Wednesday, November 1, 2017

প্রশ্ন --> না ঘুমিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায় কি ? সওয়াব কি সমান হয় ?



Image may contain: one or more people and text


প্রশ্ন --> না ঘুমিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায় কি ? সওয়াব কি সমান হয় ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
তাহাজ্জুদের সালাতের গুরুত্ব অনেক ।
# আবু হুরাইরা (রা) বলেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন , "ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে (শেষ) রাতের সালাত।" (মুসলিম )
এ নামায রাতের শেষ তৃতীয়াংশ ঘুম থেকে উঠৈ আদায় করা উত্তম । কারণ-
# “আল্লাহ তা‘আলা 'প্রতি রাতের শেষাংশে – শেষ তৃতীয়াংশে'- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, মুসলিম হাদীস নং ৭৫৮]

তবে না ঘুমিয়ে এই সালাত আদায় করা যাবে কিনা এব্যাপারে আলেমদের মধ্যে দুটি মত আছে । একদল বলেন অবশ্যই ঘুমাতে হবে ও শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তে হবে । আরেক মত হচ্ছে না ঘুমিয়েও পড়া যাবে মধ্যরাতের পর যে কোন সময়। তবে আমরা যা বুঝতে পারি সামগ্রিক ভাবে না ঘুমিয়ে বা না ঘুম আসলেও তাহাজ্জুদ পড়া যাবে ।
কিন্তু না ঘুমিয়ে তাহাজ্জুদ পড়লে সওয়াব কম হবে আমরা আলেমদের মত হতে জানতে পারি ।
ঘুম হচ্ছে আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত । আল্লাহ বলেন -
• "তাঁর আরও নিদর্শনঃ রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয়ই এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।" (সূরা রুম : 23)

এবং এই ঘুম ত্যাগ করে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় হল অত্যধিক সওয়াবের কাজ । কারণ এখানে প্রথম সওয়াব হচ্ছে আপনি এই ঘুম ত্যাগ করে সালাতের জন্য উঠলেন এবং তার পর আবার সওয়াব হচ্ছে সালাতের জন্য । অর্থাৎ দুই কাজে অনেক সওয়াব হচ্ছে । যা আপনি না ঘুমিয়ে শুধু সালাত পড়লে হচ্ছে না ।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয় আমরা হাদিসে পাই সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল । (বুখারী) এবং পুরস্কার সবই আল্লাহর হাতে ।
সুতরাং আপনি নামাযের নিয়ত করে রাত জাগলেন এবং নামায পড়লেন এতে যে পরিমাণ সওয়াব হবে তা নিশ্চয়ই নিয়ত ছাড়া শুধু রাত জেগে শেষে নামায পড়ে প্রাপ্ত সওয়াবের চেয়ে বেশি। কারণ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনার নামাজ পড়ার নিয়ত ছিল না শুধু ঘুম আসছেনা বলে আপনি শেষে ভাবলেন এখন নামাজ পড়ে নেই । ( শুধু নিয়ত করলে একটি সওয়াব লেখা হয় এবং তা কর্মে পরিণত করলে আরেকটি সওয়াব মোট দুইটি সওয়াব পাওয়া যায় । )
তাহাজ্জুদে ছোট সুরা দিয়েই লম্বা কেরাত করা যাবে:
~~~
অনেকেরই কুরআনের সামান্য অংশ বা মাত্র কয়েকটি ছোট সূরা মুখস্থ। এজন্য তাহাজ্জুদের দীর্ঘ তিলাওয়াতের সুন্নাত পালন তাদের জন্য কষ্টকর। কিন্তু নিম্নের বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখলে সুন্নাত পদ্ধতিতে তাহাজ্জুদ পালন সহজ হবে:
(ক) বড় সূরা মুখস্থ না থাকলে আমরা তাহাজ্জুদের প্রতি রাকআতে সাধ্যমত কয়েকটি সূরা পড়তে পারি। যেমন প্রথম রাকআতে ফীল, কুরাইশ, মাঊন, কাওসার... পড়া এবং দ্বিতীয় রাকআতে কাফিরূন, নাসর, লাহাব... পড়া। প্রত্যেকে নিজের মুখস্থ সূরাগুলোকে এভাবে ভাগ করে নিতে পারেন।
(খ) আমরা প্রত্যেকেই তাহাজ্জুদ বা কিয়ামুল্লাইল সালাতে রুকু ও সাজদার তাসবীহ দীর্ঘ সময় অনেক বার পড়তে চেষ্টা করব। এছাড়া রুকু ও সাজদার অতিরিক্ত কিছু যিকর মুখস্থ করে তা বারবার পাঠ করতে চেষ্টা করব। গণনা বা সংখ্যার দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী নয়।
(গ) রুকুর পরের দাঁড়ানো এবং বিশেষ করে দু সাজদার মাঝে বসা সাধ্যমত দীর্ঘ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাহাজ্জুদে দু সাজদার মাঝে বারবার ‘রাব্বিগফিরলী’ ‘হে আমার রব্ব আমাকে ক্ষমা করুন’ বলে বলে দীর্ঘ সময় কাটাতেন।
(ঘ) পঠিত সূরা, যিকর ও দুআগুলোর অর্থ গুরুত্ব সহকারে শিখতে হবে। যেন তাহাজ্জুদের প্রকৃত আনন্দ, বরকত ও ফলাফল লাভ করা যায়।
--------->>> 
সহীহ মাসনূন ওযীফা ৪০পৃ.
ড: খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

No comments:

Post a Comment