Wednesday, March 1, 2017

আল্লাহ কি নিরাকার ? পর্ব-২





আল্লাহ কি নিরাকার? 
(পর্ব-০২)
বিজ্ঞ পাঠক! 
সমাজে প্রচলিতে একটি আক্বীদা হচ্ছে
যে, ‘আল্লাহ নিরাকার।’ অধিকাংশ মানুষ
এই আক্বীদায় বিশ্বাসী। এমনকি
অধিকাংশ আলেমও এর পক্ষে জোর
প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু
কুরআন ও হাদীস এ সম্পর্কে কি বলে?
.
পর্যালোচনাঃ
আল্লাহ তা’আলা নিরাকার নন, তার
আকার আছে। তিনি শুনেন, দেখেন এবং
কথা বলেন। তার হাত, পা, চেহারা, চোখ
ইত্যাদি আছে। তবে তার সাথে সৃষ্টির
কোন কিছুই তুলনীয় নয়। আল্লাহ বলেন,
“কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি
সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” 
(-সূরা আশ-শূরা ১১)।
.
সুতরাং তার আকারের সাথে কোন কিছুর
আকারের তুলনা করা যাবে না। যেমন
আল্লাহ নিজেই বলেন, “সুতরাং তোমরা
আল্লাহর কোন সাদৃশ্য বর্ণনা করো না।”
–সূরা নাহল (১৬:৭৪)।
.
অতএব আল্লাহর আকার আছে, তবে কোন
কিছুর সাথে তা তুলনীয় নয়। কুরআন ও
সহীহ হাদীসে তার আকৃতি সম্পর্কে যা
বলা হয়েছে, তার কোন রুপক বা বিকৃত
অর্থ করা যাবে না। বরং বলতে হবে
তিনি তার মত। নিম্মে কিছু উদাহারণ
দেয়া হলঃ
---------------
আল্লাহর পা ও পায়ের পাতাঃ
(১) আল্লাহ তার পদনালীর বর্ণনা দিয়ে
বলেন, “সেদিন পায়ের নলা উন্মোচিত
করা হবে এবং তাদের কে (কাফিরদেরকে) আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা
করতে পারবে না।” -সূরা কলম (৬৮:৪২)
.
(২) এ আয়াতের তাফসীরে সহীহুল
বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে
একটি হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন,
রসূল (স.) বলেছেন, “(ক্বিয়ামতের দিন)
আমাদের প্রভু পায়ের নলা উন্মুক্ত করে
দিবেন। অতঃপর সকল মুমিন পুরুষ ও নারী
তাকে সিজদা করবে। কিন্তু বাকী
থাকবে ঐসব লোক, যারা দুনিয়ায়
সিজদা করত লোক দেখানো ও প্রচারের
জন্য। তারা সিজদা করার জন্য যাবে,
কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ একখন্ড তক্তার মত
শক্ত হয়ে যাবে।” 
(-সহীহুল বুখারী
(হা/৪৯১৯, ২২: তাওহীদ প্রকাশনী);
(হা/৪৫৫৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
.
(৩) আল্লাহ তা‘আলার পা সম্পর্কে
আল্লাহর রসূল (স.) বলেন, “জাহান্নামে
(জাহান্নামীদের) নিক্ষেপ করা হতে
থাকবে আর সে (জাহান্নাম) বলবে,
আরো আছে কি? শেষ পর্যন্ত বিশ্ব
জাহানের প্রতিপালক তাতে পা
রাখবেন। তাতে জাহান্নামরে
একাংশের সাথে আরেক অংশ মিশে
যাবে। অতঃপর জাহান্নাম বলবে,
তোমার প্রতিপত্তি ও মর্যাদার শপথ!
যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।”
(-সহীহুল বুখারী (হা/৭৩৮৪, ৪৮৪৮: তাওহীদ
প্রকাশনী); (হা/৬৮৮০: ইসলামিক
ফাউন্ডেশন) এবং সহীহ মুসলিম (হা/২৮৪৮:
ফুয়াদ আল-বাকী কর্তৃক প্রদত্ত);
(হা/৭০৬৯, ৭০৭১: হাদীস একাডেমী);
(হা/৬৯১৪, ৬৯১৬: ইসলামিক ফাউন্ডেশন);
(হা/৬৯৭১, ৬৯৭৩: ইসলামিক সেন্টার)
.
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেছেন,
“কুরসী হচ্ছে আল্লাহর দুটি পায়ের পাতা
রাখার জায়গা।” –মুসতাদরেক হাকিম
(খন্ডঃ ২; পৃষ্ঠাঃ ২৮২)
--------------
আল্লাহর চোখঃ
আল্লাহ তা’আলা নিজের দেখার
ব্যাপারে কুরআনের (৫০) পঞ্চাশটি
আয়াতে প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু আইন
(চোখ) ও আইয়ুন (চোখগুলো) শব্দ 
.
(৫) পাঁচটি আয়াতে ব্যবহার করেছেন। -ঈমান
ও আক্বীদা (পৃষ্ঠাঃ ৬২-৬৩: আল্লামা
‘আলীমুদ্দীন একাডেমী; লেখকঃ হাফিয
শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবী)
এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস থেকে
কয়েকটি দলীল পেশ করা হলঃ
(১) আল্লাহ বলেন, “হে নূহ! তুমি আমার
চোখের সামনে আর আমার ওয়াহী
মোতাবেক নেীকাটি তৈরী কর।” –সূরা
হুদ (১১:৩৭) এবং সূরা মু’মিনূন (২৩:২৭)
.
(২) আল্লাহ আরো বলেন, “তখন নূহ (আ.)
আরোহন করালাম কাঠ ও পেরেক
নির্মেত এক নৌযানে, যা আমার চোখের
সামনে চললো…” –সূরা ক্বামার
(৫৪:১৩-১৪)
.
(৩) আল্লাহ বলেন, “(হে মূসা!) আমি আমার
পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালবাসা
ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার
চোখের সামনে প্রতিপালিত হতে পার।”
–সূরা ত্ব-হা (২০:৩৯)
.
(৪) আল্লাহ বলেন, “(হে মুহাম্মদ!) তুমি
তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের
অপেক্ষায় ধৈর্য ধারণ কর। তুমি আমার
চোখের সামনেই রয়েছ।” –সূরা তূর (৫২:৪৮)
.
(৫) অন্যদিকে রসূল (স.) বলেছেন, “নিশ্চয়
আল্লাহ অন্ধ নন। সাবধান! নিশ্চয়ই
দাজ্জালের ডান চোখ কানা। তার
চোখটি একটি ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের
মত।” -সহীহুল বুখারী (হা/৩৪৩৯, ৩০৫৭, ৩৩৩৭,
৪৪০২, ৬১৭৫, ৭১২৩, ৭১২৭, ৭৪০৭: তাওহীদ
প্রকাশনী); (হা/৩১৯৪: ইসলামিক
ফাউন্ডেশন)
.
সুতরাং কুরআন ও হাদীস থেকে বুঝা যায়
যে, আল্লাহ তা’আলার প্রকৃতই চোখ
আছে। আর এটাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য
করা যাবে না। কারণ আল্লাহর কোন
তুলনা নেই।
-----------
আল্লাহ তা’আলা সবকিছু শুনেন, দেখেন
এবং জানেনঃ আল্লাহ সব কিছু দেখেন, শোনেন। তিনি এ বিশ্বজাহান ও সমস্ত সৃষ্টির একমাত্র
স্রষ্টা, নিয়ন্তা ও পরিচালক। তিনি
মানুষকে রিযিক দান করেন,
রোগাক্রান্ত করেন ও আরোগ্য দান
করেন, উপকার-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণ
বিধান করেন। তিনি জীবন-মৃত্যুর মালিক,
সকল সমস্যার একমাত্র সমাধানদাতা। ।
সুতরাং তার আকার নেই, একথা স্বীকার
করা তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করারই
নামান্তর। কুরআন ও হাদীস থেকে
দলীলঃ
(১) আল্লাহ বলেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ
নয়, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা
আশ শূরা (৪২:১১)
.
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।”
-সূরা আন নিসা (৪:৫৮)
.
(৩) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “ওটা এজন্য যে,
আল্লাহ রাত্রিকে প্রবিষ্ট করেন
দিবসের মধ্যে এবং দিবসকে প্রবিষ্ট
করেন রাত্রির মধ্যে এবং আল্লাহ
সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।” -সূরা হজ্জ
(২২:৬১)
.
(৪) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “হে নাবী! তুমি
বল, তারা কত কাল ছিল, আল্লাহই তা
ভাল জানেন, আকাশমন্ডলীর ও পৃথিবীর
অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তারই। তিনি কত
সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।”
-সূরা কাহাফ (১৮:২৬)
.
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, “সমস্ত
সৃষ্টজীবকে আল্লাহ তা‘আলা দেখেন ও
তাদের সকল কথা শুনেন। তার নিকট কোন
কিছুই গোপন থাকে না।” –তাফসীরে
ত্বাবারী (খন্ডঃ ১৫; পৃষ্ঠাঃ ২৩২)
ক্বাতাদা (রহঃ) বলেন, “আল্লাহর থেকে
কেউ বেশী দেখেন না ও শুনেন না।” –
তাফসীরে ত্বাবারী (খন্ডঃ ১৫; পৃষ্ঠাঃ
২৩২)
.
ইবনু যায়েদ (রহঃ) বলেন, “আল্লাহ
তা‘আলা সৃষ্টজীবের সকল কাজকর্ম
দেখেন এবং তাদের সকল কথা শুনেন।
তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” –
তাফসীরে ত্বাবারী (খন্ডঃ ১৫; পৃষ্ঠাঃ
২৩২ বাগাবী (রহঃ) বলেন, “সমস্ত সৃষ্টজীব
যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ
তা‘আলা তাদের দেখেন এবং তাদের
সর্বপ্রকার কথা শ্রবণ করেন। তার দেখার
ও শুনার বাইরে কোন কিছুই নেই।” –
মা’আলিমুত তানযীল (খন্ডঃ ৫; পৃষ্ঠাঃ
১৬৫)
.
(৫) আল্লাহ তা’আলা মূসা ও হারূণ (আঃ)-
কে লক্ষ্য করে বলেন, “তোমরা ভয় করো
না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি,
আমি শুনি ও আমি দেখি।” -সূরা ত্ব-হা
(২০:৪৬)
.
এখানে আল্লাহ মূসা ও হারূণের সাথে
থাকার অর্থ হচ্ছে- তিনি আরশের উপর
সমাসীন। আর মূসা ও হারূণ (আঃ)-এর
উভয়ের সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে
এবং তিনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণ
করছেন।
.
(৬) আল্লাহ আরো বলেন, “কখনই নয়, অতএব
তোমরা উভয়ে আমার নিদর্শন সহ যাও,
আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি
শ্রবণকারী।” -সূরা আশ শূ’আরা (২৬/১৫)।
পূর্বোক্ত ব্যাখ্যাই এখানে প্রযোজ্য।
.
(৭) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “তারা কি মনে
করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও
গোপন পরামর্শের খবর রাখি না? অবশ্যই
রাখি। আমার ফেরেশতারা তো তাদের
নিকট অবস্থান করে সব কিছু লিপিবদ্ধ
করেন।” -সূরা যুখরুফ (৪৩:৮০)
.
(৮) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “হে নাবী! তুমি
বলে দাও, তোমরা কাজ করতে থাক,
আল্লাহ তো তেমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য
করবেন।” -সূরা তওবা (৯:১০৫)
.
(৯) আল্লাহ আরো বলেন, “সে কি অবগত
নয় যে, আল্লাহ দেখেন?” 
-সূরা আলাক্ব (৯৬:১৪)
.
(১০) আল্লাহ বলেন, “(আল্লাহ) তোমাকে
দেখেন যখন তুমি (সলাতের জন্য)
দন্ডায়মান হও এবং দেখেন
সিজদাকারীদের সাথে তোমার
উঠাবসা। তিনি তো সর্বশ্রোতা,
সর্বজ্ঞ।” -সূরা শু’আরা (২৬:২১৮-২২০)
.
(১১) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “অবশ্যই
আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন,
যারা বলে যে আল্লাহ দরিদ্র আর আমরা
ধনী। তারা যা বলেছে তা এবং
অন্যায়ভাবে তাদের নাবীদের হত্যা
করার বিষয় আমি লিপিবদ্ধ করব এবং
বলব, তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর।” 
(-সূরা আলে ইমরান (৩:১৮১)
.
(১২) আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “আল্লাহ
অবশ্যই শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে
তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে
বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকটও
ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের
কথোপকথন শুনেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ
সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” 
(-সূরা মুজাদালাহ (৫৮:১)
.
(১৩) আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ বান্দদিগকে
সর্বক্ষণ দেখেন বা লক্ষ্য রাখেন।” –সূরা
আল ইমরান (৩:১৫)
.
(১৪) আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ সে সব কিছুই
দেখতে পান যা তোমরা কর।” –সূরা
বাকারাহ (২:৯৬)
.
(১৫) আল্লাহর রসূল (স.) সাহাবাদেরকে
বলেছিলেন, “তোমরা বধির কিংবা
অনুপস্থিতকে ডাকছ না; বরং তোমরা
ডাকছ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ও
নিকটতমকে।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৩৮৬,
২৯৯২: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬৮৮৩:
ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
.
(১৬) আয়িশাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নাবী (স.) বলেছেনঃ “জিবরীল
আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, আল্লাহ
আপনার কওমের (কাফির) লোকদের কথা
শুনছেন এবং তারা (কাফিররা) আপনাকে
যে জবাব দিয়েছে তাও তিনি শুনছেন।” -
সহীহুল বুখারী (হা/৭৩৮৯, ৩২৩১: তাওহীদ
প্রকাশনী); (হা/৬৮৮৫: ইসলামিক
ফাউন্ডেশন)
.
(১৭) আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, “একদিন বায়তুল্লাহর নিকট
একত্রিত হল দু‘জন সাকাফী ও একছন
কুরাইশী অথবা দু‘জন কুরাইশী ও একজন
সাকাফী। তাদের পেটে চর্বি ছিল
বেশী, কিন্তু তাদের অন্তরে বুঝার
ক্ষমতা ছিল কম। তাদের একজন বলল,
তোমাদের অভিমত কি? আমরা যা বলছি
আল্লাহ কি সবই শুনতে পান? দ্বিতীয়
ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ শোনেন, যদি আমরা
উচ্চস্বরে বলি। আমরা চুপি চুপি বললে
তিনি শুনেন না। তৃতীয়জন বলল, যদি তিনি
উচ্চস্বরে বললে শোনেন, তবে তিনি নিচু
স্বরে বললেও শুনবেন। এরই পেক্ষিতে
আল্লাহ নিম্মোক্ত আয়াত নাযিল
করলেন, “(দুনিয়ায় নিজেদের শরীরের
অংশগুলোকে তোমরা) এই ভেবে গোপন
করতে না যে, না তোমাদের কান, না
তোমাদের চোখ আর না তোমাদের
চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে।
বরং তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা
কর তার অধিকাংশই আল্লাহ জানেন না।
[সূরা ফুসসিলাত (৪১:২২)]” -সহীহুল বুখারী
(হা/৭৫২১, ৪৮১৬: তাওহীদ প্রকাশনী);
(হা/৭০১৩: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
.
(১৮) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয়ই
আল্লাহ সর্বশ্রোতা, ও সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা
হজ্জ (২২:৭৫)
.
আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, “এ আয়াতটিই
হচ্ছে জাহমিয়্যা সম্প্রদায়ের বাতিল
কথার প্রত্যুত্তর। কেননা জাহমিয়্যা
সম্প্রদায় আল্লাহর নাম ও গুনবাচক নাম
কোনটাই সাব্যস্ত করে না। সাথে সাথে
আল্লাহ তা’আলা যে দেখেন ও শুনেন
এটাও সাব্যস্ত করে না এ ধারনায় যে,
সৃষ্টির সাথে আল্লাহর সাদৃশ্য হবে।
তাদের এ ধারণা বাতিল। এজন্য যে,
তারা আল্লাহকে মুর্তির সাথে সাদৃশ্য
করে দিল। কারণ মুর্তি শুনেও না দেখেও
না।” –মা’আরিজুল কবূল (খন্ডঃ ১; পৃষ্ঠাঃ
৩০০-৩০৪)
.
মু‘তাযিলা সম্প্রদায় বলে, আল্লাহর কর্ণ
আছে কিন্তু শুনেন না, চক্ষু আছে কিন্তু
দেখেন না। এভাবে তারা আল্লাহর সমস্ত
গুণকে অস্বীকার করে। অর্থাৎ কোন গুণ-
বৈশিষ্ট ছাড়া তারা শুধু নামগুলো
সাব্যস্ত করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের মতবাদ
জাহমিয়্যাদের মতবাদের ন্যায়। তাদের
উভয় মতবাদই কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী।
পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত
কোন কিছুর সাথে তুলনা ব্যতিরেখে
আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করে ঠিক
সেভাবেই, যেভাবে কুরআন ও হাদীস
সাব্যস্ত করে। যেমন আল্লাহ বলেন,
“কোন কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনি
সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” -সূরা আশ শূরা
(৪২:১১)
.
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, “সুতরাং
তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য স্থির
করো না।” -সূরা নাহল (১৬:৭৪)
.
আল্লাহ তা’আলা যে শুনেন এবং দেখেন,
এটা কোন সৃষ্টির শুনা ও দেখার সাথে
তুলনা করা নিষেধ। আল্লাহর দেখা ও
শুনা তেমন, যেমন তার জন্য শোভা পায়।
এ দেখা-শুনা সৃষ্টির দেখা ও শুনার সাথে
সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। –মা’আরিজুল কবূল (খন্ডঃ
১; পৃষ্ঠাঃ ৩০৪)
.
আল্লাহর সাথে সৃষ্টজীবের সাদৃশ্য করা
হারাম। কারণঃ
(১) আল্লাহর জাত ও সিফাত তথা আল্লাহ
তা’আলার সত্ত্বা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং
সৃষ্টজীবের গুণ-বৈশিষ্ট্য এক নয়।
প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে এবং
সেটা তার জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহ
তা’আলা সর্বদা জীবিত আছেন ও
থাকবেন। কিন্তু সৃষ্টিকুলকে মৃত্যুবরণ
করতেই হবে। আল্লাহ তা’আলাকে নিদ্রা
এমনকি তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না
কিন্তু সৃষ্টকুলের ঘুম/নিদ্রা ছাড়া চলে
না। তাহলে কি করে আল্লাহর সাথে
সৃষ্টজীবের তুলনা করা যায়।
.
(২) সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য
করায় সৃষ্টিকর্তার মান-ইজ্জত নষ্ট হয়।
ত্রুটিযুক্ত সৃষ্টিজীবের সাথে ত্রুটিমুক্ত
মহান ও পবিত্র আল্লাহ তা’আলাকে
তুলনা করা হলে আল্লাহকে অপমান করা
হয়।

(৩) স্রষ্টা ও সৃষ্টজীবের নাম ও গুণ রয়েছে
কিন্তু উভয়ের প্রকৃতি এক নয়।
....চলবে..ইনশাআল্লাহ ...

No comments:

Post a Comment