Thursday, April 19, 2018

ফরয সালাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু’আ করা সম্বদ্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ট আলেমদের অভিমতঃ



Image may contain: text


ফরয সালাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে
দু’আ করা সম্বদ্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ট আলেমদের
অভিমতঃ
(১) আহমাদ ইবনু তাইমিয়াহ (রাঃ) কে ফরয
সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে
দু’আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হলে
তিনি বলেন , “সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি
সম্মিলিতভাবে দু’আ করা বিদ’আত ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এরুপ দু’আ ছিল না ।
বরং তার দু’আ ছিল সালাতের মধ্যে । কারণ
সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের
সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার
সময় দু’আ করা যথাযথ” । ( মাজমুআ ফাতাওয়া ,
২২/ ৫১৯পৃঃ)
(২) শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহঃ) বলেন ,
“পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর
দলবদ্ধভাবে দু’আ করা স্পষ্ট বিদ’আত । কারণ
এরুপ দু’আ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এবং তাঁর
সাহাবীদের যুগে ছিল না । যে ব্যক্তি ফরয
সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর
দলবদ্ধভাবে দু’আ করে সে যেন আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামা’আতের বিরোধীতা করে
।” (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৪৪পৃঃ)
তিনি আরো বলেন , “ইমাম-মুক্তাদি
সম্মিলিতভাবে দু’আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ
সাঃ থেকে , কথা , কর্ম ও অনুমোদন ( কাওলী ,
ফে’লী , তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে
আমরা অবগত নই । আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সম্স্ত
কল্যাণ । সালাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদির
দু’আ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ সুস্পষ্ট
আছে , যা তিনি সালামের পর পালন করতেন ।
চার খলীফা সহ সাহাবীগণ এবং তাবেঈ গণ
যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন ।
অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধীতা
করবে , তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে । রাসূল
(সাঃ) বলেন , “যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ
ব্যতীত কোন আমল করবে , তা পরিত্যাজ্য ।”
কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু’আ করবেন এবং
মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন
তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল
চাওয়া হবে । অন্যথায় (তারা দলীল দেখাতে
ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য ।” (হাইয়াতু
কেবারিল ওলামা ১/২৫৭)
(৩) বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস আল্লামা
শায়খ নাসিরউদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন ,
“দু’আয়ে কুনুতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা
বিদ’আত । সালাতের পরেও ঠিক নয় । এ
সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে , এর সবগুলিই যঈফ ।
এজন্য ইমাম আযউদ্দীন বলেন , সালাতের পর
হাত তুলে দু’আ করা মুর্খদের কাজ । (সিফাতু
সালাতিন নাবী (সাঃ) পৃঃ ১৪১)
(৪) শায়খ উছায়মিন (রহঃ) বলেন , সালাতের পর
দলবদ্ধভাবে দু’আ করা বিদ’আত । যার প্রমাণ
রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ থেকে নেই ।
মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ
ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে । (ফাতাওয়া
উছায়মিন , পৃঃ ১২০)
(৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ)
বলেন , ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা
ব্যতীত অনেক দু’আই রয়েছে । (রফূস সামী , পৃঃ
৯৫)
(৬) আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী (রহঃ)
বলেন , বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে ,
ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ
করেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন , আ-মীন বলেন ,
এ প্রথা রাসূল (সাঃ) এর যুগে ছিল না । ফৎওয়া
আব্দুল হাই , ১ম খন্ড , পৃঃ ১০০)
(৭) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন , অনেক
স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে ফরয
সালাতের সালাম ফিরানোর পর
সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয়
যা রাসূল সাঃ হতে প্রমাণিত নয় । (মা’আরেফুস
সুনান , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৪০৭)
(৮) আল্লামা আবুল কাশেম নানুতুবী (রহঃ)
বলেন , ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর
ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা
নিকৃষ্ট বিদ’আত । (এমদুদ্দীন , পৃঃ ৩৯৭)
(৯) আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন ,
ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদী গণের
দিকে ফিরে মুক্তাদী গণকে নিয়ে মুনাজাত
করা কখনও রাসূল (সাঃ) এর তরীকা নয় । এ
সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস
নেই । ( ইবনুল কাইয়্যেম , যাদুল মা’আদ , ১ম খন্ড
,পৃঃ নং ১৪৯ ‘ফরয সালাতের পর দু’আ করা
সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ )
(১০) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী
(রহঃ) বলেন , ফরয সালাতের সালাম
ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে
মুনাজাত করেন , তা কখনও রাসূল (সাঃ)
করেননি । এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও
পাওয়া যায় না ।(ছিফরুস সা’আদাত , পৃঃ২০)
(১১) আল্লামা শাত্বেবী (রহঃ) বলেন , শেষ
কথা হল এই যে , ফরয সালাতের পর
সম্মিলিতভাবে রাসূল (সাঃ) নিজেও মুনাজাত
করেননি , করার আদেশও দেননি । এমনকি তিনি
এটা সমর্থন করেছেন , এ ধরনের কোন প্রমাণ
পাওয়া যায় না । (আল-ইতেসাম ,১ম খন্ড , পৃঃ
৩৫২)
(১২) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন ,
নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে , রাসূল
(সাঃ) ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর
হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-
মীন , আ-মীন বলেছেন , এরুপ কখনও দেখা যায়
না । চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ
পাওয়া যায় না । তাই এ ধরনের কাজ , যা
রাসূল (সাঃ) করেননি , তাঁর সাহাবীগণ
করেননি , নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং
করা বিদ’আত । (মাদখাল , ২য় খন্ড , পৃঃ ২৮৩)
(১৩) মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)
বলেন , ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু’আ
করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন ,
এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গারবহিনী
বলেন , এ দু’আকে সুন্নাত অথবা মুস্তহাব মনে
করা না জায়েজ । (ইস্তিবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ৮)
(১৪) মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রাহঃ) বলেন ,
বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস
হয়ে গেছে যে , কিছু আবরী দু্’আ মুখস্থ করে
নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে ) ঐ
মুখস্থ দু’আগুলি পড়েন । কিন্তু যাচাই করে
দেখলে দেখা যাবে যে , এ দু’আগুলোর সারমর্ম
তাদের অনেকেই বলতে পারে না । আর ইমামগণ
বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে , অনেক
মুক্তাদী এ সম্স্ত দু’আর অর্থ মোটেই বুঝে না ।
কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন , আ-মীন
বলতে থাকে । এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে
কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র । প্রার্থনার যে রুপ
বা প্রকৃতি , তা এতে পাওয়া যায় না ।
(মা’আরেফুল কুরআন , ৩য় খন্ড , পৃঃ ৫৭৭) তিনি
আরো বলেন , রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে
কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হ’তে এবং
শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও
সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ
পাওয়া যায় না । সারকথা হ’ল , এ প্রথা পবিত্র
কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পথ নয়।তা
বিদাত।

No comments:

Post a Comment