Wednesday, November 28, 2018

প্রশ্নঃ বিয়েতে কোরআন এবং সুন্নত অনুযায়ী করণীয় কাজ গুলী কি কি?



Image may contain: text

প্রশ্নঃ বিয়েতে কোরআন এবং সুন্নত অনুযায়ী করণীয় কাজ গুলী কি কি? 
-------- -------- -------------:>
উত্তরঃ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

১- বিয়ের নিয়ত শুদ্ধ করা : 
নারী-পুরুষের উভয়ের উচিত বিয়ের মাধ্যমে নিজকে হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানোর নিয়ত করা। তাহলে উভয়ে এর দ্বারা ছাদাকার ছাওয়াব লাভ করবে। কারণ,

# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘তোমাদের সবার স্ত্রীর যোনিতেও রয়েছে ছাদাকা। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের কেউ কি তার জৈবিক চাহিদা মেটাবে আর তার জন্য সে কি নেকী লাভ করবে? তিনি বললেন, ‘তোমরা কি মনে করো যদি সে ওই চাহিদা হারাম উপায়ে মেটাতো তাহলে তার জন্য কোনো গুনাহ হত না? (অবশ্যই হতো) অতএব তেমনি সে যখন তা হালাল উপায়ে মেটায়, তার জন্য নেকী লেখা হয়।’ (মুসলিম : ১৬৭৪; মুসনাদ আহমদ : ২১৫১১)
২- অলীমা করা : 
বিয়ের আরেকটি সুন্নত হলো অলীমা করা তথা মানুষকে দা‘ওয়াত করে খাওয়ানো। রাসূলুল্লাহ (সা) এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এমনকি তিনি আবদুর রহমান বিন আউফ (রা)এর উদ্দেশে বলেন, ‘অলীমা কর, হোক না তা একটি ছাগল দিয়ে হয়।’ (বুখারী : ২০৪৯; মুসলিম : ৩৫৫৬)

৩- নির্দোষ সঙ্গীত ও দফ বাজানো :
বিয়ের ঘোষণার স্বার্থে শুধু দফ বাজানো এবং নির্দোষ সঙ্গীত গাওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে সে সঙ্গীতে রূপের বর্ণনা কিংবা অবৈধ কিছুর আহ্বান না থাকতে হবে।

৪- বিয়ের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা :
কেউ যদি বিয়ের দা‘ওয়াত দেয় তাহলে সে দা‘ওয়াত কবুল করা সুন্নত।

# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে যখন বৌভাতের দাওয়াত দেয়া হয়, সে যেন তাতে অংশ নেয়।’ (বুখারী : ৫১৭৩; মুসলিম : ৩৫৮২)
অপর এক হাদীসে তিনি বলেন, ‘আর যে দাওয়াত কবুল করল না সে যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যাচরণ করল।’ (মুসলিম : ৩৫৯৮)
তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি নিষিদ্ধ কিছুর আয়োজন থাকে তবে তাতে অংশ নেয়ার অনুমতি নেই। বিস্তারিত পড়ুন নিচের লিংকে "বিয়েতে বর্জনীয়" ।
৫- নব দম্পতির জন্য দু‘আ করা : 
নব দম্পতির জন্য নিচের দু’আ করা সুন্নত। আবূ হুরায়রা (রা)হু থেকে বর্ণিত, যখন কোনো ব্যক্তি বিবাহ করত রাসূলুল্লাহ (সা) বলতেন, ‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন এবং তোমাদের উভয়েক কল্যাণে মিলিত করুন।’ (আবূ দাউদ: ২১৩০)

৬- বাসর ঘরে স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে ডান হাত রাখা এবং দু’আ পড়া : 
# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারী, ভৃত্য বা বাহন থেকে উপকৃত হয় (বিয়ে বা খরিদ করে) তবে সে যেন তার মাথার অগ্রভাগ ধরে, বিসমিল্লাহ পড়ে এবং বলে :

اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ. 
(‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর ও এর স্বভাবের কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং এর ও এর স্বভাবের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)’ (বাইহাকী, সুনান কুবরা : ১৪২১১; ইবন মাজা : ১৯১৮)

৭- স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একসঙ্গে দুই রাকা‌‘‌ত সালাত আদায় করা : 
# আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে, স্বামী তখন দাঁড়িয়ে যাবে। আর স্ত্রীও দাঁড়িয়ে যাবে তার পেছনে। অতপর তারা একসঙ্গে দুই রাকা‌‘‌ত সালাত আদায় করবে এবং বলবে :

اللَّهُمَّ بَارِكْ لِي فِي أَهْلِي، وَبَارِكْ لَهُمْ فِيَّ، اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي مِنْهُمْ وَارْزُقْهُمْ مِنِّي، اللَّهُمَّ اجْمَعَ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ إِلَى خَيْرٍ، وَفَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ. 
‘হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন আর আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। আয় আল্লাহ, আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযক দিন আর আমার থেকে তাদেরও রিযক দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্র রাখুন আর আমাদের মাঝে যখন বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবেন তখন কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটাবেন।’ (তাবরানী, মু’জামুল কাবীর : ৮৯০০)

৮- স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের দু‘আ পড়া : 
স্ত্রী সহবাসকালে নিচের দু’আ পড়া সুন্নত।

# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী সঙ্গমকালে বলে :
بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا 
(আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তানের কাছ থেকে দূরে রাখুন আর আমাদের যা দান করেন তা থেকে দূরে রাখুন শয়তানকে।) (বুখারী : ৭৩৯৬)

তবে সে মিলনে কোনো সন্তান দান করা হলে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।’
৯- নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত থাকা : 
# আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পেছনপথে সঙ্গম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মদ (সা)এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করলো।’ (মুসনাদ আহমদ : ১০১৭০; ইবন মাজা : ৬৩৯)

১০- ঘুমানোর আগে অযূ বা গোসল করা : 
স্ত্রী সহবাসের পর সুন্নত হলো অযূ বা গোসল করে তবেই ঘুমানো। অবশ্য গোসল করাই উত্তম।

# আম্মার বিন ইয়াসার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না : কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র শরীরবিশিষ্ট ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে অযূ করে।’ (সুনান আবূ দাউদ : ৪১৮২)
১১- ঋতুবতীর স্ত্রীর সঙ্গে যা কিছুর অনুমতি রয়েছে :
স্বামীর জন্য ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে যোনি ব্যবহার ছাড়া অন্য সব আচরণের অনুমতি রয়েছে। স্ত্রী পবিত্র হবার পর গোসল করলে তার সঙ্গে সবকিছুই বৈধ। কারণ,

# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,‘… সবই করতে পারবে কেবল সঙ্গম ছাড়া।’ (মুসলিম : ৭২০)
১২- স্ত্রী সান্বিধ্যের গোপন তথ্য প্রকাশ না করা :
বিবাহিত ব্যক্তির আরেকটি কর্তব্য হলো স্ত্রী সংসর্গের গোপন তথ্য কারো কাছে প্রকাশ না করা।

# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তি সবচে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে যে তার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয় এবং স্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ হয় অতপর সে এর গোপন বিষয় প্রচার করে।’ (মুসলিম : ৩৬১৫)
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে তাঁর প্রতিটি নির্দেশ মেনে চলার তাওফীক দিন। আমাদের জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজে তাঁর প্রিয় হাবীবের সুন্নতের অনুবর্তী হবার তাওফীক দিন। আমীন

No comments:

Post a Comment