Tuesday, May 24, 2016

সিজদা ( السجدة )





‘সিজদা’ অর্থ চেহারা মাটিতে রাখা (وضع الجبهة على الأرض) পারিভাষিক অর্থ, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে চেহারা মাটিতে রাখা’। রুকূ হ’তে উঠে ক্বওমার দো‘আ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে আল্লাহর নিকটে সিজদায় লুটিয়ে পড়বে এবং সিজদার দো‘আ সমূহ পাঠ করবে। নাক সহ কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আংগুল সমূহের অগ্রভাগ সহ মোট ৭টি অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে সিজদা করবে।
[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৭, ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।] 
সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু’হাত মাটিতে রাখবে। কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ হাদীছটি ‘ছহীহ’।
[আবুদাঊদ হা/৮৪০; ঐ, মিশকাত হা/৮৯৯ অনুচ্ছেদ-১৪।] কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত আগে হাঁটু রাখার হাদীছটি ‘যঈফ’।
[আবুদাঊদ হা/৮৩৮; ঐ, মিশকাত হা/৮৯৮ অনুচ্ছেদ-১৪, টীকা, পৃঃ ১/২৮২; মির‘আত ৩/২১৭-১৮; ইরওয়া হা/৩৫৭।]
সিজদার সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী করে [কেননা দুই হাতও সিজদা করে যেমন মুখমন্ডল সিজদা করে থাকে’। 
মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৯০৫ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।] 
মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর[ ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২৩; আবুদাঊদ, তিরমিযী, নায়লুল আওত্বার ৩/১২১।] 
মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৭৯২ অনুচ্ছেদ-১০, হা/৮৮৮ অনুচ্ছেদ-১৪।] 
এবং কনুই ও বগল ফাঁকা রাখবে।
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৯১ অনুচ্ছেদ-১৪।] হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবে না।
[ আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮০১।] 
সিজদায় দুই কনুই উঁচু রাখবে এবং কোনভাবেই দু’হাত কুকুরের মত মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া যাবে না।[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৮ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪]

সিজদা এমন (লম্বা) হবে, যাতে বুকের নীচ দিয়ে একটা বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।
[মুসলিম, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮৯০।] 
সহজ হিসাবে প্রত্যেক মুছল্লী নিজ হাঁটু হ’তে নিজ হাতের দেড় হাত দূরে সিজদা দিলে ঠিক হ’তে পারে। সিজদা হ’তে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে ও আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী রাখবে।
[বুখারী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৯২, ৮০১।]

অতঃপর বৈঠকের দো‘আ পাঠ শেষে তাকবীর বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে। অনেক মহিলা সিজদায় গিয়ে মাটিতে নিতম্ব রাখেন। এই মর্মে ‘মারাসীলে আবুদাঊদে’ বর্ণিত হাদীছটি নিতান্তই ‘যঈফ’।
[সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম হা/২৮২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ‘সিজদার অঙ্গ সমূহ’ অধ্যায়, ১/৩৭৩ পৃঃ ; যঈফুল জামে‘ হা/৬৪৩; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৫২।] 
এর ফলে সিজদার সুন্নাতী তরীকা বিনষ্ট হয়। সিজদা হ’ল ছালাতের অন্যতম প্রধান ‘রুকন’। সিজদা নষ্ট হ’লে ছালাত বিনষ্ট হবে। অতএব এই বদভ্যাস এখনই পরিত্যাজ্য।

সিজদা হ’ল দো‘আ কবুলের সর্বোত্তম সময়। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَّبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ رواه مسلم وفي رواية له عن ابن عباس قال : فَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُّسْتَجَابَ لَكُمْ-
‘বান্দা স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটে পৌঁছে যায়, যখন সে সিজদায় রত হয়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশী বেশী প্রার্থনা কর’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা প্রার্থনায় সাধ্যমত চেষ্টা কর। আশা করা যায়, তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে’।
[মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪, অনুচ্ছেদ-১৪, হা/৮৭৩, অনুচ্ছেদ-১৩; নায়ল ৩/১০৯; মির‘আত ১/৬৩৫; ঐ, ৩/২২১-২২।] 
রুকূ ও সিজদাতে কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করবে।
[ইবনু মাজাহ হা/৮৮৮; আহমাদ, আবুদাঊদ, প্রভৃতি, ছিফাত পৃঃ ১১৩, ১২৭।] দশবার দো‘আ পাঠের যে হাদীছ এসেছে, তা যঈফ। 
[আবুদাঊদ হা/৮৮৮; নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৮৩।]

No comments:

Post a Comment