Saturday, November 4, 2017

প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?



Image may contain: night and text


প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?
উত্তর: আল্লাহ আসমানের উপর আছেন, তার সম্মান অনুযায়ী, কোন সৃষ্টির সাদৃশ্য হয়ে নয়। কারণ এ সিফাতসমূহ আল্লাহ তাআলার পূর্ণতা প্রকাশ করে। তা আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং তাঁর কিতাবে স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর হাদীসেও তা বিদৃত করেছেন। আর সত্যিকারের ফিতরতও তা স্বীকার করে, আর সত্যিকারের বুদ্ধি বিবেচনাও তা মেন নেয়।
কোরআন, সহীহ হাদীস, সৎ বুদ্ধি, সহীহ অনুভূতি সমস্ত কিছুই সমর্থন করে যে আল্লাহ আরশের উপর আছেন:
🔴🔴 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন:
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ﴿طه5﴾
পরম করুণাময় আরশের উপর আছেন।
📚(সূরা তাহা, ২০: ৫ আয়াত।)

🔴🔴 অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন:
أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْض(الملك 16)
তোমরা তার থেকে নির্ভয় হয়ে গেলে যিনি আসমানে আছেন, আর তিনি তোমাদের সহকারে জমিনকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?
📚(সূরা মূলক ৬৭: ১৬ আয়াত)।

🔴🔴 আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন:
يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ(النحل50)
তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে। 
📚(সূরা নাহল,১৬: ৫০ আয়াত)।

🔴🔴 আল্লাহ তা'আলা ইসা (আ:) সম্বন্ধে বলেন:
بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ(النساء 158)
বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকটে উত্তলন করে নিয়েছেন। 
📚(সূরা নিসা, ৪: ১৫৮ আয়াত)।

🔴🔴 তিঁনি আরও বলেন:
وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ(الأنعام3)
আর তিঁনিই আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। 
📚(সূরা আনআম ৬: ৩ আয়াত)।

এ সমস্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর (রহ:) বলেন: তাফসীরকারকগণ এ ব্যপারে একমত পোষণ করেন যে, “তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঐভাবে বর্ণনা করবেন না যেভাবে জাহমীয়ারা (একটি ভ্রষ্ট দল) বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র আছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের এ জাতীয় কথা হতে পাক পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে।”
🔴🔴 আল্লাহ তা'আলার বাণী:
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ(الحديد 4)
তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। 
📚(সূরা হাদীদ, ৫৭: ৪ আয়াত)।

অত্র আয়াতের ব্যখ্যা হল; নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা আমাদের সাথে আছেন দেখার দ্বারা, শ্রবনের দ্বারা, যা বর্ণিত আছে তফসীরে জালালাইন ও ইবনে কাসীরে। এই আয়াতের পূর্বের ও শেষের অংশ এ কথারই ব্যখ্যা প্রদান করে।
🔵🔵 রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সপ্তম আসমানের উপর উঠানো হয়েছিল, তাঁর রবের সাথে কথোপকথনের জন্য। আর সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। 
📚(বুখারী ও মুসলিম)।

🔵🔵 রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
ألاَ تأمَنُونيِْْ وَأنا أمِينُ مَنْ فيِ السَّمَاء (وهو اللهُ) (ومعني في السَّماء: علي السَّمَاء) (متفق عليه)
তোমরা কি আমাকে আমিন (বিশ্বাসী) বলে স্বীকার কর না? আমি তো ঐ সত্ত্বার নিকট আমিন বলে পরিগণিত যিনি আসমানের উপর আছেন। (আর তিনি হলেন আল্লাহ)। 
📚(বুখারী ও মুসলিম)।

🔵🔵 রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেছেন:
ارْحَمُوا مَنْ فيِ الارضِ يَرْحَمكٌمْ مَنْ في السَّمَاء (أي هو الله) (الترمذي وقال حسن صحيح)
যারা জমিনে আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তবেই যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। 
📚(তিরমিযী হাসান সহীহ)।

🔵🔵 অন্য হাদীসে এসেছে:
سأَلَ رَسُولُ الله صلي الله عليه وسلَّمَ جَارِيَةً فَقَالَ لَهَا: أيْنَ اللهَ؟ فَقَالَتْ في السَّماءِ قَالَ مَنْ أنا؟ قَالَتْ أنْتَ رَسٌولُ اللهِ قَالَ: أعْتِقْهَا فإنَّها مُؤْمِنَةً . (مسلم)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করলেন: বলতো আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আসমানে। তারপর তিনি বললেন: বলতো আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্ত করে দাও, কারণ সে মুমিনা। 
📚(মুসলিম)

🔵🔵 অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
وَالْعَرْشُ فَوْقَ الْمَاء وَاللهُ فَوْقَ عَرْشِهِ وَهُوَ يَعْلَمُ مَا انتُمْ عَلَيْهِ. (حسن رواه أبو داود)
আরশ পানির উপর আর আল্লাহ আরশের উপর। তৎসত্তেও, তোমরা কি কর বা না কর তিনি তা জ্ঞাত আছেন। 
📚(আবু দাউদ হাসান)

🔵🔵 আবু বকর রা. বলেছেন:
ومَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فإنَّ اللهَ فيِ السماء حَيٌّ لا يمُوتُ (رواه الدارمي في الرد غلي الجهمية باسناد صحيح)
যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা আসমানের উপর জীবিত আছেন, কখনোই মৃত্যুমুখে পতিত হবেন না। 📚(সুনানে দারেমী সহীহ সনদ) জাহমীয়াদের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ:)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা কিভাবে আমাদের রব সম্বন্ধে জানতে পারব? উত্তরে তিনি বলেছেন: তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি হতে আলাদা হয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের জাত আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি থেকে আলাদা হয়ে। তার এই উপরে থাকা সৃষ্টির সাথে কোন সামঞ্জস্য নেই।
চার ইমামগণই এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপর আছেন, তিনি তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন।
সুস্থ বুদ্ধি, বিবেক, আল্লাহ যে আসমানে আছেন তা সমর্থন করে। যদি তিনি সর্বত্রই বিরাজমান হতেন তবে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা জানতেন এবং সাহাবীদের শিক্ষা দিতেন। দুনিয়ার বুকে এমন অনেক নাপাক অপবিত্র জায়গা আছে যেখানে তাঁর থাকার প্রশ্নই উঠে না।

No comments:

Post a Comment