ভুল ৩০ - ৩৫
৩০। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে সলাত বৈঠকে অর্থাৎ ‘তাশহদ’ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে আবার ইল্লাল্লাহু বলে টুপ করে নামিয়ে ফেলা হয়। এরূপ করার কথা কোন হাদীসেই বলা হয়নি।
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ তাশহ্হুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পড়া শুরু থেকে বৈঠকের শেষ পর্যন্ত উক্ত আঙ্গুল উঠিয়ে রাখতে হবে এবং নাড়াতে হবে। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে দিতেন, আর ডান হাতের সবগুলো আঙ্গুল মুষ্টিবদ্ধ করে তর্জনী দ্বারা কিবলার দিকে ইঙ্গিত করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন।’ (সহীহ মুসলিম-১৬২ পৃঃ, আবু দাউদ-১৪২ পৃঃ, নাসাঈ-১৮৭ পৃঃ, মিশকাত-৮৫ পৃঃ, ইসলামিয়াত-বি,এ হাদীস পর্ব ১৯১, ১৯২ পৃঃ)
.
৩১। প্রচলিত ভুলঃ তাকবীর তিলাওয়াত ও সলাতের অন্যান্য দু’আর সময় ঠোঁট না নাড়িয়ে শুধু মনে মনে বলা-এটি একটি বহুল প্রচিলত ভুল।
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ বিশুদ্ধ পদ্ধতি হলো ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ইমাম ছাড়া অন্য সবার জন্য সুন্নাত হচ্ছে চুপে চুপে পাঠ করা। চুপে চুপে বলার সর্বনিম্ন সীমা হচ্ছে নিজেকে শোনানো- যদি তার শ্রবণশক্তি ঠিক থাকে এবং কথায় কোন জড়তা না থাকে। এ বিধান সকল ক্ষেত্রে’ ক্বিরাত পাঠ, তাকবীর, রুকূ সাজদাহর তাসবীহ্ প্রভৃতি।’ তাছাড়া ঠোঁট না নাড়ালে তো তাকে পড়া বলা চলে না। কারণ, আরবীতে এমন অনেক অক্ষর আছে ঠোঁট না নাড়ালে যার উচ্চারণই হবে না (কিন্তু নিয়্যাত এর ক্ষেত্রে এর বিপরীত)।
.
৩২। প্রচিলত ভুলঃ তাশাহ্হুদে বসে দরূদ পাঠ করার সময় অনেক সুফিদের শোনা যায় (সাইয়েদেনা) শব্দ বৃদ্ধি করে পাঠ করতে। (মোকছুদুল মোমেনীন বেহেস্তের কুণ্জী-৩১৬-১৭)
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ‘দু’আ যিকিরের ক্ষেত্রে হাদীসে প্রমাণিত শব্দাবলী উচ্চারণ করাই সুন্নাতসম্মত।’ তাছাড়া কোন সহীহ্ হাদীস, সাহাবী বা তাবেঈদের আমল থেকে এর কোন প্রমাণ নেই।
.
৩৩। প্রচলিত ভুলঃ শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদে ‘তাওয়াররুক’ না করাঃ অধিকাংশ মুসল্লী সব ধরণের তাশাহ্হুদে বসে ইফতেরাশ করে। (তাওয়াররুক হচ্ছে, ডান পা খাড়া রেখে বাম পা-কে ডান পায়ের নীচে দিয়ে সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিতম্বের উপর বসা।)
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আবু হুমাইদ সায়িদী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন দু’ রাক’আতে বসতেন (অর্থাৎ মাঝখানে বৈঠকে) তখন বাম পায়ের উপর বসতেন, ডান পা খাড়া রাখতেন। আর যখন শেষ রাক’আতে বসতেন তখন বাম পা (ডান পায়ের নীচে দিয়ে) সামনের দিকে বাড়িয়ে দিতেন এবং ডান পা খাড়া করতেন তারপর নিতস্বের বা উরুর উপর বসতেন। (সহীহ বুখারী-১/১১৪ পৃঃ, সহীহ মুসলিম-১/১৪ পৃঃ, আবু দাউদ-১/১৩৮ পৃঃ, তিরমিযী-৩৮, ৩৯ পৃঃ নাসাঈ-১৭৩ পৃঃ, ইবনু মাজাহ-১৮৭ পৃঃ, মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য হা/ ৭৩৬, ৭৪৫)
.
৩৪। প্রচলিত ভুলঃ বিতর সলাতে দু’আ-ই কুনূত পড়িবার পূর্বে তাকবীর বলিয়া হাত উঠাইবে তৎপর দু’আ পড়িবে (কুদুরী-৬৮ পৃঃ) এর কোন প্রমাণ সহীহ হাদীসে নেই।
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) সলাতের প্রথম তাকবীরের মতো ইসতিসকা ব্যতীত অন্য কোন দু‘আয় কাঁধ বরাবর হস্তদ্বয় উঠাতেন না। (নাসাঈ-২/৪১৬ পৃঃ)
.
৩৫। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে শুধুমাত্র তিন রাক’আত বিতর সলাতকে সীমাবদ্ধ ধরা হয় (হিদায়া-ই.ফা.বা-১/১১৮ পৃঃ) অথচ তা সহীহ নয়। কারণ সহীহ হাদীস দ্বারা এক থেকে নয় রাক’আত পর্যন্ত বিতর সলাত সাব্যস্ত আর এক দল তথাকথিত মৌলবীরা তো এক রাক’আত সলাত স্বীকারই করে না।
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ বিতর অর্থ বে-জোড়। রাতের সলাতকে বে-জোড় করার জন্য বিত্র পড়া হয়। বিতরকে আল্লাহ পছন্দ করেন, কেননা আল্লাহ বিত্র। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ ‘‘ আল বিতরু রাকাআতুন মিন আখিরিল লাইলি।’’ বিত্র হ’ল এক রাক’আত রাতের শেষাংশে (সহীহ্ মুসলিম)। তাছাড়া এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয়, রাক’আত ও বিত্র পড়া যায় (দেখুন সহীহ বুখারী-১৩৫, ১৫৩ পৃঃ, সহীহ মুসলিম-২৫৩, ২৫৪, ২৫৫, ২৫৬ পৃঃ, আবু দাউদ-২০১ পৃঃ, নাসাঈ-২৪৬, ২৪৭ পৃঃ, তিরমিযী-১/১০৬ পৃঃ, মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য- ২/ হা/১১৮৫, ২২৮৬, ১১৯৬ পৃঃ, রায়হাকী-৩/৪১-৪৩ পৃঃ)
.
.........................................................................
বইটির নামঃ'' প্রচলিত ভুল বনাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি।''এই গ্রন্থে নামাজের ১০১ টির অধিক ভুলের দলিলসহ সমাধান পেশ করা হয়েছে।
লেখকঃ সাইখ মুরাদ বিন আমজাদ
No comments:
Post a Comment