Monday, September 21, 2015

**ফরয সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত**



Daily Al-Hadith আল-হাদীস প্রতিদিন's photo.


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ !
আমাদের সমাজে যতগুলি বিদ’আত* প্রচলিত আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফরয সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত। এই সম্মিলিত মুনাজাতের দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পাওয়া যায় না । কোন কোন বিদ’আত বছরে একবার করা হয় , কোন কোনটি হয়ত মাসে একবার , কোন কোনটি হয়তো সপ্তাহে একবার । কিন্তু সম্মিলিত মুনাজাত এমন এক বিদ’আত যা প্রতিদিন পাঁচবার করা হয় । সুতরাং এর থেকে দুরে থাকতে হবে ।
হাদীসে বর্ণিত ফরয সালাতের পর পঠিতব্য দুআ ও যিকিরগুলো একাকী পড়তে হবে , দলবদ্ধভাবে নয় । দুঃখজনক হলেও সত্য যে , ভারত বর্ষের প্রায় সকল মুসলিম জনগণ (আলিম ও সাধারণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সালাতের পর পঠিতব্য দুআর তালিকাটি আংশিক বা পুরোপুরি বাদ দিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন দুআ নির্বাচন ও সংযুক্ত করেছে। এর সাথে আরো যোগ করেছে দলবদ্ধ ও সম্মিলিত রুপ । ফলে সালাতের পরে দুআর নামে সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে অনেকগুলো সুন্নাত উৎখাত হয়েছে ।
ফরয সালাতের পর সর্বদা ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দু’আ করা; এটা না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত , না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । ফরয সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই । না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত , না হাদীস সমূহ দ্বারা , সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক ।
চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না; আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে। এ দু’আ অবশ্যই বিদ’আত, কারণ একথা সর্বজন বিদিত যে , রাসূল সাঃ , সাহাবীগণ ও তাবেঈগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে ফরয সালাতের পর হাত উঠিয়ে কখনো দু’আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ‘আলিমগণ করেননি এবং বর্তমানেও করেন না । কাজেই এটি স্পষ্ট বিদ’আত ।
সালাত ফরয হওয়ার পর প্রায় ১৮০০০ ওয়াক্ত সালাত রাসুলুল্লাহ (সা) নিজে ঈমাম হিসেবে আদায় করেন। এক ওয়াক্ত সালাতের পরও রাসুল (সা) সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন- এর কোন প্রমাণ নেই। এমনকি একটি জাল হাদীসও নেই। তাই এ আমল অবশ্যই বর্জনীয়- কেননা তা বিদ'আত।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করার তাওফীক দান করুন – আমীন !!
*বিদআত: ইসলামি পরিভাষায় বিদআত হল আল্লাহ‌র দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন সাধারণ কিংবা সুনির্দিষ্ট দলীল নেই। দলীল বলতে আল কুর’আন এবং সহিহ হাদিস বুঝায়। বিদআত পাপের তালিকায় অনেক বড় পাপ, শিরকের পরেই এর স্থান। এর কারণ বিদআত করা মানে আল্লাহকে খুশি করতে এমন কিছু করা যা রসুলুল্লাহ (সাঃ) করেননি অথবা করতে বলেননি। সহজভাবে বললে, ইসলামে নব্য কোন কিছুর আবিস্কারই হল বিদ’আত। …যে আমলটি বা আকীদা কুরআন ও সহীহ হাদিসের দলিল দ্বারা প্রমানিত নয় সেটা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসূল সাঃ বলেন, “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্‌র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে)
**সালাত শেষে যে সকল দুআ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত**
এখানে সালাত শেষে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল দু‘আ ও যিকির আদায় করেছেন ও করতে বলেছেন তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে চাই। যাতে পাঠক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই সুন্নতকে আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এ সম্পর্কিত বিদআত পরিহার করেন।
عن ثوبان رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا انصرف من صلاته استغفر ثلاثا وقال اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذالجلال والإكرام. قيل للأوزاعي وهو أحد رواة الحديث كيف الاستغفار؟ قال : يقول : أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله. رواه مسلم
ছাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন, আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম . . . (হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হতে শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান, মহানুভব!
ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করা হল -যিনি এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন কীভাবে?
বললেন, তিনি বলতেন, আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি)। বর্ণনায় : মুসলিম
كتب المغيرة بن شعبة إلى معاوية رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا فرغ من الصلاة وسلم قال : لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير. اللهم لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد. (أخرجه البخاري ومسلم)
মুগীরা ইবনে শোবা রা. মুয়াবিয়া রা. এর কাছে লিখেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, আল্লাহুম্মা লা- মানেআ লিমা আ’তাইতা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ান ফাউ’ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ আপনি যা দান করেন তা বাধা দেয়ার কেহ নেই। আর আপনি যা বাধা দিবেন তা দেয়ার মত কেহ নেই। আর আযাবের মুকাবেলায় ধনবানকে তার ধন কোন উপকার করতে পারে না)
বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম
عن عبد الله بن الزبير رضي الله عنهما أنه كان يقول دبر كل صلاة حين يسلم : لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير. لا حول ولا قوة إلا بالله . لا إله إلا الله ولا نعبد إلا إياه له النعمة وله الفضل وله الثناء الحسن، لا إله إلا الله مخلصين له الدين ولو كره الكافرون. قال ابن الزبير : وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يهلل بـهن دبر كل صلاة. (رواه مسلم)
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি প্রত্যেক সালাতের শেষে সালাম ফিরানোর পর বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু ওয়ালাহু ফাযলু ওয়ালাহুছ ছানাউল হাসান, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিছীনা লাহুদ্দীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও ইবাদত করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না। সমস্ত অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব তারই। সকল সুন্দর ও ভাল প্রশংসা তারই জন্য। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। আমরা ধর্মকে একমাত্র তারই জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছি, যদিও কাফেরা তা পছন্দ করে না)
ইবনে যুবাইর(রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাতের শেষে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর ইলাহিয়্যাতের ঘোষণা দিতেন।
বর্ণনায় : মুসলিম
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من سبح الله في دبر كل صلاة ثلاثا وثلاثين وحمد الله ثلاثا وثلاثين وكبر الله ثلاثا وثلاثين وقال تمام المائة لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير، غفرت خطاياه وإن كانت مثل زبد البحر. (رواه مسلم)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ বলবে, তেত্রিশ বার আলহামদু লিল্লাহ বলবে ও তেত্রিশ বার আল্লাহু আকবার বলবে এরপর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান) বলে একশ বাক্য পূর্ণ করবে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।
বর্ণনায় : মুসলিম
এ ছাড়াও সালাতের পর আরো অনেক যিকির ও দু‘আর কথা হাদীসে এসেছে। সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। যেমন সুরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সুরা নাছ পাঠ করার কথা এসেছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বর্ণনা এসেছে অনেক জায়গায়।

No comments:

Post a Comment