ভাল নারীর একটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَيْسَ لِلنِّسَاءِ وَسْطُ الطَّرِيْقِ
‘নারীরা রাস্তার মধ্য দিয়ে চলাচল করবে না’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৫৬)। অত্র হাদীছে ভাল নারীদের রাস্তায় চলার আদর্শ বর্ণিত হয়েছে। রাস্তায় চলার ব্যাপারে ভাল নারীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা রাস্তার মধ্যস্থল দিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে চলবে না। দৃষ্টি নত করে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলাই হচ্ছে ভাল নারীর বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلاَيُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّلِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْابَآءِ بُعْوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَائِهِنَّ اَوْاَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْاِخَوَانِهِنَّ اَوْبَنِىْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْبَنِىْ اَخَوَتِهِنَّ اَوْنِسَائِهِنَّ اَوْمَامَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ اَوِالتَّبِعِيْنَا غَيْرِاُولِى الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِالطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلَى عَوْرَتِ النَّسَاءِ وَلاَ يَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَايُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّط وَتُوْبُوْآاِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-
‘আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, যা প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়নাকে তাদের বুকের উপর দিয়ে পেচিয়ে রাখে’ তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আবরণ প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (সূরা নূর ৩১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর। প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন কর না’ (আহযাব ৩৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْحَيَاءُ مِنَ الِإيْمَانِ وَالْإِيْمَانُ فِي الْجَنَّةِ ‘লজ্জা হচ্ছে ঈমান। আর ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম’ (মিশকাত হা/৫০৭৭)।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহিলাদেরকে নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে। প্রয়োজন বশত যদি তাদেরকে বাইরে যেতেই হয় তাহ’লে তাদেরকে পূর্ণ পর্দা করে যেতে হবে। মূলতঃ পর্দাই হচ্ছে মহিলাদের জন্য এক শ্রেষ্ঠ গুণ। কারণ যাদের পর্দা নেই তাদের লজ্জা-শরম নেই। আর যাদের লজ্জা নেই ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি ভালবাসা তাদের নিকট হ’তে দূরে সরে যায়। তাই প্রত্যেক মুমিনা মহিলার জন্য কুরআন-হাদীছ অনুসারে পর্দা করা যরূরী এবং লোক দেখানো পর্দা পরিহার করা আবশ্যক।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَنْظُرُ اللهُ إِلى اِمْرَأةٍ لاَ تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا وَهِيَ لاَ تَسْتَغْنيِ عَنْهُ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সে মহিলার দিকে করুণার দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর শুকরিয়া আদায় করে না, আর সে স্বামীকে নিজের জন্য পরিপূর্ণ মনে করে না’ (ত্বাবারাণী, কাবায়ির পৃঃ ২৯৩)।
অত্র হাদীছে মহিলাদের দু’টি দোষের কথা বলা হয়েছে। (১) স্বামীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করা (২) স্বামীকে নিজের জন্য যথেষ্ট মনে না করা। মুসলিম মহিলাদের জন্য উক্ত দোষ দু’টি থেকে বেঁচে থাকা অতীব যরূরী। কেননা যে কারণে মহিলারা বেশি বেশি জাহান্নামে যাবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮২)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بنِ مَسْعُوْدٍ لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ تَعَالَى.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্ তা‘আলা ঐসব নারীদের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে দেহে উল্কি (সুচিবিদ্ধ করে চিত্র অংকন) করে বা অন্যের মাধ্যমে করিয়ে নেয়। যারা ভ্রূ উপড়িয়ে চিকন করে, যারা দাঁত সমূহকে শানিত ও সরু বানায়। কারণ তারা আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টির বিকৃতি ঘটায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩১)।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ ‘যারা চুলে জোড়া লাগায় অথবা অন্যের দ্বারা লাগিয়ে নেয়, যে নারী দেহে কিছু অংকন করে অথবা অন্যের দ্বারা করিয়ে নেয় তাদের উভয়ের প্রতি অভিশাপ করেছেন’ (বুখারী,মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩০)।
উপরোক্ত হাদীছ দু’টিতে রাসূল কতিপয় কাজ করতে মহিলাদের বারণ করেছেন। আদর্শনারীর জন্য উক্ত কাজগুলি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَعَنَ اللهُ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
‘আল্লাহ তা‘আলা সেই সব পুরুষের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা মহিলার বেশ ধারণ করে। আর ঐসব মহিলাদের প্রতিও অভিশাপ করেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯, বাংলা মিশকাত হা/৪২৩২)।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, কোন পুরুষ মহিলার পোশাক পরিধান করতে পারে না। তেমনি কোন মহিলাও পুরুষের পোশাক পরিধান করতে পারে না। তদ্রূপ যে সমস্ত পোশাকে মাহিলাদের সাথে পুরুষের সাদৃশ্য করা হয় কিংবা পুরুষদের সাথে মহিলাদের সাদৃশ্য হয়, সেসব পরিহার করতে হবে। আদর্শ নারীর জন্য ঐসব কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত আবশ্যক। প্রকৃতপক্ষে একজন আদর্শ মুসলিম মহিলা কখনো পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে না।
কোন এক বৈঠকে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি জাহান্নামের প্রতি লক্ষ্য করলাম দেখলাম সেখানকার অধিকাংশই নারী। ছাহাবীগণ বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না, তারা স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না এবং অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করে না। তুমি যদি সারা জীবন তাদের সাথে অনুগ্রহ কর, অতঃপর তোমার মধ্যে কোন ত্রুটি লক্ষ্য করে, তখন বলে ফেলে আমি তোমার মধ্যে কোন কল্যাণই পাইনি’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/১৩৯৭)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَوْ كُنْتُ آمِراً أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لاَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا-
আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যদি আমি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম তবে স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩২৫৫; বাংলা মিশকাত হা/৩১১৬, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছে স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব কতটুকু তা স্পষ্ট হয়েছে।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘স্বামী হচ্ছে মহিলাদের জন্য জাহান্নাম এবং জান্নাতের মাধ্যম’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১২, ১৯৩৪)। অত্র হাদীছগুলি দ্বারা বুঝা যায় যে, আদর্শ মহিলার জন্য তার স্বামীকে রাযী-খুশি করা, আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, তার খিদমতে সর্বদা নিয়োজিত থাকা অত্যন্ত যরূরী।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একজন মহিলাকে ভাল হতে হলে নিম্নোক্ত গুণাবলী অর্জন করতে হবে। ঈমানদার, পরহেযগার, নেককার, আল্লাহভীরু, লজ্জাস্থানের হিফাযতকারিণী, সতী-সাধবী, উত্তম চরিত্রের অধিকারিণী, অনুগত, পর্দাশীলা, দানশীলা, ছালাত আদায়কারিণী, ছিয়াম পালনকারিণী ইত্যাদি। এক কথায় যার মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ রয়েছে সেই হচ্ছে প্রকৃত ভাল নারী। কেননা আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا.
‘প্রকৃত পক্ষে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে এক সর্বোত্তম আদর্শ। এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে, আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি আশাবাদী এবং খুব বেশি বেশি আললাহকে স্মরণ করে’ (সূরা আহযাব ২১)।
স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য করা যরূরী। স্ত্রীর ন্যায় সঙ্গতভাবে স্বামীর খিদমত করবে। রান্না বান্না থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করবে। যদি স্ত্রী স্বামীর খিদমত না করে তাহ’লে স্বামী তার স্ত্রীকে খিদমতে বাধ্য করবে। আর এটাই হ’ল তার কর্তৃত্ব।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও পুরুষদের উপর ন্যায় সঙ্গত অধিকার রয়েছে । আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (সূরা বাক্বারাহ ২২৮)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি অধিকার রাখে। যা পরস্পরকে আদায় করা কর্তব্য। তবে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيّاً كَبِيرا.
‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ্ একের উপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সেমতে সৎস্ত্রীগণ হয় আনুগত্যশীল এবং আল্লাহ্ তা‘আলা যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন তা হেফাযত করেন। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা রয়েছে তাদের সদুপদেশ দাও। তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায় তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবার শ্রেষ্ঠ’ (সূরা নিসা ৩৪)।
অত্র আয়াত দু’টিতে স্বামী-স্ত্রীর পার্থক্য এবং তাদের পারস্পরিক অধিকার যথাযথভাবে উল্লেখ হয়েছে। তাদের কর্তব্য এবং সেগুলির স্তর নির্ণয় সম্পর্কে একটি শারঈ মূলনীতি হিসাবে গণ্য। নারীদের উপর যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে, যা প্রদান করা একান্ত যরূরী, তেমনিভাবে পুরুষদের উপরও নারীদের অধিকার রয়েছে, যা প্রদান করা যরূরী। তবে পুরুষের মর্যাদা নারীদের তুলনায় বেশি। দু’টি ন্যায়সঙ্গত ও তাৎপর্যের প্রেক্ষিতেই পুরুষদেরকে নারীদের উপর পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রথমতঃ পুরুষকে তার জ্ঞানৈশ্বর্য ও পরিপূর্ণ কর্মক্ষমতার কারণে নারী জাতির উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যা অর্জন করা নারী জাতির পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। দ্বিতীয়তঃ নারীর যাবতীয় প্রয়োজন পুরুষেরা নিজের উপার্জন কিংবা স্বীয় সম্পদের দ্বারা মিটিয়ে থাকে। প্রথম কারণটি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত ও মানুষের নিজস্ব ক্ষমতা বহির্ভূত। আর দ্বিতীয় কারণটি নিজের উপার্জিত ও ক্ষমতাভিত্তিক।
পারিবারিক জীবনে যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে নাফরমানী সংঘটিত হয় কিংবা এমন আশংকা দেখা দেয়, তাহ’লে প্রথম পর্যায়ে তাদের সংশোধনের জন্য নরমভাবে তাদের বুঝাবে। যদি তাতে বিরত না হয়, তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের শয্যা পৃথক করে দিবে। যাতে এই বিচ্ছিন্নতার দরুন সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। বিচ্ছিন্নতা শুধু শয্যাতেই হবে, বাড়ি ও থাকার ঘর পৃথক করতে হবে না। কারণ তাতে তার অনুতাপ বেশি হবে। এতে সংশোধন না হ’লে প্রহারের কথা আল্লাহ্ তা’আলা উল্লেখ করেছেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ لاَ يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلاَّ بِإِذْنِهِ وَلاَ تَأْذَنَ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ بِإذْنِهِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর ছিয়াম পালন করা জায়েয নয় এবং স্বামীর বাড়িতে তার অনুমতি ব্যতীত কাউকে প্রবেশ করতে দেয়াও জায়েয নয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩১ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘কাযা ছিয়াম পালন করা’ অনুচ্ছেদ)। উল্লেখ্য যে, ফরয ছিয়াম পালন করার জন্য স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন হয় না। স্বামী যথাযথভাবে স্ত্রীর খিদমত উপভোগ করবে। নফল ইবাদত এই খিদমত বন্ধ করতে পারে না। কাজেই স্বামীর অনুমতি ব্যতীত নফল ইবাদত করা যাবে না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ وفي رواية وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلاَّ كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে, আর সে বিছানায় যেতে অস্বীকার করে এবং স্বামী অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত্রি যাপন করে, তখন ফেরেশতাগণ তার প্রতি সকাল পর্যন্ত অভিশাপ করতে থাকেন’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সাঃ) আল্লাহর কসম করে বললেন, ‘কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকলে এবং তার স্ত্রী তা অস্বীকার করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তার উপর ততক্ষণ পর্যন্ত অসন্তুষ্ট থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট থাকে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৪৬, বাংলা মিশকাত হা/৩১০৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ إِذَا صَلَّتْ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ-
আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যখন কোন স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করবে, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করবে এবং নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে ও স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে বলা হবে’ (আহমাদ, আবূ নু‘আইম, মিশকাত হা/৩২৫৪, বাংলা মিশকাত হা/৩১১৫, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছে নারীদের ইচ্ছামতো জান্নাতে যাওয়ার চারটি মাধ্যম উল্লেখ করা হয়েছে। তার একটি হচ্ছে স্বামীর অনুগত হওয়া। স্ত্রীদের জন্য স্বামীর সেবাই হচ্ছে প্রধান কাজ। স্বামীর সেবার বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। স্ত্রীলোকের জন্য সাংসারিক দায়িত্ব খুবই কম।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لاَ تُؤْذِي امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ لاَ تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন কোন নারী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতের হূরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, হে (অভাগিনী)! তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তোমার কাছে পরবাসী। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩২৫৮, বাংলা মিশকাত হা/৩১১৯, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২৮৪ পৃঃ)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ نَفْسَهَا.
‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক্ব আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার স্বামীর হক্ব আদায় না করবে। যদি স্বামী উটের গদির উপর থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবুও স্ত্রীকে সম্মতি প্রকাশ করতে হবে’ (ইবনু মাজাহ, আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২৮৪ পৃঃ, হাদীছ ছহীহ)।
عَنِ الْحُصَيْنِ بْنِ مِحْصَنٍ أَنَّ عَمَّةً لَهُ أَتَتْ النَّبِيَّ فِي حَاجَةٍ فَفَرَغَتْ مِنْ حَاجَتِهَا فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا آلُوهُ إِلاَّ مَا عَجَزْتُ عَنْهُ قَالَ فَانْظُرِي أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ.
হুছাইন ইবনু মিহছান বলেন, আমার ফুফু আমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন যে, কোন প্রয়োজনে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে আসলাম। অতঃপর নবী (ছাঃ) বললেন, ‘হে ওমুক মহিলা! তোমার স্বামী আছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, তুমি তার জন্য কেমন? সে বলল, আমি তার অনুগত ও খিদমতে কমতি করি না। তবে আমি তার পক্ষ থেকে কমতি পাই। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি অপেক্ষা কর, তুমি তার মাধ্যমে কোথায় যাবে? কেননা সে তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম’ (আহমাদ, আবী শায়বাহ, আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২৮৫ পৃঃ)। হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রীদের জন্য কর্তব্য হচ্ছে স্বামীদের সেবায় নিয়োজিত থাকা। কেননা স্বামী হচ্ছে তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ।
হে আল্লাহ! আমাদের কে সঠিক বুঝ দান করুন।
________আমিন
________আমিন
No comments:
Post a Comment