Thursday, April 2, 2015

ধূমপান একটি অপরাধ : কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে




ধূমপান একটি অপরাধ : কুরআন ও
সুন্নাহর আলোকে
ধূমপান একটি অপরাধ : কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে
আমরা সকলে জানি ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
কথাটা অনেকে সেচ্ছায় বলেন অনেকে বলেন বাধ্য
হয়ে। যাই হোক ধুমপানের ক্ষতির তুলনায় শ্লোগানটা খুবই
হাল্কা। কারণ ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর, আত্নার জন্য ক্ষতিকর, স্বভাব-
চরিত্রের জন্য ক্ষতিকর, পরিবার-পরিজন প্রতিবেশী
সমাজ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমার কাছে এর
চেয়ে বড় ক্ষতির দিক হলো ধুমপানের মাধ্যমে ইসলামের
নীতি আদর্শ লংঘন। আমি অনেক ধর্মপ্রান লোকজনকে
দেখেছি তারা ধূমপান করেন। এমনকি বাংলাদেশের
এক শহরের এক মসজিদে দেখেছি ইমাম সাহেব
নামাজের ইমামতি শেষে মসজিদে বসেই সিগারেট
ধরিয়ে পান করলেন। ঐ অঞ্চলের এক ইমাম সাহেবকে
দেখেছি জুমার দিন মসজিদের মিম্বরে বসে বক্তৃতা
দিচ্ছেন আর সিগারেট টানছেন। এ সকল ধর্মপ্রান মানুষ ও
ধর্মীয় নেতাদের যখন আপনি বলবেন ধূমপান জায়েজ নয়
তখন তারা তা মানতে চান না। অনেক যুক্তির সাথে
তারা এ টাও বলেন মক্কা শরীফের মত পবিত্র স্থানেও
ধূমপান করতে দেখেছি, যদি জায়েযই না হতো তা হলে
কি ..। মুলত এদের উদ্দেশ্যেই আমার এ লেখা।
তারা বলেন : আল-কুরআনে তো বলা হয়নি ‘তোমরা
ধূমপান করো না।’ হাদীসে রাসূলে কোথাও নেই যে,
‘ধূমপান করা যাবে না’, তা হলে ধূমপান ইসলামী
শরীয়তে নিষিদ্ধ হলো কিভাবে?
এ প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে এ
প্রবেন্ধ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﺋِﺚَ . (ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ : ১৫৭)
“তিনি তোমাদের জন্য হালাল করে দেন ভাল ও উত্তম
বস্তু আর হারাম করে দেন খারাপ ও ক্ষতিকর বস্তু।” (সুরা
আল-আরাফ : ১৫৭)
এ আয়াতের ভিত্তিতে এমমন বহু জিনিষ আছে যা হারাম
হয়েছে অথচ তা কুরআন- হাদীসে নাম ধরে বলা হয়নি।
আমরা সাপ খাই না। কেন খাই না। কুরআন- হাদীসে
কোথাও কি আছে তোমরা সাপ খেয়ো না ? নেই ঠিকই,
কিন্তু উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে তা হারাম হয়ে
গেছে। কেননা তা ক্ষতিকর ও খারাপ। ধূমপান ক্ষতিকর ও
খারাপ। এ ব্যাপারে দুনিয়ার সুস্থ বিবেক সম্পন্ন সকল
মানুষ একমত। কোন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী দ্বি-মত পোষণ
করেননি। তারপরও যদি কেহ বলেন, ধূমপান শরীয়তের
নিষিদ্ধ বস্তুর মধ্যে পড়ে না তা হলে তাকে ঐ
ডায়াবেটিস রোগীর সাথে তুলনা করা যায় যিনি
ডাক্তারের নির্দেশ মত চিনি ত্যাগ করলেন ঠিকই কিন্তু
রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ সবই খেলেন আর বললেন কই
ডাক্তার তো এ গুলো নিষেধ করেননি!
আল-কুরআনের আলোকে :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন :
ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﺋِﺚَ (ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ : ১৫৭)
“তিনি তোমাদের জন্য পবিত্র ও ভাল (তাইয়েবাত) বস্তু
হালাল করেন আর ক্ষতিকর- নোংড়া ( খাবায়িস)
জিনিষ হারাম করেন। (সূরা আল-আরাফ :১৫৭)
আর ধূমপান নিশ্চয়ই খাবায়িস এর অন্তর্ভুক্ত, তাই তা পান
করা বৈধ (হালাল) নয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ . (ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ১৯৫)
“তোমরা নিজেদের জীবন ধংশের সম্মুখীন করো
না।” (সূরা আল-বাকারা : ১৯৫)
এ আয়াতের দাবীতেও ধূমপান নিষেধ।)কেননা
ধুমপানের কারনে অনেক জীবন বিধংসী রোগ ব্যধি
হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়া হারাম করতে যেয়ে বলেন :
ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻚَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻴْﺴِﺮِ ﻗُﻞْ ﻓِﻴﻬِﻤَﺎ ﺇِﺛْﻢٌ ﻛَﺒِﻴﺮٌ ﻭَﻣَﻨَﺎﻓِﻊُ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺇِﺛْﻤُﻬُﻤَﺎ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻣِﻦْ
ﻧَﻔْﻌِﻬِﻤَﺎ . (ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ২১৯)
“তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।
বলে দিন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার মধ্যে
মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর পাপ
উপকারের চেয়ে বড়।” (সূরা আল-বাকারা:২১৯)
আল্লাহ তাআলার এ বানী দ্বারা বুঝে আসে মদ জুয়ার
মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও তা হারাম করেছেন।
তাহলে ধূমপান তো মদ জুয়ার চেয়েও জঘন্য। কারন তাতে
কোন ধরনের উপকার নেই। বরং একশ ভাগই ক্ষতি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামীদের খাদ্যের
বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন :
ﻟَﺎ ﻳُﺴْﻤِﻦُ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻐْﻨِﻲ ﻣِﻦْ ﺟُﻮﻉٍ
“এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধা ও নিবারণ
করবে না।” (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭)
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যে তা পান
কারীর পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও নেভায় না।
ধুমপানের তুলনা জাহান্নামী খাবারের সাথেই করা
যায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﺒَﺬِّﺭِﻳﻦَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺇِﺧْﻮَﺍﻥَ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ
“তোমরা অপচয় করো না। অপচয়কারীরা শয়তানের
ভাই।” (সুরা আল-ইসরা :২৭)
ধূমপান একটি অপচয়। অনেক এমন অপচয় আছে যাতে মানুষের
লাভ-ক্ষতি কিছু নেই। এগুলো সকলের কাছে অন্যায় ও
সর্বসম্মতভাবে তা অপচয় বলে গণ্য। কিন্তু ধূমপান এমন একটি
অপচয় যাতে শুধুই মানুষের ক্ষতি। কোন লাভই নেই।
হাদীসের আলোকে :
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন :
ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺮﻩ ﻟﻜﻢ ﺛﻼﺛﺎ : ﻗﻴﻞ ﻭﻗﺎﻝ ﻭﻛﺜﺮﺓ ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ﻭﺇﺿﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺎﻝ .
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদের তিনটি বিষয় ঘৃণা
করেন। ১-ভিত্তিহীন ও সনদ-সুত্র বিহীন কথা-বার্তা। ২-
অধিকহারে প্রশ্ন করা। ৩- সম্পদ নষ্ট করা।” (বুখারী ও
মুসলিম)
ধূমপানকারী ধূমপান করে সম্পদ নষ্ট করে এ ব্যাপারে
কারো দ্বি-মত নেই।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেন :
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﻓﻼ ﻳﺆﺫﻱ ﺟﺎﺭﻩ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে
যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।”
(বুখারী)
ধূমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা স্ত্রী-পরিজন,
সহযাত্রী, বন্ধু ু বান্ধব ও আশে-পার্শের লোকজনকে কষ্ট
দিয়ে থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে
ধূমপান কারীকে অভিশাপ দেন। আবার দু একজন প্রতিবাদ
করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। আমি বাসে ও
ট্রেনে বসে অনেক ধূমপানকারীকে আদবের সাথে
বলেছি ভাই সিগারেটটা শেষ করুন। আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
এতে তিনি আমার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে বকাবকি
করেছেন, আমাকে একটা গাড়ী বা ট্রেন কিনে তাতে
আলাদা ভাবে চলাফেরা করার হুকুম দিয়েছেন। আবার
এও বলেছেন “মনে হয় গাড়ীটা উনি কিনেই নিয়েছেন”।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় ও প্রমানিত
ধূমপানকারীর প্রতিবেশী শারিরিকভাবে অনুরূপ
ক্ষতিগ্রস্থ হন যে রূপ ধূমপানকারী হয়ে থাকেন।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেন :
ﺇﻥ ﺍﻟﺤﻼﻝ ﺑﻴﻦ ﻭﺇﻥ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﺑﻴﻦ ﻭﺑﻴﻨﻬﻤﺎ ﺃﻣﻮﺭ ﻣﺸﺘﺒﻬﺎﺕ ﻻ ﻳﻌﻠﻤﻬﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ،
ﻓﻤﻦ ﺍﺗﻘﻰ ﺍﻟﺸﺒﻬﺎﺕ ﻓﻘﺪ ﺍﺳﺘﺒﺮﺃ ﻟﺪﻳﻨﻪ ﻭﻋﺮﺿﻪ، ﻭﻣﻦ ﻭﻗﻊ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺒﻬﺎﺕ ﻭﻗﻊ ﻓﻲ
ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ . . .
“হালাল স্পষ্ট, এবং হারাম স্পষ্ট। এ দুয়ের মাঝে আছে
সন্দেহ জনক বিষয়াবলী। (তা হালাল না হারাম ) অনেক
মানুষই জানে না। যে ব্যক্তি এ সন্দেহ জনক বিষয়গুলো
পরিহার করল, সে তার ধর্ম ও স্বাস্থ্য রক্ষা করল। আর যে এ
সন্দেহ জনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হল সে প্রকারান্তরে
হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ল .. .. (বুখারী ও মুসলিম)
তাই যারা ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার
কোন প্রমাণাদি পাচ্ছেন না তাদের কমপক্ষে এ
হাদীসটির প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন:
ﻣﻦ ﺣﺴﻦ ﺇﺳﻼﻡ ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺗﺮﻛﻪ ﻣﺎ ﻻ ﻳﻌﻨﻴﻪ
“যে সকল কথা ও কাজ মানূষের কোন উপকারে আসে না,
তা পরিহার করা তার ইসলামের সৌন্দর্য।” (মুসলিম)
আমরা সকলেই স্বীকার করি যে ধূমপান কোন উপকারে
আসে না। বরং ক্ষতিই করে।
বাস্তবতার আলোকে :
কোন পাক ঘরে যদি জানালায় কাচ থাকে অথবা বাল্ব
থাকে তাহলে দেখা যায় ধোঁয়ার কারনে তাতে
ধীরে ধীরে কালো আবরন পড়ে। এমনি ভাবে ধূমপান
কারীর দাতে, মুখে ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরী হয়।
কাচের আবরন পরিস্কার করা গেলেও ফুসফুসের কালিমা
পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। ফলে তাকে অনেক রোগ
ব্যধির শিকার হতে হয়। একজন অধুমপায়ী ব্যক্তির চেয়ে
একজন ধুমপায়ী অধিকতর উগ্র মেজাজের হয়ে থাকেন।
সমাজে যারা বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়ায় তাদের ৯৮%
ভাগ ধূমপান করে থাকে। যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে
তাদের ৯৫% ভাগ প্রথমে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়েছে তারপর
মাদক সেবন শুরু করেছে। এমনকি ধুমপায়ী মায়ের সন্তান
উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে ( সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব
তারিখ ১৫-১২-২০০০ ইং)
সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ব বিদ্যালয়ে ৩৭৫০ জন লোকের
উপর এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে অধুমপায়ীদের চেয়ে
ধুমপায়ীদের শ্রবন শক্তি কমার সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ
বেশী থাকে। গবেষকরা আরো দেখেছেন যে, একজন
ধুমপায়ীর ধূমপানকালীন সময়ে কোন অধুমপায়ী উপস্থিত
থাকলে তারও একই সমস্যা দেখা দেবে।
(সুত্র : সাপ্তাহিক আরাফাত বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১, ১৮ই আগস্ট
২০০৩)
তাই আসূন সকলে মিলে আমরা আমাদের সমাজকে ধূমপান
মুক্ত করার চেষ্টা করি।
সমাপ্ত
লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
ﺗﺄﻟﻴﻒ: ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺷﻬﻴﺪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment