Thursday, January 26, 2017

সমাজের প্রচলিত নামাজের ভুল ৬-১০





ভুল ৬-১০
৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে কোন কোন গ্রন্থে লেখা আছে। উযূর পরে সূরা ক্বদর পাঠ করিলে সিদ্দীকের দরজা হাসিল হইবে। (মওঃ গোলাম রহমান, মোকছুদুল মোমেনীন ১৩২-১৩৩ পৃঃ)
.
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ ওমর ফারূক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে উযূ করবে ও কালেমায়ে ‘শাহাদাতইন’ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৯) এ দু‘আর সাথে তিরমিযী শরীকের বর্ণনায় আরো একটি দু‘আ পাওয়া যায় তা’হলঃ-

উচ্চারণঃ- ‘‘আল্লা-হুম্মাজ আলনী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্ ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহিরীন।’’ অর্থ- হে আল্লাহ আপনি আমাকে অধিক তাওবাকারী এবং পাক পবিত্র লোকদের অন্তর্ভূক্ত করেদিন। (সহীহ্ তিরমিযী-১/৪৯ পৃঃ)
.
৭। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লিকে দেখা যায় উযূর শেষে উল্লিখিত দু‘আ পাঠ করার সময় আসমানে দিকে তাকায়। অথচ উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীসটি ‘মুনকার’ বা যঈফ। (আলবানী, ইরাওয়াউল গালীল-১/১৩৪ পৃঃ)
.
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ উপরে বর্ণিত শাহাদাতাইন ও তিরমিযী বর্ণিত দু‘আটি পাঠ করা। আসমানের দিকে না তাকিয়ে। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত হা/ ২৮৯, সহীহ্ তিরমিযী-১/৪৯ পৃঃ, হা/৫৫)
.
৮। প্রচলিত ভুলঃ ‘‘তায়াম্মুমে দুই হাত মাটিতে মারিবে-প্রথমবার হাত দ্বারা মুখমন্ডল মুছিয়া নিবে আর দ্বিতীয়বার হাত দ্বারা কনুই সহ দুই হাত মাসাহ করিবে।’’ (কুদুরী-৪২ পৃঃ)

* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আম্মার ইবন ইয়াসার (রাঃ) গোসলের প্রয়োজনে পানি না থাকায় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সলাত আদায় করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘‘তোমার জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট ছিল’’-এ বলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) দু’হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর চেহারা ও উভয় হাত মাসাহ্ করলেন (সহীহুল বুখারী-১/৩৩৮)। এই হাদীস দ্বারা একবার পবিত্র মাটিতে হাত মারার কথা প্রমাণিত হয়। অথচ মাযহাবী বিদ্বানগণ তায়াম্মুমের জন্য দু’বার মাটিতে হাত মারার কথা উল্লেখ করে থাকেন। ইমাম বাইহাকী এ রাবীকে দুর্বল বলেছেন। ইমান নাসঈ ও দারা কুতনী তাকে মাতরুকুল হাদীস বলেছেন। তাছাড়া শরহে বিকায়ার ১ম খন্ডে দু’হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ্ করার যে পদ্ধতি বর্ণিত আছে তাতো সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কোন কোন কিতাব আংটি কিংবা চুড়ি থাকলে নাড়িয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, যদি এক গাছি লোম পরিমাণ স্থানও হাতে কিংবা মুখে মোছা না যায় তবে তায়াম্মুম হবেনা। এ সকল কথা প্রমাণহীন ও নব-আবিষ্কৃত বিদ’আত। ‘‘মাসাহা বিহিমা ওয়াজহাহু ওয়া কাফফাইহী’’ দ্বারা সঠিক অর্থ মুখমন্ডলও কব্জি মাসাহ্ করলেন যারা এর দ্বারা কনুই সহ হাত বুঝেছেন তারা ভুল করেছেন। কারণ, কনুই সহ দুই হাতের আরবী হল ‘‘যিরাউন’’ অতএব বুঝা গেল তায়াম্মুমের সঠিক তরীকা হল একবার পবিত্র মাটিতে হাত মেরে ফুঁ দিয়ে হস্তদ্বয় কব্জি পর্যন্ত এবং মুখমন্ডল একবার মাসাহ করা।
.
৯। প্রচলিত ভুলঃ ইক্বামাত ঠিক আযানের মত, তবে ‘‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’’-এর পর ‘‘কাদকামাতিস সলাহ’’ দুইবার বলতে হবে। (হিদায়া ইফাবা-১/৬৫ পৃঃ, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১/১১৬ পৃঃ, আল মুখতাছারুল কুদুরী মাদ্রাসার ৯ম-১০ম শ্রেণীর পাঠ্য-৬১ পৃঃ)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, ‘বিলালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সে যেন আযান জোড় অর্থাৎ দুবার দুবার দেয় এবং ইক্বামাত ক্বাদামাতিস সলাহ ব্যতীত বে-জোড় অর্থাৎ একবার দেয়। (সহীহ বুখারী ১/৮৫ পৃঃ, সহীহ মুসলিম ১/১৬৪-১৬৫ পৃঃ আবু দাউদ ১/৭৫ পৃঃ)
.
১০। আযানের দু’আ প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে রেডিও, টিভি ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ফিকহী গ্রন্থে কিছু অতিরিক্ত শব্দ বলা হয়, যেমনঃ ‘ওয়াদারাজাতির রাফিয়া’ এবং ‘ইন্নাকালা তুখলিফুল মি‘আদ’ (বেহেশতী জেওর, ২য় খন্ড ১২২ পৃঃ, মাসআলা-৯)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম -এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করে-আল্লা হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলা, ওয়াব‘আছহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া আত্ত্বাহ’- ক্বিয়ামাতের দিন সে আমার শাফা’আদ লাভের অধিকারী হবে।’ (সহীহুল বুখারী হা/৬১৪ পৃঃ ২৯৮) উল্লেখ্য যে, আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরুদ পড়বে অতঃপর দু’আ পাঠ করবে। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭)
.........................................................................
বইটির নামঃ'' প্রচলিত ভুল বনাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি।''এই গ্রন্থে নামাজের ১০১ টির অধিক ভুলের দলিলসহ সমাধান পেশ করা হয়েছে। লেখকঃ সাইখ মুরাদ বিন আমজাদ
স্পষ্ট দলিল সহ রাসুল সঃ এর হাদিসের রেফারেন্স দেবার পরেও যদি কেউ কমেন্টে কোন বুজুর্গ বা অমুক তমুক এর মতামত লিখেন তাহলে সেটা রিমুভ করা হবে। অন্ধ অনুসরন বাদ দিয়ে মুহাম্মাদ সঃ এর দিকে ফিরে আসুন। তবেই মুসলিম উম্মা এক হতে পারবে।

No comments:

Post a Comment