Wednesday, May 20, 2015

" রাসুলুল্লাহ (সা) এর সালাতের সুন্নতী ক্বিরাআত " (ফজর,যোহর,আছর,মাগরেব,এশা)




" রাসুলুল্লাহ (সা) এর সালাতের সুন্নতী ক্বিরাআত " (ফজর,যোহর,আছর,মাগরেব,এশা) =====================================================
"ফজরের সালাতের সুন্নতী ক্বিরাআত"
-----------------------------------------
নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) ফজরের নামাযে ‘ত্বিওয়ালে মুফাস্‌স্বাল’ পাঠ করতেন।
তিনি কখনো কখনো সূরা ওয়া-ক্বিআহ বা অনুরুপ সূরা পাঠ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১০৯পৃ:)
বিদায়ী হজ্জের এক ফজরের নামাযে তিনি সূরা তূর পাঠ করেছেন। (বুখারী ১৬১৯ নং)
কখনো বা তিনি সূরা ক্বাফ বা অনুরুপ সূরা প্রথম রাকআতে পাঠ করতেন।
(মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৮৩৫ নং)
কখনো কখনো সূরা তাকবীর (ইযাশ্‌ শামসু কুউবিরাত) পাঠ করতেন। (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৮৩৬ নং)
একদা ফজরে তিনি সূরা যিলযালকে উভয় রাকআতেই পাঠ করেন। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, ‘কিন্তু জানি না যে, তিনি তা ভুলে পড়ে ফেলেছেন, নাকি ইচ্ছা করেই পড়েছেন।’ (আবূদাঊদ, সুনান, বায়হাকী,
মিশকাত ৮৬২ নং) সাধারণত: যা বুঝা যায় তা এই যে, মহানবী (সাঃ) ঐরুপ বৈধতা বর্ণনার উদ্দেশ্যেই ইচ্ছা করেই (একই সূরা উভয় রাকআতে পাঠ) করেছেন। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১১০পৃ:)
এক সফরে তিনি ফজরের প্রথম রাকআতে সূরা ফালাক্ব ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা নাস পাঠ করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১৪৬২, নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে আবী শাইবা,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৫৬৭, আহমাদ, মুসনাদ ৪/১৪৯, ১৫০, ১৫৩, মিশকাত ৮৪৮ নং)
উক্ববাহ্‌ বিন আমের (রাঃ) কে তিনি বলেছেন, “তোমার নামাযে সূরা ফালাক্ব ও নাস পাঠ কর। (উভয় সূরায় রয়েছে বিভিন্ন অনিষ্টকর বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা।) কারণ এই দুই (প্রার্থনার) মত কোন প্রার্থনা দ্বারা কোন প্রার্থনাকারী আশ্রয় প্রার্থনা করে নি।” (আবূদাঊদ, সুনান, ১৪৬৩, আহমাদ, মুসনাদ, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১১০পৃ:)
আবার কখনো কখনো এ সবের চেয়ে লম্বা সূরাও পাঠ করতেন। এই নামাযে তিনি এক রাকআতে অথবা উভয় রাকআতে ৬০ থেকে ১০০ আয়াত মত পাঠ করতেন। (বুখারী ৭৭১ নং, মুসলিম, সহীহ)
কখনো তিনি সূরা রুম পাঠ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, বাযযার)
কখনো পাঠ করতেন সূরা ইয়াসীন। (আহমাদ, মুসনাদ, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১১০পৃ:)
একদা মক্কায় ফজরের নামাযে তিনি সূরা মু’মিনূন শুরু করলেন, অতঃপর মূসা ওহারুন অথবা ঈসা (আঃ) এর বর্ণনা এলে (অর্থাৎ উক্ত সূরার ৪৫ অথবা ৫০ আয়াত পাঠের পর) তাঁকে কাশিতে ধরলে তিনি রুকূতে চলে যান। (বুখারী, বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/২৯৮, মুসলিম, মিশকাত ৮৩৭নং)
আবার কখনো কখনো তিনি সূরা স্বা-ফফাত পাঠ করে ইমামতি করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূ য়্যা’লা, মাক্বদেসী, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১১১পৃ:)
জুমআর দিন ফজরে তিনি প্রথম রাকআতে সূরা সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা দাহ্‌র পাঠ করতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮৩৮ নং)
হযরত উসমান (রাঃ) ফজরের নামাযে অধিকাংশ সময়ে সূরা ইউসুফ ও সূরা হজ্জ ধীরে ধীরে পাঠ করতেন। অবশ্য তিনি ফজর উদয় হওয়ার সাথে সাথেই নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। (মালেক, মুঅত্তা ৩৫, মিশকাত ৮৬৪ নং)
"যোহরের সালাতের সুন্নতী ক্বিরাআত"
-----------------------------------------
যোহরের (প্রথমকার) উভয় রাকআতে ৩০ আয়াত মত অথবা সূরা সাজদাহ পাঠ করার মত সময় কুরআন পাঠ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, মিশকাত ৮২৯ নং)
কখনো তিনি সূরা ত্বা-রিক্ব, বুরুজ, লাইল বা অনুরুপ কোন সূরা পাঠ করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৮০৫, ৮০৬, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ) আবার কখনো কখনো পড়তেন সূরা ‘ইযাস সামা-উন শা ক্বা ত’ বা অনুরুপ কোন সূরা। (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৫১১নং)
সাহাবাগণ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর দাড়ি হিলা দেখে তাঁর ক্বিরাআত পড়া বুঝতে পারতেন।
(বুখারী ৭৬০, আবূদাঊদ, সুনান ৮০১ নং)
কখনো কখনো তিনি মুক্তাদীগণকে আয়াত (একটু শব্দ করে পড়ে) শুনিয়ে দিতেন।
(বুখারী,মুসলিম, সহীহ ৮২৮)
কখনো কখনো সাহাবাগণ (রাঃ) তাঁর নিকট হতে যোহরের নামাযে সূরা আ’লা ও গাশিয়াহ্‌র সুর শুনতে পেতেন। (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৫১২নং)
কখনো কখনো তিনি যোহরের ক্বিরাআত এত লম্বা করতেন যে, নামায শুরু হওয়ার পর কেউ কেউ বাকী’ [মহানবী (সাঃ) এর আমলে মদীনার পূর্বে এবং বর্তমানে মসজিদে নববীর পূর্ব দিকে অনতি দূরে অবস্থিত খালি জায়গা। বর্তমানে কবরস্থান] গিয়ে পায়খানা ফিরে এসে নিজের বাড়িতে ওযু করে যখন মসজিদে আসত, তখনও দেখত মহানবী (সাঃ) প্রথম রাকআতেই আছেন।
(মুসলিম, সহীহ ৪৫৪ নং, বুখারী জুযউল ক্বিরাআহ্‌)
এ ব্যাপারে সাহাবাগণের ধারণা এই ছিল যে, তিনি সকলকে প্রথম রাকআত পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এত লম্বা ক্বিরাআত পড়তেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৮০০ নং, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ)
"আসরের সালাতের সুন্নতি কিরাআত"
-----------------------------------------
আসরের নামাযে নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) প্রায় ১৫ আয়াত পাঠ করার মত ক্বিরাআত করতেন। যোহরের প্রথম দু’ রাকআতে যতটা পড়তেন তার অর্ধেক পড়তেন আসরের প্রথম দু’ রাকআতে।
তিনি এ নামাযেও পড়তেন, সূরা আ’লা ও সূরা লাইল। (মুসলিম, মিশকাত ৮৩০ নং) সূরা ত্বারিক্ব ও বুরুজ। (আবূদাঊদ, সুনান ৮০৫ নং) এতেও তিনি কখনো কখনো মুক্তাদীদেরকে আয়াত শুনিয়ে দিতেন।
(পরবর্তিতে মাগ্ রিব,এশা ও জুমাহ সালাতের সুন্নতি কিরাআত সমুহ দেয়া হবে,ইনশাআল্লাহ)
মাগরেবের নামাযে সুন্নতী ক্বিরাআত
------------------------------------------
মাগরেবের নামাযে কখনো কখনো তিনি ‘ক্বিসারি মুফাস্‌স্বাল’ থেকে পাঠ করতেন।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮৫৩ নং)
এই সংক্ষেপের ফলেই সাহাবাগণ যখন নামায পড়ে ফিরতেন তখন কেউ তীর ছুঁড়লে তাঁর তীর পড়ার স্থানটিকে দেখেতে পেতেন। কারণ, তখনও বেশ উজ্জ্বল থাকত। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৫৯৬ নং)
কখনো সফরে তিনি এর দ্বিতীয় রাকআতে সূরা তীন পাঠ করেছেন।
(ত্বায়ালেসী, আহমাদ, মুসনাদ, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১১৫ পৃ:)
কখনো বা তিনি ‘ত্বিওয়ালে মুফাস্‌স্বাল’ ও আওসাত্বে মুফাস্‌স্বাল’-এর সূরাও পাঠ করতেন।
কখনো পড়তেন সূরা মুহাম্মাদ। (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ত্বাবারানী, মু’জাম, মাক্বদেসী, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১১৬ পৃ:) কখনো পাঠ করতেন সূরা তূর। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮৩১ নং)
তিনি তাঁর জীবনের শেষ মাগরেবের নামাযে পাঠ করেছেন সূরা মুরসালাত।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮৩২ নং)
কখনো উভয় রাকআতেই পড়েছেন সূরা আ’রাফ।
(বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৮৪৭ নং)
কখনো বা সূরা আনফাল। (ত্বাবারানী, মু’জাম, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১১৬ পৃ:)
এশার নামাযে সুন্নতী ক্বিরাআত
--------------------------------------
এশার নামাযে তিনি ‘আওসাত্বে মুফাস্‌স্বাল’-এর সূরা পাঠ করতেন।
(নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৮৫৩ নং) কখনো পড়তেন, সূরা শামস বা অনুরুপ অন্য কোন সূরা। (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান ৩০৯ নং) কখনো সূরা ইনশিক্বাক্ব পড়তেন এবং এর সিজদার আয়াতে তিনি তিলাওয়াতের সিজদা করতেন। (বুখারী ৭৬৬, মুসলিম, নাসাঈ, সুনান)
কখনো পাঠ করতেন সূরা তীন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮৩৪ নং)
তিনি মুআয (রাঃ) কে এশার ইমামতিতে লম্বা ক্বিরাআত পড়তে নিষেধ করে বলেছিলেন, “তুমি কি লোকদেরকে ফিতনায় ফেলতে চাও হে মুআয? তুমি যখন ইমামতি করবে তখন ‘অশ্‌শামসি অযযুহা-হা, সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা, ইক্বরা বিসমি রাব্বিকা, অল্লাইলি ইযা য়্যাগশা’ পাঠ কর। কারণ তোমার পশ্চাতে বৃদ্ধ, দুর্বল ও প্রয়োজনে উদগ্রীব মানুষ নামায পড়ে থাকে।
(বুখারী, মুসলিম, না, মিশকাত ৮৩৩ নং)
*** গ্রন্থঃ "স্বালাতে মুবাশ্‌শির"

No comments:

Post a Comment