Saturday, December 1, 2018

তাবলীগ জামায়াতঃ- স্বপ্নে পাওয়া উদ্ভট ধর্ম।



Image may contain: one or more people and text


বর্তমানে মুসলিম সমাজ শির্ক বিদ‘আতের সর্দিতে ভুগছে। সস্তা ফযীলতের ধোঁকায় পড়ে মুসলিম জাতি আজ দিশেহারা। তারা খুঁজে ফিরছে সত্যের সন্ধানে।

কোথায় পাওয়া যাবে সঠিক পথের দিশা, কোথায় পাওয়া যাবে সত্যিকারের আদর্শ?
কেননা পৃথিবীর সকল মানুষ কোন না কোন আদর্শের সাথে সংযুক্ত।
আওয়ামী লীগের আদর্শ শেখ মুজিবুর রহমান, বি.এন.পি’র আদর্শ জিয়াউর রহমান,
কমিনিস্টদের আদর্শ মাওসেতুং-লেলিন, জামায়াত ইসলামী’র আদর্শ মওদূদী, তাবলীগ জামায়াতের আদর্শ হচ্ছেন মাওলানা ইলিয়াস! মাযার, খানকা ও তরীকা পূজারী মুরীদদের আদর্শ স্ব স্ব পীর-ফকীর। যার যার নেতা-আমীরদের আদর্শ নিয়ে তারা উৎফুল্ল! কোথায় আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আদর্শ?
ইসলাম কারো মনগড়া ধর্ম ও জীবন
ব্যবস্থা নয়। এটা বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আর এ দ্বীন প্রচারিত হয়েছিল নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে। এই দ্বীন
তথা ইসলামের মূল দর্শন হল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা দান। মানব সমাজে আল্লাহর দ্বীনের
বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কুরআন ও
হাদীছে মুসলিম উম্মাহকে বহুবার দির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এমনকি যদি একটি আয়াতও কেউ জানে, তা প্রচার করার জন্য রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন।

"প্রচার করো যদি একটি মাত্র আয়াতও হয়"।
(সহীহ বুখারী হাদিস নং ৩৪৬২)
আল্লাহ্ বলেন -
..... আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। 
(সূরা মায়েদাহ-আয়াত ৩)

#বিজ্ঞ_বন্ধু!
আসুন দেখি তাবলীগ জামায়াত কোথায় থেকে এলো -
১৯২১ সালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ‘মেওয়াত' এলাকায় ফিরোজপুর
নিমক' গ্রামে মাওলানা ইলিয়াস (১৩০৩-১৩৬৩ হিঃ/১৮৮৫-১৯৪৪ খৃঃ)
তাবলীগ জামায়াত প্ৰতিষ্ঠা করেন।

উক্ত ফের্কার মূল গ্রন্থ ‘তাবলীগী নেছাব, যা ‘ফাযায়েলে আমল' বলে পরিচিত। এর লেখক হলেন ইলিয়াস ছাহেবের জামাই, ভাতিজা এবং ছাত্র মাওলানা যাকারিয়া (১৩১৭-১৪০২ হিঃ ১৮৯৮ -১৯৮২ খৃঃ)। উক্ত গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ মোতাবেক ১৩৯৫ হিজরীতে।
সূত্রঃ- (ইসলামী দাওয়াহ ও তাবলীগ জামাত : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৭৭)

মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ)-এর পুত্র মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্ধলভী
(১৯১৭-১৯৬৫ খৃঃ) প্রণীত এবং মুহাম্মাদ সাদ কর্তৃক উর্দু অনুদিত ‘মুন্তাখাব হাদীস’ বইটিও তাদের অনুসরণীয়। এটি প্রথম ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়।
তারা দেওবন্দী আলেমদের মতবাদকে সর্বাধিক মূল্যায়ন করে। উক্ত কিতাব।
ছাড়াও মাওলানা আশরাফ আলীর রচিত ‘বেহেশতী জেওর, নিয়ামুল
কুরআনও ‘মকছুদুল মুমিনীন’কে অনুসরণ করে থাকে।

মাওলানা ইলিয়াস ১৯৪৪ সালের ১২ জুলাই মারা যান। ফলে তার পুত্র মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভীকে আমীরের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং তার মাথায় পাগড়ী পরিয়ে দেয়া হয়। ১৯৬৫ সালে ফেব্রুয়ারী মাসের
দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকার ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন তিনি ৪৮ বছর
বয়সে ১৯৬৫ সালের ২রা এপ্রিল মারা যান। তার জানাযা পড়ান।
ওলানা যাকারিয়া। অতঃপর মাওলানা যাকারিয়া ছাহেবের জামাই মাওলানা
ইনআমুল হাসান কান্ধলভী (১৯১৮-১৯৯৫)-কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৪৪ সালে। বাগেরহাট জেলার অধিবাসী মাওলানা আব্দুল আজিজের মাধ্যমে সূচনা হয়। 
(ড. মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন,ইসলামী দাওয়াহ ও তাবলীগ জামায়াত : প্রক্ষিত বাংলাদেশ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, জানুয়ারী ২০০৬), পৃঃ ৯৯)

আর বার্ষিক ইজতেমার সূচনা হয় ১৯৪৬ সালে । ঢাকা কাকরাইল মসজিদে এর উদ্বোধন হয়। ১৯৪৮
সালে বার্ষিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পে। অতঃপর
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। লোক সংখ্যা বৃদ্ধি।
পেতে থাকলে ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগাড় গ্রামের মাঠে বার্ষিক ইজতেমার
আয়োজন করা হয়। অতঃপর ১৯৬৭ সাল থেকে তুরাগ নদীর তীরে প্রতি
বছর কথিত ‘বিশ্ব ইজতেমা' অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সাবেক ডি আই টি
বর্তমানে ‘রাজউক’-এর ১২৫ একর জমি ইজতেমার মাঠ হিসাবে ব্যবহার
করা হত। অবশ্য ১৯৬৭ সালেই তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাবলীগ জামায়াতকে এই মাঠ ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি দেয়। ১৯৯৫ সালে ।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা
কর্তৃপক্ষকে তিন শতাধিক একর জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেন।
সূত্রঃ-
(ইসলামী দাওয়াহ ও তাবলীগ জামায়াত : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, পৃঃ ১৪৪-১৪৫)

‘ফাযায়েলে আমল’ বা তাবলীগী নিছাব নামে দুই খণ্ডে সমাপ্ত একটি ভ্রান্ত কিতাব রয়েছে। সেগুলো পাৰ্ট পার্ট করা হয়েছে। যেমন মূল উর্দু বইয়ের
ধারাবাহিকতা রয়েছে : 
১. হেকায়েতে ছাহাবা 
২. ফাযায়েলে নামায। 
৩. ফাযায়েলে তাবলীগ। 
৪. ফাযায়েলে যিকর। 
৫. ফাযায়েলে। 
৬. ফাযায়েলে রামাযান। 
৭. ফাযায়েলে দরূদ। 
৮. ফাযায়েলে ছাদাকাত ১ম বাকী অংশ নিয়ে অংশ।
৯. ফাযায়েলে ছাদাকাত ২য় অংশ। ১০. ফাযায়েলে হজ্জ। ১ থেকে ৭
অংশ নিয়ে ‘ফাযায়েলে আমল’ নামে প্রথম খণ্ড।
আর বাকী অংশ নিয়ে
‘তাবলীগী নিছাব’ ২য় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলা অনুবাদে
শ্ৰেণী বিন্যাস একটু পরিবর্তন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন অংশ নিয়ে পৃথক
পৃথক হয়েছে বই ছাপানো হয়েছে। যেমন- ফাযায়েলে দরূদ, ফাযায়েলে হজ্জ।

মূলতঃ মাওলানা ইলিয়াস ছাহেবের স্বপ্নের উপর ভিত্তি করেই
উক্ত জামায়াতের সূচনা হয়েছে। যেমন তিনি তার সাক্ষাৎকারে বলেন,

‘আজকাল আমার উপরে স্বপ্নে ছহীহ ইলম অবতীর্ণ হচ্ছে। এ জন্য চেষ্টা
করব যেন আমার বেশী বেশী ঘুম আসে। (আনন্দের কারণে যখন ঘুম কম হতে লাগল, তখন ডাক্তার ও কবিরাজের পরামর্শক্রমে আমি মাথায় তেল মালিশ করলাম)। ফলে ঘুমে ডুবে গেলাম। তিনি বলেন, তাবলীগের এই
তরীকাও আমার উপর স্বপ্নে প্রকাশ পেয়েছে’৷ 
#সূত্রঃ-
(মাওলানা মুহাম্মাদ মানযুর নুমানী, মালফূযাত হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস : আল-ফুরকান বুক ডিপু, ২০১০) পৃঃ ৫১, অনুচ্ছেদ-৫০)

তাদের মূল সমস্য আক্বীদাহ । ছুফীবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় তাদের মধ্যে ছুফীদের
দর্শন সবই রয়েছে। যেমন- আকীদা পোষণ করে যে, আল্লাহ নিরাকার ও
সর্বত্র বিরাজমান। তারা মনে করে পৃথিবীর অস্তিত্বশীল সবই আল্লাহর অংশ।
অর্থাৎ ওয়াহদাতুল ওজুদে বিশ্বাসী। হায়াতুন্নবী অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) আমাদের ন্যায় কবরে জীবিত আছেন এবং মানুষের কথা শুনেন, উপকার করেন এবং বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করেন। আল্লাহর নবী (ছাঃ) সহ ওলীরাও গায়েব জানেন। রাসূল (ছাঃ)-এর পেশাব-পায়খানা পবিত্র। স্বপ্নে প্রাপ্ত বিষয়গুলোও শরীআত। টঙ্গীর ইজতেমায় অংশগ্রহণ করলে হজ্জ বা ওমরার নেকী পাওয়া
যায়। জাল, যইফ ও ত্রুটিপূর্ণ হাদীছও গ্রহণযোগ্য। এ ধরনের অসংখ্য
শিরকী আকিদা তাদের মধ্যে রয়েছে।

ইসলামের মানদণ্ড বা সংবিধান হল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ, যা নাযিল হয়েছে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর। তিনি শেষ নবী। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন কিতাব নাযিল হবে না এবং কোন নবী আসবেন না। কোন নীতি-রীতি পদ্ধতি নাযিল হবে না। রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু বরণের মাধ্যমে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলামী তাবলীগের পদ্ধতি নাযিল হয়েছে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে। কিন্তু ইলিয়াস ছাহেব যা দাবী করেছেন, তা মূলতঃ স্বপ্নে পাওয়া উদ্ভট ধর্ম। ইসলাম স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত পবিত্র জীবন বিধান। ইলিয়াসী তাবলীগের মত মানুষের
মস্তিষ্কপ্রসূত কোন বানানো ধর্ম নয়। তাই ইসলামী দাওয়াতের ছহীহ পদ্ধতিই কেবল অনুসরণযোগ্য।

আজ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, টংগীতে স্বপ্নে পাওয়া উদ্ভট তাবলীগ জামায়াত এর দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রায় শতাধিক আহত! যানচলাচল বন্ধ জনদূরভোগ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের এসকল ভ্রান্ত জাহেলদের কবল থেকে মুসলিম উম্মাহ কে হেফাজত করে সঠিক ইসলাম জানা ও বুঝার মত তৌফিক দান করুক। আমীন।
আমাদের রব আমাদের যতটা জ্ঞান দিয়েছেন, ততটুকুই আমাদের জানা; তিনি যা শেখাননি, তার কিছুই আমরা জানিনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী।

No comments:

Post a Comment