Wednesday, June 10, 2015

কুলক্ষণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,




আসসালামুলাইকুম
কুলক্ষণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَإِذَا جَاءتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هَذِهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوْا بِمُوْسٰى وَمَنْ مَّعَهُ﴾ 
(الأعراف:১৩১) 
অর্থঃ “যখন তাদের (ফের‘আঊন ও তার প্রজাদের) কোন কল্যাণ দেখা দিত তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যখন কোন অকল্যাণ দেখা দিত, তখন তারা মূসা ও তাঁর সাথীদেরকে এই কুলক্ষণের কারণ হিসাবে গণ্য করত” (আল-আ‘রাফ,১৩১)। আরবের মুশরিকরা যাত্রা ইত্যাদি কাজের প্রথমে পাখি উড়িয়ে দিয়ে তার মাধ্যমে শুভাশুভ নির্ণয় করত। পাখি উড়ে ডাইনে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে তারা নেমে পড়ত। আর পাখি উড়ে বামে গেলে তাকে অশুভ মনে করে সে কাজ থেকে বিরত থাকত। 
এভাবে শুভাশুভ নির্ণয়ের বিধান প্রসঙ্গে মহানবী (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) বলেন, اَلطِّيَرَةُ شِرْكٌ" " 
অর্থ “কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শির্ক” (মুসলিম, হাদীছ নং ২৯৮৫)। 
মাস, দিন, সংখ্যা, নাম ও প্রতিবন্ধী ইত্যাদিকে দুর্ভাগ্য বা অশুভ প্রতীক হিসাবে চিিহ্নত করাও তাওহীদ পরিপন্থী হারাম আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত। যেমন অনেক দেশে হিজরী সনের সফর মাসকে ও প্রতি মাসের শেষ বুধবারকে চিরস্থায়ী কুলক্ষণ মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে আজ ১৩ সংখ্যাকে ‘কুলক্ষণে ১৩’ বা টহষঁপশু ঃযরৎঃববহ বলা হয়। আর কেউ যদি ১৩ ক্রমিক নম্বর একবার পড়ে যায় তাহ’লে তার দুশ্চিন্তার আর সীমা থাকে না। অনেকে কানা-খোড়াঁ, পাগল ইত্যাদি প্রতিবন্ধীদেরকে কোন কাজের শুরুতে দেখতে পেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। অনেকেরই দোকান খুলতে গিয়ে এমনিধরণের কোন কানা-খোঁড়াকে দেখতে পেলে তার আর দোকান খোলা হয় না। অথচ এজাতীয় আক্বীদা পোষণ করা শিরক তথা হারাম। এজন্য যারা কুলক্ষণে বিশ্বাসীÑ রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) তাদেরকে তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেননি। এমর্মে রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) বলেছেন, 
"لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ وَلاَ تُطُيِّرَلَهُ وَلاَ تَكَهَّنَ وَلاَ تُكُهِّنَ لَهُ (وَأَظُنُّهُ قَالَ) أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ" 
( الطبراني, كبير ১৮/১৬২, صحيح الجامع ح/৫৪৩৫). 
অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি কুলক্ষণে বিশ্বাস করে এবং যার জন্য কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। আর যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে এবং যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) আরোও বলেছিলেন যে,) অথবা যে ব্যক্তি যাদু করে আর যার কারণে যাদু করা হয় সেই সমস্ত ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়” (ত্বাবারানী, কাবীর ১৮/১৬২, ছহীহুল জামে হাদীছ নং ৫৪৩৫)। 
প্রকাশ থাকে যে, কেউ কোন বিষয়ে কুলক্ষণ গ্রহণ করে থাকলে তাকে অবশ্যই এজন্যে কাফফারা আদায় করতে হবে। কাফফারা বলতে এখানে কোন অর্থ বা টাকা-পয়সা কিংবা ইবাদত নয়; বরং পাপ মোচনকারী একটি দু‘আÑ যা আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) একদা বলেছিলেন যে, “যদি কুলক্ষণ কোন ব্যক্তিকে কোন কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, তাহলে নিশ্চয়ই সে র্শিক করল। এ কথা শুনে ছাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) তাহ’লে তার কাফফারা কী হবে? উত্তরে রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) বলেছিলেন, ঐ ব্যক্তি বলবে, 
"اَللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرَكَ وَلاَ طِيَرَ إلاَّ طِيَرَكَ وَلاَ إلَهَ غَيْرُكَ" 
(أحمد ২/২২০, سلسله صحيحه ح/১০৬৫ ). 
উচ্চারণ ঃ ‘আল্লাহুম্মা লা-খায়রা ইল্লা-খায়রুকা অ লা-ত্বিয়ারা ইল্লা ত্বিয়ারুকা অলা- ইলা-হা গায়রুকা’। অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া আর কোন কল্যাণ নেই। আর আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া আর কোন কুলক্ষণ নেই। আর একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই” (আহমাদ ২/২২০, সিলসিলা ছহীহা হাদীছ ১০৬৫)। 
তবে সুলক্ষণ ও কুলক্ষণের ধারণা মানুষের মনে জন্ম নেয়া এটা মানুষের স্বভাবগত ব্যাপার, যা কোন সময় বাড়ে আর কোন সময় কমে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলোঃ মহান আল্লাহর উপর পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল করা অর্থাৎ ভরসা করা। যেমন এ প্রসঙ্গে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেছেন,
"وَمَا مِنَّاإِلاَّ (أىْ إلاَّ وَيَقَعُ فِيْ نَفْسِهِ شَىْءٌ مِّنْ ذَلِكَ) وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ" 
(أبوداود ح/ ৩৯১০, سلسله صحيحه ح/ ৪৩০). 
অর্থঃ “আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, যার মনে কুলক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কিছুই উঁকি দেয় না। কিন্তু তাওয়াক্কুল (একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা এর) দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তা দূর করে দেন” (আবূ-দাঊদ হাদীছ নং ৩৯১০, সিলসিলা ছহীহাহ হাদীছ নং ৪৩০)।

No comments:

Post a Comment