Wednesday, September 26, 2018

না জানা ইতিহাস পর্ব -১



No automatic alt text available.


না জানা ইতিহাস পর্ব -১
মুসলিম বিজ্ঞানীদের পাঁচটি আবিষ্কার, পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে যা ।
বিশ্বব্যাপি আধুনিক সভ্যতার যত আবিষ্কার আজ দৃশ্যমান, প্রায় সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্যে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান রয়েছে। কথাটাকে অনেক বিশেষজ্ঞরা এভাবেও বলেন, আধুনিক সভ্যতার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য থেকে যদি মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে এই আবিষ্কার ও আধুনিকায়ন ধসে পড়বে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেছেন, ‘অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগ সময় থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত মুসলিমরা সমগ্র বিশ্বের বুদ্ধি এবং সভ্যতার বাতিঘর ছিল’। মুসলিম বিজ্ঞানীদের অসংখ্য-অগণিত আবিষ্কারের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান। চলুন তাহলে আর দেরি না করে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অভাবনীয় কিছু আবিষ্কারের গল্প জানি, যে সব আবিষ্কার পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে বা দিতে সাহায্য করেছে।
১. কফি : সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১,৬০০,০০০,০০০ কাপ কফি বিক্রি হয়। কোটি কোটি মানুষ তাদের দৈনন্দিন রুটিনের অন্যতম অংশ হিসেবে কফি পান করে। কিন্তু কেউ কী জানে বা জানার চেষ্টা করেছেন কখন- কারা এই কফির প্রথম আবিষ্কারক? পৃথিবীর বুকে কারা প্রথম এই কফির চাষ করেছে? নবম শতকের দিকে ইয়েমেনবাসী মুসলিমরা প্রথম কফি চাষ ও উৎপাদন শুরু করে। প্রথম প্রথম আধ্যাাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন সুফিরা রাত জেগে ইবাদত করার জন্য কফি পান করতেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। এরপর একদল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এই কফি মিসরের রাজধানী কায়রোতে এসে পৌঁছায় এবং সেখানেও চাষ শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে সমগ্র আরব বিশ্বে এবং পর্যায়ক্রমে ইউরোপসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
২. বীজগণিত : সারা বিশ্বের নামী-দামী সব বিজ্ঞানীদের জাদুর কাঠি হলো গণিত। গণিতবিদ্যার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীময় গর্ব করে বেড়ান স্কলারগণ। কিন্তু তাদের কী জানা নেই- গণিতের আদি পিতা বীজগণিতের আবিষ্কারক কারা? বীজগণিতের প্রথম গ্রন্থটি রচনা করেছেন পার্সিয়ার বিখ্যাত মুসলিম গণিতবিদ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজম। এরপর সপ্তম শতকে তিনি রচনা করেন দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘আল-জাবর ওয়াল মুকাবলা’। তার রচিত এই বইটি থেকেই মূলত এই শাস্ত্রের নাম হয় অ্যালজেবরা। আল-খোয়ারিজম রচিত বীজগণিতের ওপর ভিত্তি করেই আধুনিক গণিতের যাত্রা ও পথচলা শুরু হয়।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় : সারা বিশ্বে এখন যত নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যত ডিগ্রি বা সনদ প্রদানের আয়োজন রয়েছে- এসবের মূলে রয়েছে মুসলিমদের অবদান। কারণ পৃথিবী নামের রাজ্যে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলিমদের হাতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি সনদ প্রদানের কার্যক্রম সূচিত হয়েছে মুসলিমদের মাধ্যমে। কীভাবে? আসুন জানি তাহলে সেই ইতিহাস- আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম মুসলিম দেশ মরক্কো। ৮৫৯ সালে প্রিন্সেস ফাতেমা আল ফিরহি মরক্কোর ফেজেতে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং সর্বপ্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি সনদ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরবর্তীকালে প্রিন্সেস ফাতিমার বোন মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর পুরো কমপ্লেক্সটির নাম হয় ‘কারুইয়িন বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং মসজিদটির নাম রাখা হয় ‘আল কারুইয়িন মসজিদ’। প্রায় ১২০০ বছর যাবত স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
৪. হাসপাতাল : অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও আবাসন- প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। আর চিকিৎসার কথা উঠলেই অঙ্গাঅঙ্গিভাবে চলে আসে চিকিৎসক ও হাসপাতালের নাম। হাসপাতাল নেই এমন কোনো দেশের অস্তিত্ব এখন আর কল্পনা করা সম্ভব না। কিন্তু আমরা কী জানি কারা কে এই হাসপাতালের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা? কাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম হাসপাতাল নামক প্রতিষ্ঠানের আইডিয়া সূচিত বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? না জানা অন্যায় কিছু নয়। চলুন এবার জানি- আধুনিক বিশ্বে রোগীর চিকিৎসার জন্য যে হাসপাতাল ব্যবস্থা চালু রয়েছে তার সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠাতা মুসলমানরা। নবম শতকে মিসরে প্রথম এই হাসপাতাল ব্যবস্থার সূচনা হয়। আহমদ ইবনে তুলুন নামক এক মুসলিম ৮৭২ সালে মিসরের রাজধানী কায়রোতে সর্বপ্রথম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কায়রো থেকে পরবর্তীতে হাসপাতাল ব্যবস্থার ধারনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তুলুনিদ সম্রাজ্যে স্থাপিত প্রথম হাসপাতালের নাম হচ্ছে আহমদ ইবন তুলুন হাসপাতাল। এর পরবর্তীকালে বাগদাদে আরো নতুনভাবে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৫. আলোকবিদ্যা বা অপটিকস : আলোকবিজ্ঞান হলো পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা- যা আলোর আচরণ, বৈশিষ্ট্যাবলী এবং বস্তুর সঙ্গে আলোর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বর্ণনা করে। আলোকবিদ্যা আলোক সম্পর্কীয় প্রত্যক্ষ ঘটনা ব্যাখ্যা করে। মুসলমানদের মাধ্যমেই আধুনিক আলোকবিদ্যার শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়েছিল। আনুমানিক এক হাজার সালের দিকে বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম পদার্থবিদ ইবনে আল হাইছাম প্রমাণ করেন যে, ‘বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো মানুষের চোখে প্রবেশের পরই কেবল মানুষ সে বস্তু দেখতে পায়’। তার আবিষ্কৃত এই মতবাদ বিজ্ঞানী ইউক্লিড ও টলেমির প্রাচীন ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে। মুসলিম পদার্থবিদ ইবনে আল হাইছাম মানুষের চোখের সাথে ক্যামেরার সাদৃশ্যও আবিষ্কার করেন। তার এই সূত্রকে মূল ধরে পরবর্তীকালে ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment