Wednesday, May 25, 2016

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস No.4990






মিথ্যা ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হারাম, গোনাহগুলির অন্যতম। মিথ্যা বলা মুনাফিকের অন্যতম চিহ্ন। মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। সবচেয়ে জঘন্যতম মিথ্যা হলো আল্লাহ বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে, হাদীসের নামে বা ধর্মের নামে মিথ্যা বলা।
______________
এরপর জঘন্য মিথ্যা হলো মিথ্যার মাধ্যমে কোনো মানুষের অধিকার নষ্ট করা, সম্পদ দখল করা বা মিথ্যা কথা বলে কিছু বিক্রয় করা। বিভিন্ন হাদীসে এরূপ কর্মের জন্য কঠিন অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
______________
ইসলামে হাসি-মস্করা, আনন্দ ও বিনোদনকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত সে জন্য মিথ্যা বলা বৈধ করা হয় নি। রাসূলুল্লাহ নিজে হাঁসি-মস্করা করতেন, কিন্তু মিথ্যা পরিহার করতেন।
______________
এক বৃদ্ধাকে বলেন, কোনো বুড়ো মানুষ তো জান্নাতে যাবে না। এতে বেচারী কান্নাকাটি শুরু করে। তখন তিনি বলেন, বুড়োবুড়িকে আল্লাহ জোয়ান বানিয়ে জান্নাতে দিবেন।
______________
অপর একব্যক্তি তাঁর কাছে এসে সফরের জন্য একটি উট চান। তিনি বলেন, তোমাকে আমি একটি উটনীর বাচ্চা দিব। লোকটি হতাশ হয়ে বলে, বাচ্চাতে আমার কি হবে? তিনি বলেন, সকল উটই তো উটনীর বাচ্চা। এরূপ অনেক ঘটনা হাদীসে রয়েছে। সাহাবীগণও হাসি-মস্করা করতেন, তবে মিথ্যা বর্জন করতেন।
______________
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻭَﻳْﻞٌ ﻟِﻠَّﺬِﻱ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺑِﺎﻟﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟِﻴُﻀْﺤِﻚَ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻘَﻮْﻡَ ﻓَﻴَﻜْﺬِﺏُ، ﻭَﻳْﻞٌ ﻟَﻪُ ﻭَﻳْﻞٌ ﻟَﻪُ »
‘‘যে ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্যও মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!’’ তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৫৫৭; হাদীস নং ২৩১৫; আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৯৭; হাদীস নং ৪৯৯০।
______________
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺃَﻧَﺎ ﺯَﻋِﻴﻢٌ ﺑِﺒَﻴْﺖٍ ﻓِﻲ ﺭَﺑَﺾِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻟِﻤَﻦْ ﺗَﺮَﻙَ ﺍﻟْﻤِﺮَﺍﺀَ ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺤِﻘًّﺎ، ﻭَﺑِﺒَﻴْﺖٍ ﻓِﻲ ﻭَﺳَﻂِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ
ﻟِﻤَﻦْ ﺗَﺮَﻙَ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏَ ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻣَﺎﺯِﺣًﺎ ﻭَﺑِﺒَﻴْﺖٍ ﻓِﻲ ﺃَﻋْﻠَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﺴَّﻦَ ﺧُﻠُﻘَﻪُ »
‘‘যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বর্জন করে, মস্করা বা কৌতুক করতেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ির জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’’ আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৫৩; হাদীস নং ৪৮০০।
______________
মস্করা বা কৌতুকচ্ছলে কাউকে ভয় পাইয়ে দেওয়াও জায়েয নয়। এক সফরে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ -এর সাথে ছিলেন। একজন সাহাবী ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তখন অন্য একজন গিয়ে তার রশিটি নিয়ে আসেন। এতে ঘুমন্ত ব্যক্তি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে পড়েন। তার ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থা দেখে সাহাবীগণ হেসে উঠেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা হাসছ কেন? তারা ঘটনাটি বললে তিনি বলেন:
« ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟِﻤُﺴْﻠِﻢٍ ﺃَﻥْ ﻳُﺮَﻭِّﻉَ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ »
‘‘কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে, সে অন্য মুসলিমকে ভয় পাইয়ে দিবে।’’ আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/৩০১;হাদীস নং ৫০০৪।
______________
আমরা অনেক সময় কৌতুকভরে বা ভুলানোর জন্য শিশুদের সাথে মিথ্যা বলি। অথচ এরূপ মিথ্যাও মিথ্যা এবং গোনহের কাজ। শুধু তাই নয়, এরূপ মিথ্যার মাধ্যমে আমরা শিশুদেরকে মিথ্যায় অভ্যস্ত করে তুলি এবং মিথ্যার প্রতি তাদের ঘৃণা ও আপত্তি নষ্ট করে দিই।
______________
কিশোর সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমির বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ আমাদের বাড়িতে বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বলেন, এস তোমাকে একটি জিনিস দিব। রাসূলুল্লাহ বলেন, তুমি তাকে কি দিতে চাও? তিনি বলেন: আমি তাকে একটি খেজুর দিতে চাই।
______________
রাসূলুল্লাহ বলেন:
« ﺃَﻣَﺎ ﺇِﻧَّﻚِ ﻟَﻮْ ﻟَﻢْ ﺗُﻌْﻄِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻛُﺘِﺒَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﻛِﺬْﺑَﺔٌ »
‘‘তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার নামে একটি মিথ্যার গোনাহ লেখা হতো।’’ আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৯৮; হাদীস নং ৪৯৯১।
______________
নিজের সাথে নিজে মিথ্যা বলাও বৈধ নয়। আর এজন্যই কেউ যদি নিজের মনে শুধু নিজের জন্যই কোনো বিষয়ের কসম করে যে, আমি অমুক কাজটি করব বা করব না, কিন্তু পরে তার ব্যক্তিগত কসম না রাখতে পারে তবে তাকে কসমের কাফ্ফারা দিতেই হবে। কাজেই নিজের মনে নিজের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা পূরণ করুন, নিজের মনকে মিথ্যায় অভ্যস্ত করবেন না।
______________
শুধু নিশ্চিত মিথ্যাই নয়, মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে এরূপ কথা বলতে বা যা কিছু শোনা যায় সবই বলাবলি করতে নিষেধ করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তিনি বলেন:
« ﻛَﻔَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤَﺮْﺀِ ﻛَﺬِﺑًﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﺤَﺪِّﺙَ ﺑِﻜُﻞِّ ﻣَﺎ ﺳَﻤِﻊَ »
‘‘একজন মানুষের মিথ্যাবাদি হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা
শুনবে তাই বলবে।’’ মুসলিম, আস-সহীহ ১/১০-১১;
______________
এ অপরাধটি আমরা সকলেই করি। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব ইত্যাদি সম্পর্কে মুখরোচক গল্প, গণমাধ্যমের খবর ইত্যাদি যা কিছু শুনি তাই বলি। অথচ বিষয়টি সঠিক কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কথা বলা ঠিক নয়। যদি কোনো মানুষের ব্যক্তিগত মর্যাদাহানী বা গীবত জাতীয় কিছু না হয়, তবে সে ক্ষেত্রে বড়জোর বলা যেতে পারে যে, অমুক একথা বলেছে বলে শুনেছি, সত্য মিথ্যা বলতে পারি না।
______________
সর্বদা সত্য বলুন। সত্যপ্রীতি আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟﺼِّﺪْﻕِ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺼِّﺪْﻕَ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺒِﺮِّ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺒِﺮَّ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ
ﻳَﺼْﺪُﻕُ ﻭَﻳَﺘَﺤَﺮَّﻯ ﺍﻟﺼِّﺪْﻕَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻜْﺘَﺐَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻِﺪِّﻳﻘًﺎ، ﻭَﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟْﻜَﺬِﺏَ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏَ ﻳَﻬْﺪِﻱ
ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻔُﺠُﻮﺭِ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻔُﺠُﻮﺭَ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻳَﻜْﺬِﺏُ ﻭَﻳَﺘَﺤَﺮَّﻯ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏَ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳُﻜْﺘَﺐَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﺬَّﺍﺑًﺎ »
‘‘তোমরা সর্বদা সত্য আঁকড়ে ধরবে; কারণ সত্য পুণ্যের দিকে ধাবিত করে আর পুণ্য জান্নাতে নিয়ে যায়। একজন মানুষ যখন সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্য বলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে তখন সে এক পর্যায়ে আল্লাহর কাছে ‘‘সিদ্দীক’’ বা মহাসত্যবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়।
______________
আর তোমরা মিথ্যা সর্বোতভাবে বর্জন করবে। কারণ মিথ্যা পাপের পথে পরিচালিত করে এবং পাপ জাহান্নামে নিয়ে যায়। একজন মানুষ যখন মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা বলার সুযোগ খুঁজে বেড়ায় তখন সে এক পর্যায়ে আল্লাহর নিকট মহামিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়। মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২০১২-২০১৩; হাদীস নং- ২৬০৭।

No comments:

Post a Comment