Thursday, September 24, 2015

কুরবানীর পশু যবেহ করার নিয়মাবলি



•৷• সহীহ্ হাদিস •৷•'s photo.


▓▓▓▒▒░ কুরবানীর পশু যবেহ করার নিয়মাবলি ░▒▒▓▓▓
_____________
কুরবানীদাতা নিজের কুরবানীর পশু নিজেই যবেহ করবেন, যদি তিনি ভালোভাবে যবেহ করতে পারেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে যবেহ করেছেন। আর যবেহ করা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম । তাই প্রত্যেকের নিজের কুরবানী নিজে যবেহ করার চেষ্টা করা উচিত।
_____________
ইমাম বুখারী (রাহ.) বলেছেন,‘সাহাবি আবু মুসা আশআরী (রা.) নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কুরবানীর পশু যবেহ করেন।’ (ফাতহুল বারী, ১০/১৯) তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মেয়েরা কুরবানীর পশু যবেহ করতে পারেন।
_____________
তবে কুরবানীর পশু যবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েয আছে। কেননা, সহীহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) তেষট্টিটি কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করে বাকিগুলো যবেহ করা দায়িত্ব আলী (রা.) কে অর্পণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮)।
_____________
‪#‎যবেহ_করার_সময়_যে_সকল_বিষয়_লক্ষণীয়‬
‪#‎প্রথমত‬
পশুর প্রতি দয়া করা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা।
আর তা নিমণরূপে সম্ভব:
_____________
• এমন ব্যবস্থা নিয়ে যবেহ করা, যাতে পশুর অধিক কষ্ট না হয় এবং সহজেই প্রাণ ত্যাগ করতে পারে।
• যবেহ যেন খুব তীক্ষ্ম ধারালো ছুরি দ্বারা করা হয় এবং তা খুবই শীঘ্রতা ও শক্তির সাথে যবেহ স্থলে (গলায়) পোঁচানো হয়।
_____________
মূলত; পশুর বিনা কষ্টে খুবই শীঘ্রতার সাথে তার প্রাণ বধ করাই উদ্দেশ্য নবী (সা:) হাদীসে এসেছে-
عن شداد بن أوس رضى الله عنه أن النبى صلى الله عليه وسلم قال: « إن الله كتب الإحسان على كل شيء فإذا قتلتم فأحسنوا القتل وإذا ذبحتم فأحسنوا الذبح وليحد أحدكم شفرته فليرح ذبيحته»
_____________
সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) বলেছেন: আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন যবেহ করবে তখনও তা সুন্দর ভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রাশান্তি দেয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৫৫)
_____________
বধ্য পশুর সম্মুখেই ছুরি শান দেওয়া উচিত নয় (মাকরূহ)। যেহেতু নবী (সা.) ছুরি শান দিতে এবং তা পশু থেকে গোপন করতে আদেশ করেছেন এবং বলছেন.‘যখন তোমাদের কেউ যবেহ করবে, তখন সে যেন তাড়াতাড়ি করে।’ (মুসনাদে আহমদ, ২/১০৮; ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৩১৭২; সহীহ তারগীব, ১/৫২৯)।
_____________
আর যেহেতু পশুর চোখের সামনেই ছুরি ধার দেওয়ায় তাকে চকিত করা হয়; যা বাঞ্ছিত অনুগ্রহ ও দয়াশীলতার প্রতিকূল। একইভাবে, একটি পশুকে অন্য একটি পশুর সামনে যবেহ করা এবং ছেচরে যবেহ স্থানে টেনে নিয়ে যাওয়াও মাকরূহ।
_____________
‪#‎দ্বিতীয়ত‬ কুরবানীর পশু যদি উট হয় ( অথবা এমন কোন পশু হয় যাকে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়) তাহলে তাকে বাম পা বাধা অবস্থায় দাঁড় করিয়ে নহর করা হবে। কেননা আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেছেন-
﴿ فَٱذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَا صَوَآفَّۖ ﴾ [الحج: ٣٦]
_____________
‘সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।’ [সূরা হজ্জ (২২):৩৬]।
_____________
ইবনে আববাস (রা.) বলেন, ‘এর অর্থ হলো তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাঁধা থাকবে। (তাফসীর ইবনে কাসির)।
_____________
যদি উট ছাড়া অন্যপশু হয় তাহলে তা বামকাতে শয়নাবস্থায় যবেহ করা হবে। যেহেতু তা সহজ এবং ডান কাতে ছুরি নিয়ে বাম হাত দ্বারা মাথায় চাপ দিয়ে ধরতে সুবিধা হবে। সম্ভব হলে পশুকে ডানকাতে শুইয়ে যবেহ করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে পশুকে আরাম দেওয়াই উদ্দেশ্যে।
_____________
পশুর গর্দানের এক প্রান্তে পা রেখে যবেহ করা মুস্তাহাব। যাতে পশুকে অনায়াসে কাবু করা যায়। কিন্তু গর্দানের পিছনদিকে পা মুচড়ে ধরা বৈধ নয়। কারণ, তাতে পশু অধিক কষ্ট পায়। যেমন ইতোপূর্বে আনাস (রা.) বর্ণিত বুখারীর হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।
_____________
‪#‎তৃতীয়ত‬ যবেহকালে পশুকে কিবলামুখী করে শয়ন করাতে হবে। (আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ, ২/১০৪৩; তবে এ হাদীসটির সনদ নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।) অন্যমুখে শুইয়েও যবেহ করা সিদ্ধ হবে। যেহেতু কিবলামুখ করে শুইয়ে যবেহ করা ওয়াজিব হওয়ার কোন শুদ্ধ প্রমাণ নেই। (আহকামুল উযহিয়্যাহ, পৃ. ৮৮,৯৫)।
_____________
‪#‎চতুর্থ‬ যবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। কারণ, এটা বলা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ রাববুল‘আলামীন বলেন-
﴿ فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ ﴾ [الانعام: ١١٨]
_____________
‘যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।’ [সূরা আন‘আম (৬):১১৮]।
﴿ وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسۡقٞۗ ﴾ [الانعام: ١٢١]
_____________
‘এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার কারো না, এটা অবশ্যই পাপ।’ [সূরা আন‘আম(৬): ১২১]।
_____________
আর নবী (সা.) বলেছেন, ‘যা খুন বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ করো।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৫৬; সহীহ মুসলিম , হাদীস নং ১৯৬৮)।
_____________
যবেহকালীন সময়ে ‘বিসমিল্লাহ‘র সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করা মুস্তাহাব। অবশ্য এর সঙ্গে কবূল করার দু‘আ ছাড়া অন্য কিছু অতিরিক্ত করা বিধেয় নয়। যেমন হাদিসে এসেছে-
عن جابر رضى الله عنه .. «.وأتى بكبش ذبحه رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده وقال:بسم الله و الله أكبراللهم هذا عني وعمن لم يضح من أمتي. »
_____________
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ….. একটি দুম্বা আনা হলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন,
بسم الله و الله أكبراللهم هذا عني وعمن لم يضح من أمتي».
_____________
‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে । এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।’ (আবু দাউদ)
_____________
অন্য হাদিসে এসেছে-
«ضحى رسول الله صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين أقرنين ويسمى ويكبر. »
রাসূলুল্লাহ (সা.) দুটি শিংওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ ও আল্লাহু আকবার’ বললেন। (সুনানে দারামী, হাদীস নং ১৯৮৮; হাদিসটি সহীহ)।
_____________
যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর –
«اللهم هذا منك ولك»
‘হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে তোমারই জন্য’। বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দু‘আ করা জায়েয আছে। এ ভাবে বলা ‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবূল করে নাও।’ যেমন হাদিসে এসেছে
_____________
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর দুম্বা যবেহ করার সময় বললেন-
«بسم الله اللهم تقبل من محمد وآل محمد ومن أمة محمد»
‘আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬৭)।
_____________
মূলত কুরবানী কেবল নিজের তরফ থেকে হলে বলবে, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়ালাক , আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।’ নিজের এবং পরিবারের তরফ থেকে হলে বলবে, ‘….তাক্বাবাল্লাহ মিন্নী ওয়ামিন আহলি বাইতি।’ অপরের নামে হলে বলবে, ‘…তাক্বাববাল মিন (এখানে যার তরফ থেকে কুরবানী তার নাম নেবে। (আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ, পৃ.৩৬)।
_____________
এ সময় নবী (সা:) এর উপর দরূদ পাঠ করা বিধেয় নয়, বরং তা বিদ‘আত। (আল-মুমতে, ৭/৪৯২) যে ‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আর-রাহমানির রাহীম’ যোগ করাও সুন্নাত নয়। যেহেতু এ সম্বন্ধে কোন দলীল নেই। যেমন যবেহ করার লম্বা দু‘আ ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহতু’ এর হাদীস যঈফ। (যঈফ আবূ দাইদ, হাদীস নং ৫৯৭)।
_____________
যবেহের ঠিক পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ জরুরী। এর পর যদি লম্বা ব্যবধান পড়ে যায়, তাহলে পুনরায় তা ফিরিয়ে বলতে হবে। তবে ছুরি ইত্যাদি হাতে নিয়ে প্রস্ত্ততি নেওয়ায় যেটুকু ব্যবধান পড়ে তাতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে অপর পশু যবেহ বৈধ নয়। বরং অন্য পশুর জন্য পুনরায় ‘বিসমিল্লাহ’ পরা জরুরী। অবশ্য ‘বিসমিল্লাহ’ বলার পর অস্ত্র পরিবর্তন করাতে আর পুনবায় পড়তে হয় না। উল্লেখ্য যে, পশু যবেহর পর পঠনীয় কোন দু‘আ নেই।
_____________
‪#‎পঞ্চমত‬ যবেহতে রক্ত প্রবাহিত হওয়া জরুরী। আর তা দুই শাহরগ (কণ্ঠরালীর দু‘পাশে দুটি মোটা আকারের শিরা) কাটলে অধিকরূপে সম্ভর হয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যা রক্ত প্রবাহিত করে, যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তা তোমরা খাও। তবে যেন (যবেহ করার অস্ত্র) দাত বা নখ না হয়।’ (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি, সহীহুল জামে’, হাদীস নং ৫৫৬৫) সুতরাং রক্ত প্রবাহিত ও শুদ্ধ যবেহ হওয়ার জন্য চারটি অঙ্গ কাটা জরুরী; শ্বাসনালী, খাদ্যনালী এবং পার্শ্বস্থ দুটি মোটা শিরা।
_____________
‪#‎ষষ্টত‬ প্রাণ ত্যাগ করার পূর্বে পশুর অন্য কোন অঙ্গ কেটে কষ্ট দেওয়া হারাম। যেমন- ঘাড় মটকানো, পায়ের শিরা কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি কাজ জান যাওয়ার আগে বৈধ নয়। একইভাবে, দেহ আড়ষ্ট হয়ে এলে চামড়া ছাড়াতে শুরু করার পর যদি পুনরায় লাফিয়ে ওঠে, তাহলে আরো কিছুক্ষণ প্রাণ ত্যাগ করার কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু পশুকে কষ্ট দেয়া আদৌ বৈধ নয়।
_____________
পশু পালিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও ঘাড় মটকানো যাবে না। বরং তার বদলে কিছুক্ষণ ধরে রাখা অথবা (হাঁস-মুরগীকে ঝুড়ি ইত্যাদি দিয়ে) চেপে রাখা যায়।
_____________
যবেহ করার সময় পশুর মাথা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় তার খেয়াল করা উচিত। তা সত্ত্বেও যদি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়েই যায়, তাহলে তা হালাল হওয়ার ব্যাপাবে কোন সন্দেহ নেই।
_____________
যবাই ছেড়ে দেওয়ার পর (অসম্পূর্ণ হওয়ার ফলে) কোনো পশু উঠে পালিয়ে গেলে তাকে ধরে পুনরায় যবাই করা যায়। নইলে কিছু পরেই সে এমনিতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আর তা হালাল।
_____________
প্রকাশ থাকে যে, যবেহ করার জন্য পবিত্রতা বা যবেহকারীকে পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। যেমন-মাথায় টুপী রাখা বা মাথা ঢাকাও বিধিবদ্ধ নয়। অবশ্য বিশ্বাস ও ঈমানের পবিত্রতা জরুরী। সুতরাং কাফির, মুশরিক ও বেনামাযীর হাতে যবেহ শুদ্ধ নয়।
_____________
যেমন- যবেহ করার আগে কুরবানীর পশুকে গোসল দেওয়া, তার খুর ও শিঙে তেল দেওয়া অথবা তার অন্য কোন প্রকার তোয়ায করা বিদ‘আত।
উল্লেখ্য, যবেহকৃত পশুর রক্ত হারাম। অতএব তা কোন ফল লাভের উদ্দেশ পায়ে মাখা, দেওয়ালে ছাপ দেওয়া বা তা নিয়ে ছুড়াছুড়ি করে খেলা করা বৈধ নয়।
______________
সংকলন : ড. মোঃ আবদুল কাদের
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment