Thursday, September 20, 2018

নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাবা-মা জান্নাতী? না জাহান্নামী?



No automatic alt text available.


#আসুন ভ্রান্ত আলেম-উলামাদের ভ্রান্ত ফতুয়া-যুক্তি ও ভ্রান্ত আক্বীদাহ্-বিশ্বাস সমূহ পরিত্যাগ ও বর্জন করে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সত্যকে জানি এবং নিজ নিজ আক্বীদাহ্-বিশ্বাস পরিশুদ্ধ করে নিই!
#আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাবা-মা জান্নাতী? না জাহান্নামী? চলুন দেখি ‌এ সম্পর্কে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ কি বলে? নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাবা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ নিম্নরূপ--
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيْنَ أَبِي قَالَ فِي النَّارِ‏ فَلَمَّا قَفَّى دَعَاهُ فَقَالَ‏ إِنَّ أَبِي وَأَبَاكَ فِي النَّارِ.‏ [رواه مسلم: كتاب الإمان؛ باب بَيَانِ أَنَّ مَنْ مَاتَ عَلَى الْكُفْرِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَلاَ تَنَالُهُ شَفَاعَةٌ وَلاَ تَنْفَعُهُ قَرَابَةُ الْمُقَرَّبِينَ: 388]
আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম হতে বর্নিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কোথায় আছেন (জান্নাতে না জাহান্নামে)? জবাবে রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন চলে যেতে লাগলো তখন তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডাকলেন এবং বললেন, আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে৷[1] নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর মায়ের সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ নিম্নরূপ--
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ زَارَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ فَقَالَ اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ. [رواه مسلم: كتاب الجنائز؛ باب اسْتِئْذَانِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ: 2149]
আবূ হুরায়রাহ রাযিয়াল্লাহু আনহুম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মায়ের কবর যিয়ারত করতে গেলেন। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁদলেন এবং আশেপাশের সবাইকে কাঁদালেন। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি আমার প্রভুর নিকট মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। আমি তার কবর যিয়ারত করার জন্য অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হ'ল। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।[2]
#উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমানীত হল যে, নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাবা-মা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবার দেখি মুশরিকদের সম্পর্কে কুরআন কি বলে? মহান আল্লাহ বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ [سورة التوبة: ٩/١١٣]
‘মুশরিকরা জাহান্নামী একথা স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও মুমিনের জন্য উচিৎ নয়, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়’৷ (সুরা আত্-তাওবাহ্ ৯/১১৩)। তিনি অন্যত্রে বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ [سورة المائدة: ٥/٧٢]
‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’৷ (সুরা মায়িদাহ্ ৫/৭২)।
#উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হল যে, যারা দ্বীন ইসলামী আদর্শের বাইরে তথা কাফির-মুশরিক অবস্থায় ইন্তিকাল করবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা অবৈধ তথা নাজায়িয। সুতরাং নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাবা-মা জাহান্নামী হওয়ার ব্যপারে সন্দেহ পোষণ করা স্পষ্ট কুফুরি!
#জ্ঞাতব্য : যিয়ারত অর্থ হল- সাক্ষাত করা, দেখা করা, বেড়ানো ইত্যাদী৷ কাফির-মুশরিক বাপ-মায়ের কবর যিয়ারত করা যাবে। ক্রন্দন করা যাবে। কেননা এর মাধ্যমে মৃত্যুকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সালাম করা যাবে না। তাদের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তাঁর মায়ের কবর যিয়ারতের জন্য অতটুকুই মাত্র অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি।
#কবর যিয়ারতে অথবা কবরের পাশ দিয়ে গমন করার সময় السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ 'আস্‌সালা-মু ‘আলায়কুম ইয়া- আহলাল কুবূরি, অর্থাৎ 'হে কবরবাসী আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক', বলা এই জন্য ঠিক নয় যে, কেননা গোরস্থানে কাফির-মুশরিকদেরও কবর থাকে৷ আর যেহেতু কাফির-মুশরিকদের জন্য দু'আ করা শরীআতে নিষিদ্ধ সেহেতু শুধুমাত্র মুমিন-মুসলিমরাই দু'আর ভাগি হবেন৷ সুতরাং উপরোক্ত দু'আ পড়া থেকে অবশ্যয়ই বিরত থাকতে হবে৷ বরং মুমিন-মুসলিম কবরবাসীর জন্য নিম্নোক্ত দু'আটি পড়া শরীআত সম্মত৷ যেমন--
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ، نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ-
উচ্চারণ : আসসালা-মু ‘আলা আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া ইন্না ইংশা-আল্লা-হু বিকুম লা লা-হিকূনা। নাসআলুল্লা-হা লানা ওয়া লাকুমুল ‘আ-ফিয়াতা’।
অনুবাদ : মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক! আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যয়ই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি। আমাদের ও আপনাদের জন্য আমরা আল্লাহর নিকটে মঙ্গল কামনা করছি’।[3]
#আল্লাহ আমাদের ভুলক্রটিগুলি ক্ষমা করুন এবং দ্বীন ইসলামের ছহীহ ইল্ম দান করুন এবং নিজ নিজ আক্বীদাহ্-বিশ্বাস পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফিক দান করুন-আমীন!
[1]. ছহীহ মুসলিম হাদীছ নম্বর- ৩৮৮, অধ্যায়- 'কিতাবুল ঈমান', অনুচ্ছেদ- কুফুরি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী, সে কোনো শাফাআত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না। ইবনু মাজাহ হাদীছ নম্বর- ১৫৭৩, অধ্যায়- জানাযা, অনুচ্ছেদ- মুশরিকদের কবর যিয়ারত সম্পর্কে৷
[2]. ছহীহ মুসলিম হাদীছ নম্বর- ২১৪৮, ২১৪৯, অধ্যায়- 'কিতাবুল জানাযা', অনুচ্ছেদ- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মায়ের কবর যিয়ারতের জন্য আল্লাহর নিকট অনুমতি চাওয়া সম্পর্কে৷ ইবনু মাজাহ্ হাদীছ নম্বর- ১৫৭২, অধ্যায়- জানাযা, অনুচ্ছেদ- মুশরিকদের কবর যিয়ারত সম্পর্কে। মিশকাতুল মাসাবিহ্ হাদীছ নম্বর- ১৭৬৩, অধ্যায়- কিতাবুল জানাযা', অনুচ্ছেদ- কবর যিয়ারত সম্পর্কে৷
[3]. মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীছ নম্বর- ১৭৬৪৷

No comments:

Post a Comment