Thursday, February 18, 2016

গীবত করবেন না।





গীবত বলা হয় কারো অগোচরে তার এমন দোষ সম্পর্কে আলোচনা করা, যেটা তার মধ্যে বিদ্যমান এবং সে শুনলে কষ্ট পাবে। কোরআন ও হাদিসে এই গোনাহটি সম্পর্কে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। এটা এমন একটি গোনাহ, যার গীবত করা হয়েছে, সে মাফ না করলে মাফ হবে না। তবে, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরাম গীবত করাকে বৈধ বলেছেন।
ইমাম নববী (রহ:) বলেন, ”সৎ ও শরীয়ত সম্মত উদ্দেশ্য সাধন যদি গীবত ছাড়া সম্ভব না হয়,
তাহলে এক্ষেত্রে গীবত জায়েয।” তাঁর মতে ছয়টি ক্ষেত্রে গীবত করা বৈধ। এগুলো হলো:
১। অত্যাচারিত ব্যক্তি অত্যাচারীর
বিরুদ্ধে অভিযোগের উদ্দেশ্যে গীবত করা।
২। ত্রুটি সংশোধনের জন্য কোনো ব্যক্তির
দোষ এমন ব্যক্তির কাছে বলা, যে তা
সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে।
৩। মুফতির নিকট মাসয়ালা জানতে গিয়ে
প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তির (সম্ভব হলে নাম
উল্লেখ না করে) ত্রুটি বলা যায়।
৪। কোনো ব্যক্তি কারো সাথে বিয়ে বা
ব্যবসায়িক সম্পর্ক করতে চাইলে এবং তার সম্পর্কে অন্য ব্যক্তির সাথে পরামর্শ
চাইলে তার দোষ-গুণ স্পষ্টভাবে বলে দেবে যা সে জানে (মনে হিংসা-বিদ্বেষ না
রেখে)।
৫। যারা সমাজে প্রকাশ্যে পাপ কাজ,
বিদয়াত বা গোমরাহীর প্রসার ঘটাচ্ছে, তা
সংশোধন ও অন্যদের সতর্ক করার উদ্দেশে তার দোষ-ত্রুটির সমালোচনা জায়েয।
৬। কেউ যদি কোনো বাজে নামে এতটাই
প্রসিদ্ধি লাভ করে যে তার আসল নামে
কেউ তাকে চেনে না, তাহলে সেক্ষেত্রে
তাকে ছদ্মনাম বা খারাপ উপনামে ডাকা
জায়েয (তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়)।
– পৃষ্ঠা১৪২/১৪৩,খণ্ড ১৭, বা’বু তাহরিমিল
গীবাহ, শরহু সহিহ মুসলিম লিল ইমাম আন- নববী(র)।
লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ফেসবুকে আমরা যেভাবে কারো সমালোচনা করি, তা কোনোভাবেই উপরোল্লিখিত বৈধতার ক্ষেত্রগুলোতে পড়ে না। কারো কোনো কথা বা মতাদর্শকে যদি ভুল বা বিভ্রান্তিকর মনে হয়, অন্যদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যে সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। কিন্তু তা না করে তাদের নামে আমরা ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন দেই, তাচ্ছিল্য ও গালিগালাজ করে স্ট্যাটাস পোস্ট করি। যার মধ্যে কিছু বিকৃত আনন্দ ও রাগ প্রকাশ ছাড়া আর কোনো সৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। অপরাধের কারণে কোনো অপরাধীর অনর্থক গীবত করা হালাল হয়ে যায় না। বরং তার অপরাধের কারণে তাকে যেমন জবাবদিহি করতে হবে, তার সাথে আমি যে অপরাধ (গীবত) করলাম,সেটার কারণেও আমাকে পাকড়াও হতে হবে।

No comments:

Post a Comment