইবাদাত” হয়নি, আর সেজন্যই ঈমান নিয়ে না মরে থাকলে এত মানব সেবার পরও তারা জাহান্নামী হবেন।
.
কাজেই মুক্তির পথ একটিই। আল্লাহ্ কাছে পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ। অন্য সকল পথ, সকল মত ভ্রান্ত, যারা তা অনুসরণ করবে তারা ক্ষতিগ্রস্থ, উভয় জীবনে। আল্লাহ্ ভাল জানেন।

No comments:

Post a Comment