Wednesday, September 26, 2018

আহলেহাদীছ বা সালাফি মুসলিমদের বৈশিষ্ট্যগত নাম ।



No automatic alt text available.


শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহ:) বলেন,
(الذين يَعيبون أهل الحديث ويعدلون عن مذهبهم؛جهلة،زنادقة، منافقون بلا ريب).
[الانتصارلأهل الأثر١٤٣]
""যারা আহলেহাদীছদের গালি দেয় এবং তাদের পথ হতে বিমুখ হয়, নি:সন্দেহে তারা মূর্খ, যিনদীক্ব, মুনাফিক্ব"।
(আল-ইনতেছার লিআহলিল আছার ১৪৩ পৃ:)।
👆👆👇👇
নিজেকে মুসলিমের পাশাপাশি আহলেহাদীছ/ সালাফি পরিচয় দেওয়া যাবে কি ?
মুসলিম এর পাশাপাশি আহলেহাদীছ বা সালাফি পরিচয় দেওয়াতে প্রকৃতপক্ষে শরীয়ঈ কোন বাধা নেই । কারণ এইগুলো মুসলিমদের বৈশিষ্ট্যগত নাম । যেমন ভাবে একটি মানুষ একাধারে ছাত্র, শিক্ষক, আলেম, আনসার এইধরনের নাম ধারণ করে, ঠিক তেমনি আহলেহাদীছ বা সালাফি এমনই একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম মুসলিমদের মধ্যে । মুসলিম হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া নাম , যাকে ইংরেজীতে আমরা Noun বলি । আর আহলেহাদীছ , আহলুল হাদীছ বা সালাফি এইগুলা একজন মুসলিমদের বৈশষ্ট্য । যাকে আমরা Adjective বা গুণ/বৈশিষ্ট্য বলে জানি ।
আহলেহাদীছ এর অর্থ হাদীছের অনুসারী কিন্তু ব্যাপক অর্থে পরাভাষিক অর্থেঃ কুর’আন এবং হাদীছের নিরপেক্ষ অনুসারী । কারণ হাদিসের অর্থ বাণী এবং কুর’আন কে খইরাল হাদীছ বা উৎকৃষ্ট বাণী বলা হয়েছে । (রিয়াযুস স্ব-লিহীন ১ম খন্ড, হা/ নং ১৭০) ।
তাছাড়া, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ كَانَ إِذَا رَأَى الشَّبَابَ قَالَ: ” مَرْحَبًا بِوَصِيَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَانَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُوَسِّعَ لَكُمْ فِي الْمَجْلِسِ، وَأَنْ نُفَهِّمَكُمُ الْحَدِيثَ فَإِنَّكُمْ خُلُوفُنَا، وَأَهْلُ الْحَدِيثِ بَعْدَنَا “. ( رواه البيهقي في شعب الإيمان : باب رقم 11 و 18 نشر العلم في جزء 2 و 3 صفحة رقم 249 و 275 )
প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কোন মুসলিম যুবককে দেখলে খুশি হয়ে বলতেন, “রাসূল (সাঃ) এর অসিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাকে মারহাবা জানাচ্ছি ।রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে মজলিস প্রশস্ত করার ও তোমাদেরকে হাদীছ বুঝাবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন । কারণ কেননা তোমরাই আমাদের পরবর্তি বংশধর ও পরবর্তি আহলুল হাদীছ”। (আলবানী সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২৮০, আবু বকর আল খতীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, (লাহোর রিপন প্রেসঃ তারিখ বিহীন) পৃঃ ১২,
হাকেম সহীহ বলেছেন )।১
খ্যাতনামা তাবেঈ ইমাম শা‘বী (২২-১০৪ হিঃ) সাহাবায়ে কেরামের জামা‘আতকে ‘আহলে হাদীছ’ বলতেন । যেমন একদা তিনি বলেন, ‘এখন যেসব ঘটছে তা আগে জানলে আমি কোন হাদিস বর্ণনা করতাম না, কেবল ঐ হাদিস ব্যতীত, যার উপরে ‘আহলুল হাদীছ’ অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়েছেন’ ।(শামসুদ্দিন যাহাবী, তাযকেরাতুল হুফফায (বৈরুতঃ দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/৮৩ পৃঃ)।২
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, ‘সর্বোত্তম হল আমার প্রজন্মের মানুষ । তারপরে এর পরে যারা আসবে তারা এবং এরপরে যারা আসবে তারা………” (সহীহ বুখারী অনুচ্ছেদ ৮১, হা/৬৫০৫) ।
সুতরাং ‘আহলে হাদীছ’ কথাটি সাহাবী এবং তাবেঈ থেকে প্রমাণিত হল । তাদের উপর বিশ্বাস রাখা জরুরি কারণ তারা শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের মানুষ ।
এরপরে আরো অনেক মুজতাহিদগণ ই আহলেহাদীছদের সম্পর্কে বলেছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের কথা তুলে ধরছিঃ
ইয়াযীদ ইবনে হারূণ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ফের্কায়ে নাজিয়া সম্পর্কে বলেন, “তারা যদি আহলেহাদীছ না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা’’। (তিরমিযী, মিশকাত হা/৬২৮৩-এর ব্যখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহা হা/২৭০ –এর ব্যাখ্যা; শারফ ১৫)৩
ক্বাযী আয়ায বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) একথা দ্বারা আহলে সুন্নাত এবং যারা আহলুল হাদীছ-এর মাযহাব অনুসরণ করেন, তাদেরকে বুঝিয়েছেন’।(ফৎহুল বারী ‘ইলম’ অধ্যায় ১/১৯৮ হা/৭১-এর ব্যাখ্যা ।)৪
ইমাম হাম্বল আরো বলেন, ‘আহলে হাদিসের চেয়ে উত্তম কোন দল আমার কাছে নেই । তারা হাদীছ ছাড়া অন্য কিছু চেনে না’। (আবু বকর আল-খতিব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদিস পৃঃ ২৭ ।)৫
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘যখন আমি কোন আহলে হাদীছকে দেখি তখন আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জীবন্ত দেখি’ (শারফু ২৬)৬
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেনঃ ‘যার কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে, তার এটা জানার কথা যে, আহলে হাদীছগণই হলেন, মুসলিমদের মধ্যে রাসূল (সাঃ) এর বাণীসমূহের ও তার ইলমের অধিক সন্ধানী ও সে সবের অনুসরণের অধিক প্রতি অধিক আগ্রহশীল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে সর্বাধিক অধিক দূরে অবস্থানকারী, যার বিরোধিতা সে করে থাকে ।….মুসলিমদের মধ্যে তাদের অবস্থান এত মর্যাদাপূর্ণ, যেমন সকল জাতির মধ্যে মুসলিমদের অবস্থান মর্যাদাপূর্ণ’ ।(ইবনু তাইমিয়া মিনহাজুস সুন্নাহ, ২/১৭৯ পৃঃ)৭
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আবু হানিফা, মালেক, শাফেঈ ও আহমাদের জন্মের বহু পূর্বে হতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের প্রাচীন একটি মাযহাব সুপরিচিত ছিল । সেটি হল সাহাবায়ে কেরামের মাযহাব, যারা তাদের নবীর কাছ থেকে সরাসরি ইলম হাছিল করেছিল’ । (আহমাদ ইবনু তাইমিয়া মিনহাজুস সুন্নাহ মিশরী ছাপা, ১/২৫৬ পৃঃ ।)৮
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) বলেন, “আহলেহাদীছগণ হলেন তাঁরাই, যারা মুহাম্মাদ (সাঃ) ব্যতীত নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির রায়কে প্রাধান্য দেয় না, যতই বড়ই তিনি হোক না কেন । তারা তাদের বিরোধী, যারা হাদিস ও তার প্রতি আমলের তোয়াক্কা করে না, তারা যেমন কেবল তাদের ইমামদের রায়কে প্রাধান্য দেয়- অথচ ইমামগণ এ থেকে নিষেধ করে গেছেন, তেমনি আহলেহাদীছগণ একমাত্র তাদের নবীর কথাকে প্রাধান্য দেন’।তিনি অন্যত্র বলেন, ‘এই বর্ণনা থেকে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আহলে হাদিস হবে সাক্ষী স্বরূপ’। (সিলসিলা ছহীহাহ ১/৪৮২ পৃঃ ২/২৭০ এর ব্যাখ্যা)৯
কেউ কেউ বলে থাকেন , এখানে আহলুল হাদীছ বলতে মুহাদ্দিস কে বুঝানো হয়েছে । তাদের কাছে প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে জান্নাতে কি শুধু মুহাদ্দিসরাই যাবে ? বরং আহলেহাদীছ বলতে যুগে যুগে কুর’আন এবং হাদীছের নিরপেক্ষ অনুসারীদের ই বুঝানো হয়েছে ।
আর সালাফি শব্দের অর্থ হল পূর্বসূরীদের অনুসরণ । পরিভাষিক অর্থঃ কুর’আন এবং হাদীছের অনুসরণে সালাফ অর্থাৎ নবী (সাঃ) ও তার সাহাবি (রাঃ)গণদের ব্যাখ্যা অনুসরণ করা , তারা যেভাবে কুর’আন এবং হাদীছ বুঝেছেন আমাদেরও সেইভাবে বুঝা , সেইভাবে আমল করার নাম ।
সহীহ বুখারীতেও এসেছে ‘সালাফ’ শব্দটি । ইমাম বুখারী (রহঃ)সহীহ বুখারীতে, ‘আত্বইমাহ/খাদ্য’ অনুচ্ছেদ ২৭ নং এর শিরোনাম এই বলে নির্ণয় করেন যে, ‘‘সালাফগণ তাদের বাড়ি বা সফরে যা জমা রাখতেন খাদ্য, গোশত এবং অন্য কিছু …’’। অতঃপর তিনি কুর’বানীর গোশত জমা রাখার হাদীছ বর্ণনা করেন । (বুখারী হা/৫৪৬৩)। এখানে, ইমাম বুখারী (রহঃ) সালাফ বলতে সাহাবীদের বুঝাতে চেয়েছেন ।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন,
“যে ব্যাক্তি সালাফের মাযহাব প্রকাশ করে এবং তার দিকে সম্বন্ধ জুড়ে (সালাফী পরিচয় দেয়) তার জন্য তা দোষবহ তো নয়ই বরং তার তরফ থেকে তার এ কথা গ্রহন করে নেওয়া সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব।যেহেতু সালাফদের মাযহাব নিঃসন্দেহে হক”। (মাজমূউল ফতোয়া ৪/১৪৯)
এই আহলেহাদীছ বা সালাফি পরিচয় দেওয়া সম্পর্কে আব্দুল আজিজ বিন বায (রহঃ) বলেনঃ
ফাতাওয়া শাইখ বিন বায রাহেমাহুল্লাহ:
‘সালাফী’, ‘আহলেহাদীছ’ ইত্যাদি নাম ধারণ সম্পর্কে মাননীয় শাইখ বিন বায (রহ.) এর বক্তব্যঃ
———————————
আল হামদুলিল্লাহ- আমাদের এই যুগে অনেক ‘জামাআত’ আছে যারা মানুষকে হকের প্রতি আহবান জানিয়ে থাকে। যেমন আরব উপদ্বীপে সৌদী সরকার, অনুরূপভাবে ইয়ামান, গালফের দেশ সমূহে, মিশর ও শামে, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত উপমহাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক জামাআত, ইসলামী সেন্টার, ইসলামী সংস্থা আছে যারা মানুষকে হকের পথে আহবান করে, হকের সুসংবাদ প্রদান করে এবং বাতিল থেকে মানুষকে সতর্ক করে।
অতএব সত্য অনুসন্ধানকারী মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে, সে যেখানেই থাকুক এই ‘জামাআত’গুলো খুঁজে বের করবে। যখন সে এমন জামাআত বা ইসলামী সেন্টার বা জমঈয়ত ইত্যাদি পাবে, যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সা.এর সুন্নাতের প্রতি দাওয়াত দেয়, তখন তাদের অনুসরণ করবে এবং তাদের সাথেই থাকবে।
যেমন: সুদান ও মিশরে আছে ‘আনসারুস সুন্নাহ’। ভারত উপমহাদেশে আছে ‘আহলে হাদীছ’। এছাড়া আরো অন্য দেশে বিভিন্ন ‘জামাআত’ আছে যারা মানুষকে আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সা.এর সুন্নাতের প্রতি আহবান জানায়। দাওয়াত দেয় এক আল্লাহর ইবাদতকে তাঁর জন্যে খালেস ও নির্ভেজাল করার। কবর পুজারী ও অন্যান্য বাতিল ফিরকার মত তাঁরা আল্লাহর সাথে শিরকের দিকে মানুষকে আহবান করে না। (মাজমূ ফাতাওয়া- শাইখ বিন বায ৮/১৮১)
—————————-
সম্মানিত শাইখ আরো বলেছেন,
এই সমস্ত জামাআতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল: দেখতে হবে তাদের আকীদা ও আমল। যদি সত্যের উপর মুস্তাকীম থাকে, তাওহীদ ও ইখলাসের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, কথা-কাজ ও আমলের দিক থেকে রাসূল সা.এর প্রকৃত অনুসারী হয়, তবে এই্ নামগুলোতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তাঁরা যেন আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং সে ব্যাপারে সত্যবাদী হয়।
তাদের মধ্যে কেউ যদি নিজেদের জামাতের পরিচয়ের জন্য নাম রাখে ‘আনসারুস সুন্নাহ’ বা কেউ নাম রাখে ‘সালাফী’ বা কেউ নাম রাখে ‘আহলে হাদীছ’ অথবা কেউ নাম রাখে ‘উমুক জামাআত’.. এগুলোতে কোন সমস্যা নেই যদি তারা সত্যের পথে চলে। হকের উপর মুস্তাকীম থাকে থাকে। আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের অনুসরণ করে এবং এ দুটি থেকেই যাবতীয় ফায়সালা গ্রহণ করে। আর এ দুটির ভিত্তিতে আকীদা, কথা ও আমলে মুস্তাকীম থাকে।
এই জামাআতগুলোর মধ্যে কেউ যদি কোন বিষয়ে ভুল করে, তবে আহলে ইলমের তথা উলামাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে তাদেরকে সতর্ক করা এবং দলীল ভিত্তিক তাদেরকে হকের নির্দেশনা দেয়া।
মূল কথা হচ্ছে, আমরা অবশ্যই পূণ্য ও তাকওয়ার ভিত্তিতে পরস্পরকে সহযোগিতা করব। আমাদর পরস্পরের সমস্যাগুলো ইলম, হিকমত ও উত্তম পন্থায় সমাধান করব। এই জামাআতগুলোর মধ্যে কোথাও যদি আকীদা সংক্রান্ত, ফরয বা হারাম সংক্রান্ত বিষয়ে কোন ভুল পরিলক্ষিত হয়, তবে শরীয়তের দলীল উল্লেখ করে নম্র ভাষায়, হিকমতের সাথে ও উত্তম পন্থায় তাদেরকে সতর্ক করব। যাতে করে তাঁরে হকের দিকে ফিরে আসে এবং তা কবুল করে। এমন ব্যবহার করব না যাতে তারা পালিয়ে যায়। ইসলামের অনুসারীদের উপর এটাই হচ্ছে ওয়াজিব যে, তারা পূর্ণ ও তাক্বওয়ার ভিত্তিতে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। পরস্পরকে নসীহত করবে।
পরস্পরকে অপমানিত ও অপদস্থ করবে না, যাতে শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়ে যায়। (মাজমূ ফাতাওয়া- শাইখ বিন বায ৮/১৮৩)।
কপিকৃত।

No comments:

Post a Comment