Saturday, May 23, 2015

যে সকল কারণে একজন মুসলমান ইসলামচ্যুত হয়ে যায় তথা কাফির হয়ে যায়।




যে সকল কারণে একজন মুসলমান
ইসলামচ্যুত হয়ে যায় তথা কাফির হয়ে যায়।
-----------------------------------------------------
শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন আবদুল্লাহ
ইবনে বা’য (রহ) বলেন: আল্লাহ সকল
মানুষকে ইসলামে প্রবেশ করে এর সাথে
লেগে থাকতে বলেছেন এবং ইসলামের
বিপরীত যে কোন কিছু থেকে সতর্ক
থাকতে বলেছেন। তিনি তার নবী মুহাম্মদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে
পাঠিয়েছেন মানুষকে ইসলামের পথে
ডাকার জন্য। তিনি বলেন যে যারা নবীর
অণুসরন করবে তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে এবং
যারা তার থেকে দূরে সরে যাবে তারা
বিপথগামী হবে।
কোরআনের বহু আয়াতে
তিনি ধর্মত্যাগের ব্যাপারে সতর্ক করে
দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন সকল
প্রকার শির্ক ও কুফরি থেকে।
স্কলাররা ধর্মত্যাগের ব্যাপারে
আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, একজন
মুসলিম ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয় এমন কোন
কাজ করলে যা ইসলামবিরোধী। ইসলামকে
অকার্যকর করে দেয় এমন কোন কাজ
একজন ব্যাক্তিকে ইসলামের সীমা থেকে
দূরে সরিয়ে দেয়। (ইসলামের সত্যতার
অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও
এবং তাকে পুন:পুন: স্পষ্টভাবে বুঝানো
সত্যেও) একজন ব্যাক্তি যদি ইসলামচ্যুত
তথা মূর্তাদ হয়ে যায় তবে ইসলামী
রাষ্ট্রের অধীনে তার শাস্তি হল মৃত্যুদ্ন্ড
এবং তার সম্পদ সিজ করে নেয়া । এর
মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং কমন বিষয়
হল দশটি যা মুহামাদ্দ বিন সুলেয়মান আত-
তামীমী ও অন্যান্য স্কলার দ্বারা
বর্ণিত। এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে এ বিষয়
গুলো পেশ করা হল এই আশায় যে আপনারা
ইসলামচ্যুতির ভয় থেকে নিরাপদ থাকতে
পারবেন।
১- শিরক তথা আল্লাহর সাথে তাঁর
ইবাদাতে অন্য কাউকে অংশীদার
বানানো।
“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না,
যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে।
এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে
আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর
ভ্রান্তিতে পতিত হয়”। (আন-নিসা’ ৪:১১৬)
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে
অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে
জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার
বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের
কোন সাহায্যকারী নেই”। (মা’য়িদাহ ৫:
৭২)
এর মধ্যে আছে মৃতদের কাছে, জ্বীনদের
কাছে বা কবরে প্রার্থনা করা, তাদের
সাহায্য খোজা, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে
মানত করা ও কোরবানী করা।
২- যারা আল্লাহ ও তার মধ্যে
যোগাযোগের মধ্যস্থতাকারী
(intermediary) রুপে কাউকে বা কোন
জিনিসকে বেছে নেয়, তাদেরকে
যোগাযোগের মাধ্যম হতে বলে এবং
তাদের উপরেই তার আস্থা স্থাপন করে
(অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহর কাছে চায় না
এবং নিজের ঐকান্তিকতার উপর আস্থা
স্হাপন করে না) তাদের ব্যাপারে
আলেমদের ঐক্যমত হল এই যে, এরা কাফের
৩- যারা অংশীদারস্থাপনকারীদের
(মুশরিকুন) অস্বীকারকারী(কাফির) মনে
করে না, অথবা তাদের কুফরী সন্মন্ধে
সন্দেহ পোষন করে অথবা তাদের
পদ্ধতিকেও সঠিক মনে করে তারা
কাফির।
৪- এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির
মতাদর্শ উত্তম বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত জীবন
ব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ
ভাল। যেমন, কেউ যদি বিশ্বাস করে যে,
সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, ডারউইনের
মতবাদ ইত্যাদি ইসলামের চেয়ে ভাল তবে
সে মুরতাদ হয়ে যাবে।
“বল! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও
তাঁর রাসূলকে বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা
আর অজুহাত দাড় করো না, তোমরা তো
ঈমান আনার পর কুফরী করেছ।” (সূরা আত-
তাওবা: ৬৫-৬৬)
“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য
কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়,
তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে
ভালবাসেন না’ (সূরা আলে-ইমরান: ৩২)
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই
আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে
আমি তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক
করে প্রেরণ করিনি’ (সূরা নিসা: ৮০)
“যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের
ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন
পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে
ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷
আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে
লিপ্ত হয়৷ (আহযাব ৩৬)
৫- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর নির্দেশিত কোন বিষয়কে
মনে মনে ঘৃণা করা যদিও সে তা পালন
করে। যেমন, কেউ যদি দাঁড়ি, পর্দা
ইত্যাদিকে মনে মনে অপছন্দ করে তবে সে
মুসলমান থাকবেনা। কারণ, এগুলো
ইসলামের আবশ্যপালণীয় নির্দেশ।
কেননা আল্লাহ বলেন:
“এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল
করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব,
আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে
দিবেন” (মুহাম্মাদ ৪৭: ৯)
আবু হুরাইরা রাযি. নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণনা করেন যে,
“আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে যাবে।
তবে যে অস্বীকার করে সে নয়।
সাহাবায়ে কেরাম বললেন,
অস্বীকারকারী কে? নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আমার
অনুকরণ করল সে জান্নাতে যাবে। আর যে
আমার নাফরমানী করল, সে-ই
অস্বীকারকারী’ (বুখারী)
► আল্লাহ বলেনঃ
“হে নবী! আপনার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট
এবং মু’মিনদের মধ্য থেকে যারা
আপানাকে অনুসরণ করে তাদের
জন্য।” [সূরা আনফালঃ ৬৪]
৬- নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) প্রচারিত ধর্মের যে কোন বিষয়
নিয়ে কেউ যদি মজা করে, অথবা পুরস্কার
ও শাস্তি সম্পর্কিত যে কোন বক্তব্য
নিয়ে টিটকারী দেয় বা দুষ্টুমি করে, সে
কাফির। এর প্রমাণ হল নিচের আয়াতটি:
“আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস
কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার
কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম।
আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে,
তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর
রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর
না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান
প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন
কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে
দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও
দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার” (আত
তাওবাহ ৯:৬৫-৬৬)
৭- যাদুবিদ্যা – একজন ব্যক্তিকে
আরেকজনের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়ার
জন্য বা একজন ব্যক্তির সাথে অন্য
ব্যক্তির ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য যাদু
করা এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যে ব্যক্তি
এগুলো করবে বা এগুলোর সমর্থন করবে সে
কাফির। কেননা:
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা
সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা
আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি;
শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে
জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও
মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ
হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই
একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না
যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি
কাফের হয়ো না”। (বাকারাহ ২: ১০২)
৮- মুশরিকদের সমর্থন দেয়া এবং
মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে
সহযোগিতা করা। এর প্রমাণ হল এ
আয়াতটি যেখানে আল্লাহ বলেন:
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও
খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো
না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের
মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে
তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ
জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন
না” (মা’য়িদাহ ৫:৫১)
৯- যারা বিশ্বাস করে যে কিছু
ব্যক্তিদের মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আইনের
বাইরে কাজ করার অনুমতি আছে যেমন
অনুমতি ছিল মুসা (আ) এর আইনের বাইরে
খিযির (আ) এর কাজ করার, তারা
কাফির। কেননা আল্লাহ বলেন:
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম
তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা
হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত”
। (ইমরান ৩: ৮৫)
১০- আল্লাহর মনোনীত ধর্ম থেকে দূরে
সরে যাওয়া বা মুখ ফিরিয়ে নেয়া,
এটাকে না শেখা এবং এর অনুসারে জীবন
যাপন না করা। এর প্রমান হল:
“যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার
আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়,
অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,
তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি
অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব” (সেজদাহ
৩২:২২)
এ সকল কর্মকান্ড একজন ব্যক্তির জীবনে
ইসলামকে অকার্যকর করে দেয় তা সে
কৌতুক করেই থাকুক বা নিষ্ঠাবান হয়েই
করুক বা হোক সে ধর্মভীরু। যদি তাকে
বাধ্য না করা হয়ে থাকে সে ইসলাম
থেকে খারিজ হয়ে যাবে। উপরের
প্রত্যেকটি অত্যন্ত সাঙ্ঘাতিক এবং এ
ধরণের ঘটনা অনেক হয়ে থাকে।
মুসলিমদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা
এবং এই অপরাধগুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়ার
ভয়ে ভীত থাকা উচিৎ। আল্লাহর কাছে
আমরা এ বিষয়গুলো থেকে নিরাপদে
থাকার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করি এবং
সাহায্য প্রার্থনা করি তার ক্রোধ ও
কঠিন শাস্তি থেকে। মুহাম্মদ (সা) ও তার
পরিবারের উপর এবং তার সহযোগীদের
উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
উপরিউক্ত ৪ নং পয়েন্টে তারাও
অন্তর্ভূক্ত যারা বিশ্বাস করে যে
ইসলামী শরীয়াহ ব্যতীত অন্য কোন
মানবরচিত বিধান বা মতবাদ বেশী
কল্যাণকর অথবা সমকক্ষ; অথবা এটা
বিশ্বাস করে যে, ইসলামী শরীয়াহর
আশ্রয় নেয়া উত্তম জানা সত্ত্বেও অন্য
কোন আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ আছে;
অথবা মনে করে যে একবিংশ শতাব্দীতে
ইসলামীক সিস্টেম প্রয়োগ করা সম্ভব নয়;
অথবা মনে করে যে মুসলিমদের
পশ্চাৎপদতার জন্য ইসলাম দায়ী; অথবা
মনে করে যে এটা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির
ব্যাক্তিগত ইবাদতে সীমাবদ্ধ তার
জীবনের অন্য কোন পর্যায়ে এটা মানা
প্রয়োজন নাই।
উপরিউক্ত ৪ নং পয়েন্টে আরও অন্তর্ভূক্ত
হল যারা মনে করে, আল্লাহর হুকুম পালন
করতে গিয়ে চোরের হাত কাটা বা
বিবাহিত ব্যাভিচারীকে পাথর মেরে
হত্যা করা আধুনিক যুগে যথাযথ নয়।
এর মধ্যে আরও আছে, তারা যারা মনে
করে যে শারীয়াহর আইন অন্য যে কোন
আইন থেকে উত্তম অথচ বিশ্বাস করে যে
এরপরও অন্য আইন অনুযায়ী শাসন করার
সুযোগ আছে, কেননা এভাবে সে সেটাকে
হালাম মনে করল যেটা আলেমদের ঐক্যমত
অনুযায়ী আল্লাহ হারাম করেছেন।
আল্লাহর কাছে আমরা এ বিষয়গুলো
থেকে নিরাপদে থাকার জন্য সাহায্য
প্রার্থনা করি এবং সাহায্য প্রার্থনা
করি তার ক্রোধ ও কঠিন শাস্তি থেকে।
মুহাম্মদ (সা) ও তার পরিবারের উপর এবং
তার সহযোগীদের উপর আল্লাহর রহমত
বর্ষিত হোক।

No comments:

Post a Comment