Monday, July 24, 2017

বিদাতিদের কাছে মিলাদুন্নবি জায়েজ কেন ও তার জওয়াব--------





বিদাতিদের কাছে মিলাদুন্নবি জায়েজ কেন ও তার জওয়াব--------
যারা বেদআতে লিপ্ত তারা অনেক সময় তাদের বেদআতি কাজকে সঠিক বলে প্রমাণ করার জন্য কুরআন বা হাদীস থেকেও উদ্ধৃতি দেন, যদিও তার পন্থা-পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়।
ঈদে মীলাদের ব্যাপারে তাদের অনেকে বলেন ঈদে মীলাদ বা রাসূলে কারীম সা. এর জন্ম দিন পালন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসটি হল:

সাহাবী আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সা. কে সোমবারে রোযা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, “এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।” (বর্ণনায় : মুসলিম)
তারা এ হাদীস পেশ করে বলতে চান যে আল্লাহর রাসূল সা. সোমবার দিনে জন্মগ্র্রহণ করেছেন বলে ঐ দিনে রোযা পালন করে তা উদযাপন করাকে সুন্নাত করেছেন। তাই জন্মদিন পালন এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
জ ও য়া ব
এক. আল্লাহর রাসূল সা. শুধু জন্ম দিনের কারণে সোমবার রোযা রাখতে বলেননি। বরং বৃহস্পতিবারও রোযা রাখাকে সুন্নাত করেছেন। সেটা তাঁর জন্মদিন নয়।

হাদীসে এসেছে ঃ
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন ঃ “সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযাদার থাকব।” (বর্ণনায়: মুসলিম ও তিরমীজি)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝে আসে। তা হল:
দুই. যদি জন্মদিবসের কারণে রোযা রাখার বিধান হত তাহলে শুধু সোমবারে রোজা রাখা সুন্নাত হত। কিন্তু তা হয়নি, বরং বৃহস্পতিবার ও সোমবার সপ্তাহে দুদিন রোযা রাখাকে সুন্নাত করা হয়েছে। তাই এ রোযার কারণ শুধু জন্ম দিবস নয়।
তিন. এ দু দিনে রোযা সুন্নাত হওয়ার কারণ হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমল পেশ হওয়া।
চার. সোমবারের ফজীলত দু কারণে। জন্মদিন ও নবুওয়াত প্রাপ্তি বা কুরআন নাযিল। শুধু জন্ম দিন হিসেবে নয়।
পাঁচ. রাসুলে কারীম সা. তার জন্মদিন সোমবারে ঈদ পালন করতে বলেননি বরং ঈদের বিরোধীতা করে রোযা রাখতে বলেছেন।
ছয়. রোযা হল ঈদের বিপরীত। রোযা রাখলে সে দিন ঈদ করা যায় না, ঈদ ও রোযা কোন দিন এক তারিখে হয় না। হাদীসের দাবি হল রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্মদিনে রোযা রাখা। কিন্তুরোযা না রেখে তার বিপরীতে পালন করার পেছনে কি যুক্তি থাকতে পারে?
সাত. তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া যায় যে এ হাদীসটিতে রাসূলের জন্মদিন পালনের ইঙ্গিত রয়েছে। তাহলে হাদীস অনুযায়ী প্রতি সোমবার কেন ঈদ পালন করা হচ্ছে না? সোমবারেও নয় বরং ঈদ পালন করা হচ্ছে বছরে একবার রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে। সে দিন সোমবার না হলেও পালিত হয়। এ হাদীসে কি ১২ই রবিউল আউয়ালে জন্মদিন পালন করতে বলা হয়েছে?
আট. যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় উল্লেখিত হাদীসটি রাসূল সা. এর জন্মদিন পালন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে তা হলে আমি বলব হ্যাঁ, হাদীসটিতে জন্মদিবস কিভাবে পালন করতে হবে তাও বলে দেয়া হয়েছে। তা হল ঐ দিনে রোযা রাখা। কিন্তু ঐ দিনে রোযা না রেখে বেশী খাওয়া দাওয়া করা হয়। ঈদ নাম দিয়ে রোযা রাখার বিরোধিতা করা হয়। তা হলে তাদের কাছে রোযা রাখার সুন্নাতের চেয়ে খাওয়া-দাওয়া বেশী প্রিয়? মনে রাখা উচিত প্রেম মুহাব্বাতের সত্যিকার প্রমাণ হল ত্যাগ ও কুরবানী করা, উপোস থাকা, কষ্ট স্বীকার করা। খাওয়া-দাওয়া ও আমোদ-ফুর্তি নয়। মুখে নবী প্রেমের দাবি ও কাজ-কর্মে তার আদর্শের বিরোধিতা করার নাম কখনো মুহাব্বাত হতে পারে না। বরং বলা চলে ধোকাবাজি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন! আমীন।

No comments:

Post a Comment