Tuesday, June 9, 2015

মনে শান্তি পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ।




কোন মানুষই দাবি করে বলতে পারে না
যে , তার জীবনে সমস্যা নেই। সম্পূর্ণ
রোগহীন দেহ ও সমস্যামুক্ত জীবন
অবাস্তব কথা। জীবন আপদ বিপদ ও
সমস্যার অন্ত নেই। জীবনের আর এক
নামই সমস্যা। জীবন সংগ্রাম মানেই
হলো জীবন সমস্যার সমাধানের
প্রচেষ্টা চালানো। সমস্যা আছে এবং
থাকবে জেনেই সমাধানের চেষ্টা
চালাতে হয়।
দুশ্চিন্তা কাকে বলে? দুঃখ দৈন্য, আপদ
বিপদ ও দুটনার ফলে যে পরিস্তিতির
সৃষ্টি হয় তা থেকে উদ্ধারের পথ
পাওয়ার জন্য যে পেরেশানী ও
অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এরই নাম দুশ্চিন্তা।
হায় আমার কী হবে? বাঁচার কোন উপায়ই
দেখছি না। এর পরিণতি কী? এ জাতীয়
চিন্তাকেই দুশ্চিন্তা বলে। দুশ্চিন্তা এমন এক রোগ যে একে প্রশ্রয় দিলে চরম হতাশা সৃষ্টি হতে পারে। হতাশার চরম পর্যায়ে মানুষ আত্মহত্যা করার মতো চরম দুর্বলতা ও প্রদর্শন করে বসে।
দুশ্চিন্তা সমস্যার সমাধানে সামান্য
সাহায্য ও করে না বরং সমস্যাকে আরও
জটিল করে । ধীরে চিত্তে ও স্থির
মস্তিষ্কে সমাধান তালাশ করতে হয়।
অস্থির চিত্ত কখনও সমাধান খুঁজে পায়
না। দুশ্চিন্তা চিন্তার ভারসাম্য বিনষ্ট
করে বলে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছায়
না। এমনকি এ রোগ কোন নির্দিষ্ট
পথকেই চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করতে দেয়
না। এক একবার এক এক রকম পথ ধরার
চেষ্টা হলো চিন্তার বিকৃতি।
আল্লাহতায়ালা তাঁর মুমিন বান্দাহ
দেরকে দুশ্চিন্তার মুসীবত থেকে রক্ষার
জন্য এমন কতক মূলনীতির কথা ঘোষণা
করেছেন যা মেনে নিলে শত মুসীবতেও
মানসিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলা
সম্ভবঃ
১.আল্লাহর বিনা অনুমতিতে কোন মুসীবত
আসে না। যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে
আল্লাহ তার কালবকে হেদায়াত দান
করেন। (সূরা আত তাগাবুন: ১১ আয়াত)
ব্যাপার এমন নয় যে, কোন বিপদ আল্লাহ
ঠেকাতে পারলেন না বলে এসে গেল।
বরং আল্লাহ বিপদ দেবার সিদ্ধান্ত
করলেই তা আসে। যদি কেউ এ কথা
বিশ্বাস করে তাহলে সে অস্থির না হয়ে
ধৈর্যধারণ করবে এবং বিপদ থেকে
উদ্ধার করার জন্য আল্লাহর দরবারেই
ধরণা দেবে। আল্লাহর উপর সঠিক আস্থা
ও বিশ্বাস থাকলে বিপদের সময় কেমন
আচরণ করতে হবে সে বিষয়ে আল্লাহ
সঠিক হেদায়াত দান করেন।
মুসীবত থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা
করাও কর্তব্য । শান্ত মনে ভেবে-চিন্তে
চেষ্টা তদবীর করতে হবে । সঠিক
পদ্ধতিতে যাতে তদবীর করা যায় সে
জন্য কাতরভাবে দোয়াও করতে হবে।
কোন তদবীর ফলপ্রসু না হলেও হতাশ না
হয়ে মহান মনিবের নিকটই সঠিক পথ
চাইতে হবে।
১.'হে রাসূল আল্লাহ যদি আপনার উপর
কোন মুসীবত দেন তাহলে তিনি ছাড়া
তা দূর করার ক্ষমতা আর কারো নেই।
(সূরা ইউনুস : ১০৭ আয়াত)
যত চেষ্টা তদবীরই করা হোক মুসীবত
থেকে উদ্ধার করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নেবার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে
। এ অবস্থায় অস্থির হওয়া, হতাশা
প্রকাশ করা বা আল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট
হবার দ্বারা মানসিক যন্ত্রণা পাওয়া
ছাড়া আর কোন লাভ হয় না।
২. 'আল্লাহর উপর ভরসা করাই মুমিনদের
কর্তব্য' এ কথাটি বিভিন্ন ভঙ্গিতে বহু
সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে ।
আল্লাহতায়ালা তার মুমিন
বান্দাদেরকে বার বার তাকিদ
দিয়েছেন যে, তোমরা একমাত্র আমার
উপর ভরসা কর । জায়েজ পথে চেষ্টা
তদবীর অবশ্যই করতে থাক। তবে ঐ
তদবীরের উপর আসল ভরসা যেন না হয় ।
তাহলে হতাশায় ভুগতে বাধ্য হবে।
আসলে আল্লাহর উপর আস্থা রাখাই হলো
ভরসা বা তাওয়াক্কুল । মুমিন কোন
অবস্থাতেই আল্লাহর উপর আস্থা হারায়
না। এ আস্থা রাখতেই হবে যে, আমার
মেহেরবান আল্লাহ আমার মঙ্গল করবেন।
যদিও আমি বুঝতে পারছি না যে, আমার
মুসীবতের মাধ্যমে কী মঙ্গল হতে পারে।
তবে এ আস্থা আছে যে, আল্লাহ অমঙ্গল
করেন না । বিতরের নামাযে দোয়ায়ে
কুনুতে এ অবস্থার কথাই আমরা রোজ
ঘোষণা করি এ ভাষায়ঃ
'হে আল্লাহ তোমার উপর ঈমান এনেছি ,
তোমার উপর ভরসা করেছি এবং তুমি
মঙ্গলময় বলেই আমি প্রশংসা করি।
অর্থাৎ তুমি যা কিছুই কর তাতে আমার
মঙ্গল হবে বলেই বিশ্বাস করি । এ
বিশ্বাস ছাড়া হতাশায় যাতনা থেকে
মুক্তির কোন উপায় নেই। যারা ঈমানদার
তারা আল্লাহকে স্মরণ করেই অন্তরে
সান্ত্বনা ও প্রশান্তি লাভ করে। জেনে
রাখ একমাত্র আল্লাহর যিকরেই অন্তর
সন্ত্বনা লাভ করে।' (সূরা আর রাদ: ২৮
আয়াত)
হাজারো মুসীবতের মধ্যে ও আল্লাহকে
ডেকে তার দরবারে ধরণা দিয়ে এবং
তার নিকট আশ্রয় চেয়েই মনে শান্তি
লাভ করা সম্ভব । সূরা আল ফাতিহায়
'একমাত্র তোমারই দাসত্ব করি এবং
একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই'
বলার উদ্দেশ্য ও তারই আশ্রয় কামনা
করা।
ঈমানদারদের জন্য দুশ্চিন্তা অত্যন্ত
মারাত্মক রোগ। কারণ আল্লাহপাক
বিপদ মুসীবত সম্পর্ক কুরআনে যে ধারণা
দিয়েছেন, তা বিশ্বাস করলে দুশ্চিন্ত
থাকার কথা নয় । ঈমানের দাবিদার
হয়েও দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় দিলে ঐ ৪টি
মূলনীতিকেই অবিশ্বাস ও অগ্রাহ্য করা
হয় । তার দুশ্চিন্তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে,
১. আমার উপর এই মুসীবত দিয়ে আল্লাহ
আমার উপর অবিচার করেছেন। এটা করা
মোটেই উচিত হয়নি।
২. এ মুসীবত থেকে নিষকৃতি পাওয়ার
জন্য আল্লাহর দয়ার অপেক্ষা করার
ধৈর্য আমার নেই। আমাকেই কিছু করতে
হবে এবং যেমন করেই হোক এ থেকে
উদ্ধার পেতে হবে।
৩. এ মুসীবতের মধ্যেও আমার জন্য কোন
মঙ্গল থাকতে পারে তা আমি স্বীকার
করি না। যারা আমার এ মুসীবতের জন্য
দায়ী তাদেরকে আমি ক্ষমা করব না।
সুযোগ পেলেই দেখে নেব।
৪. সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করেই
মনে শান্তি পেতে হবে বলে যে কথা
বলা হয়, তা কী করে সম্ভব? আমার মনে
যাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে তা আমি
কেমন করে ভুলব? আর আল্লাহকে এত
ডেকেই বা কী হবে? আল্লাহ সাড়া
দিচ্ছে না। আর কত ডাকব? এ ভাবে
দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় দিলে ঈমান
হারাবারেই আশংকা রয়েছে।
তাই দুশ্চিন্তা থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্য
আল্লাহর শেখানো নিয়মে মনকে
ইতিবাচক কাজ দিন । তাহলে দুশ্চিন্তা
মনকে ভারাক্রান্ত করার সুযোগ পাবে
না। দুশ্চিন্তা মারাত্মক তৃপ্তির সাথে
খেতেও দেয় না। ফলে দৈহিক ও
স্নায়ুবিক বিরাট ক্ষতির সাধন করে।
দুশ্চিন্তার ফলে অনেক সময় নিজের
উপরই রাগ হয়। মুসীবতের জন্য অন্যদেরকে
দায়ী করলে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
সৃষ্টি হয়। এমনকি দুশ্চিন্তা আল্লাহর
উপরও অসন্তুষ্ট হতে বাধ্য করে। আল্লাহর
প্রতি অভিমান বশে আল্লাহকে নির্দেশ
দেয় যে- হয় এটা কর, না হয় ওটা কর । এ
সবের কোনটাই সুস্থ মনের পরিচায়ক নয়
আল্লাহর উপর পূর্ণ আত্মসমপর্ণই
দুশ্চিন্তা থেকে নিস্তার পাওয়ার
একমাত্র উপায়। দুশ্চিন্তার মাধ্যমে
শয়তান আপনার উপর রাজত্ব করছে ।
শয়তানকে উৎখাত করে আল্লাহর রাজত্ব
মনের মধ্যে কায়েম করুন । মনে শান্তি
পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ।

No comments:

Post a Comment