Wednesday, November 1, 2017

শিরক-বিদ’আতের সর্বগ্রাসী ছোবল থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করুন।



Image may contain: 1 person, text


🍀🌸 اَلسَّلاَمْ عَلَيْــــــــــــــــــــكُمْ وَ رَحْمَةُ اللَّهِ وَ بَرَكَاتُهُ 🍀🌸
.
বিজ্ঞ পাঠক-পাঠিকা!
মুসলমানদের জীবনে তাওহীদ হচ্ছে সর্বপ্রথম জিনিস যা জানা ও
বোঝা সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় ফরজ।
.
তাওহীদের বাস্তবায়নের মাঝেই
ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। তাওহীদ বিহীন কোন আমলই গ্রহণীয় নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদাহ হচ্ছে
এই যে, তারা আল্লাহ, তাঁর সমুদয় ফিরিস্তা, তাঁর ঐশী গ্রন্থাবলী, সকল
রাসূল, আখিরাত এবং তাকদীরের ভালমন্দের উপর ঈমান রাখে। তারা
সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহই একমাত্র রব, ইলাহ এবং মা‘বুদ। পূর্ণাংগ
কামালিয়াতের দ্বারা তিনি একক বৈশিষ্টের অধিকারী। 
.
তাই নিষ্ঠার সাথে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে। তাওহীদ তিনটি
শাখায় বিভক্ত:
.
১) প্রথম শ্রেণীর তাওহীদ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার একত্বকে দৃঢ়তার সাথে মেনে নেয়া। আল্লাহই সকল বস্তুকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। বিশ্বে যা কিছু আছে এবং পুরা বিশ্ব জগতের তিনি একক স্রষ্টা, প্রতিপালক এবং রক্ষাকারী। এবং এসব সৃষ্টির প্রতি তার কোন
মুখাপেক্ষিতা নেই।
.
২) তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত হচ্ছে, আল্লাহর মূলসত্বা ও গুণাবলীতে বিশ্বাস করা। আল্লাহকে সেই নামেই ডাকতে হবে যে নাম তিনি নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কোন নব উদ্ভাবিত নামে তাঁকে ডাকা যাবে না। আল্লাহর কোন গুণকে মানুষের কোন গুণের সাথে
তুলনা করা যাবে না। আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে:
.
কোন বস্তুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন। (সূরা শুরা : ১১)
.
যদিও দেখা ও শোনা মানুষের জন্যও প্রযোজ্য। কিন্তু মানুষের দেখার
জন্য চোখ, শোনার জন্য কানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বার
জন্য এসব চোখ, কান নাক ইত্যাদির প্রয়োজন হয়না। ঠিক তেমনিভাবে
আল্লাহর ৯৯ টি নামের সঙ্গে মানুষের নাম রাখা যাবে না। তবে
আল্লাহর সিফাতের সঙ্গে একটি শব্দ ব্যবহার করে নাম রাখা যেতে
পারে। যেমন আব্দুর রহীম আব্দুল করিম ইত্যাদি।
.
৩) তাওহীদ আল ইবাদত এর অর্থ ইবাদাত ক্ষেত্রেও আল্লাহর
একত্ববাদকে সংরক্ষণ করতে হবে। ইবাদাত অর্থ দাসত্ব করা। সালাত
বা দাসত্বের একটি আনুষ্ঠানিক রূপ। অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা
আছে আনুষ্ঠানিক সালাতই সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইবাদত। কিন্তু
ইসলামে ইবাদাত এর ধারণা অত্যন্ত ব্যাপক। ইসলামে ইবাদাত হল
আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, আত্মসমর্পণ এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়
থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। আর এ ইবাদত কেবল এক ও অদ্বিতীয়
আল্লাহর জন্য, অন্য কারও জন্য নয়। একথা সর্বজনবিদিত যে মক্কার
বিধর্মীরা জানত আল্লাহই তাদের সৃষ্টিকর্তা। প্রতিপালক, জীবিকাদাতা, মালিক। তথাপি তারা মুসলিম ছিলনা। কেননা আল্লাহর পাশাপাশি অন্য দেব- দেবীর পূজা করত। আল্লাহ তাদের
কাফের মুশরেক আখ্যায়িত করেছেন।
.
তাদের সম্পর্কে আল কুরআনে
সুষ্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে :
.
আপনি বলুন! কে তাদেরকে রিযিক দান করেন, আসমান ও যমিন থেকে?
অথবা, তিনি কে যার কর্তৃত্বের অধীনে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি এবং
কে বের করেন জীবতকে মৃত থেকে, আর কে বের করেন মৃতকে জীবিত
থেকে এবং কে যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ করেন? তারা অবশ্যই
তাৎক্ষণিকভাবে বলে দেবে আল্লাহ। তাহলে আপনি বলে দিন তবুও কি
তোমরা সতর্ক হবে না? 
(সূরা ইউনুস : ৩১)
.
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন।
আর আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে,
তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। তবুও তারা উল্টো কোন দিকে চলছে?
(সূরা যুখরূফ : ৮৭)
.
অতএব তাওহীদ আল ইবাদাত এর ব্যাপারে এক আল্লাহর অধিকার
সংরক্ষণ করা তাওহীদের গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি একাই ইবাদত পাওয়ার
অধিকারী এবং তিনিই মানুষকে ইবাদাতের কল্যাণকর প্রতিদান
দেওয়ার অধিকারী।
.
শিরক : শিরক হল অংশীদার সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য
কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। যেমন কোন ওলি কামেল, পীর
ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকা। কিংবা মৃত ব্যক্তির কবরের
নিকট যেয়ে কিছু চাওয়া, আকাংখা করা। সে হয়ত আল্লাহর
সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে কিন্তু তা সত্তেও কোন পীর, ওলি গাউছ,
কুতুব ইত্যাদিকে আল্লাহর প্রতিভূ মেনে তাদের নিকট যাবতীয় চাওয়া
পাওয়া পেশ করে। রোগ মুক্তির জন্য, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য,
সন্তান কামনায়, চাকুরীর উন্নতি ইত্যাদি দুনিয়াবী বিভিন্ন কারণে
আমরা তাদের কাছে আমাদের যাবতীয় নিবেদন পেশ করি। রাস্তায়
রাস্তায় মাজার গজিয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার লোক এসব
জায়গায় নযর নিয়াজ পেশ করছে। তাদের এই অনুভূতি নেই যে, তারা
আল্লাহর সঙ্গে শিরক করছে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এক
শ্রেণীর ভন্ডপীর। তারা কেউ কেউ নিজেই আল্লাহর আসনে সমাসীন।
(নাউযুবিল্লাহ) প্রতি বছর মহা সমারোহে তাদের ইসালে ছাওয়াবের
মাহফিল চলছে। গরু, খাসী, মুরগীর সঙ্গে চলছে হাজার হাজার টাকার
দক্ষিণা। বড় বড় গেট বানিয়ে মহা পবিত্র ওরস শরীফ আঞ্জাম দেয়া
হচ্ছে। আর এগুলোতে চলছে সরকারী এবং বিত্তবানদের পৃষ্ঠপোষকতা।
যারা সারা জীবন নামায রোযার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনা, হালাল
হারামের ধার ধারেনা তারা ধারণা করে যে, পীরের দরবারে কিছু দান করার মাধ্যমে তাদের পাপরাশি মুছে যাবে। পীরের দু‘আ পেলে তারা আল্লাহর দরবারে ক্ষমার যোগ্য হয়ে উঠবে। কিংবা পীরের
সুপারিশের মাধ্যমে তারা পুলসিরাতের সেই তরণী পার হয়ে যাবে। এ
যে কত বড় মুর্খতা তা তারা যদি বুঝত তাহলে তারা এ জাতীয়
বিভ্রান্তিতে নিপতিত হতনা। অথচ আল্লাহ বজ্র নিনাদ কন্ঠে আল
কুরআনে ঘোষণা করলেন :
.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না।
তাছাড়া তিনি অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে
ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করে সে এক মহাপাপে লিপ্ত।
(সূরা নিসা : ৪৮)
.
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন :
তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো আর তার সাথে কাউকে শরীক করোনা।
(সূরা নিসা : ৩৬)
.
নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাপ। (সূরা লুকমান : ১৩ )
.
আমরা আমাদের অজান্তে কত প্রকারের যে শিরক করে চলেছি তার
কোন ইয়ত্তা নেই। আমাদের সমাজের অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত।
তারা অজ্ঞতাবশতঃ এসব মাজারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আর কিছু লোক
সমাজে আছে যারা তাদেরকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে এসব পথে
পরিচালিত করে। কিন্তু আফসোস হয় ঐ সমস্ত তথাকথিত শিক্ষিত
লোকদের জন্য যারা বড় বড় ডিগ্রীধারী হয়েও ইসলামী জ্ঞান না থাকার কারণে তারা একদিকে সুদ ঘুষ, ব্যভিচার, মদ্যপান, কালোবাজারী ইত্যাদি পাপাচারে লিপ্ত, অথচ তারা তাদের দুর্বল
মুহুর্তে ঐসমস্ত পীরের মাজারে যেয়ে হাজার হাজার টাকার নজর
নিয়াজ দিয়ে এসে ভাবে তার সমস্ত পাপরাশি হয়ত এর মাধ্যমে ধূয়ে
মুছে সাফ হয়ে যাবে। 
.
এ সমস্ত লোকের অবস্থা বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লাহ ঘোষণা করেন:
.
আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা এমন বস্তুর উপাসনা করে যা তাদের
কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারেনা এবং বলে এরা আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী। তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত করছ, যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমিনের মাঝে? তিনি পুত-পবিত্র ও মহান। সে সমস্ত থেকে যাকে তোমরা শরীক
করছ। (সূরা ইউনুস : ১৮)
.
কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে
গেছে যে আমরা যে কোন বড় কাজ শুরু করার পূর্বে কোন না কোন
মাজার যিয়ারত করে সেই কাজটা শুরু করি। বিশেষ করে নির্বাচনী
প্রপাগান্ডা শুরুর আগে আমরা সিলেটের শাহজালাল (রহ) কিংবা খান
জাহান আলী (রহ) এবং মাজারে যেয়ে শুরু করি। আমরা মনে করি ঐসব
ওলিদের মাজারে যেয়ে তাদের মাজারে ফাতেহা পাঠ করলে তাঁরা
আমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দু‘আ করবেন।
.
হায়রে মানবকূল। ঐসব ওলি এখন আমাদের দু‘আর কাংগাল। আল্লাহর নিকট সুপারিশ করা তো দূরের কথা তাদের পক্ষে কারও ভাল মন্দ করার কোন এখাতিয়ার দেয়া হয়নি। 
.
আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহ বলেন :

কে ঐ ব্যক্তি আছে যে আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে শাফায়াত করার
অধিকার রাখে? (সূরা বাকারা : ২৫৫)

আমরা কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানতে পারি একমাত্র শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) কেই একমাত্র তার বান্দাদের জন্য সুপারিশ করার অধিকার দেয়া হবে। অথচ আমরা দুনিয়াতে কত
মাধ্যম ধরে আল্লাহর নিকট যেতে চাই। সরাসরি আল্লাহর দরবারে চাওয়ার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন :

তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সারা দিব।
.
আমি দু‘আকারীর দু‘আ কবুল করি যখন সে প্রকৃত কায়মনোবাক্যে
আমাকে ডাকে। কিন্তু এই চাওয়া পাওয়া হতে হবে একমাত্র নিরংকুশ
আল্লাহর কাছে। অন্য কারও কাছে নয়। আল্লাহ বলেন।

আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে ডাকবেনা। অথচ আমরা আমাদের চারিদিকে কি দেখতে পাই। 
.
গোলাপ শাহার মাজার, হাই কোর্ট মাজার, শাহ জালালের মাজার, মহাস্তানের শাহ সুলতান বলখীর মাজার, চট্রগ্রামে বায়জীদ বোস্তামীর মাজার, খুলনার খান জাহান আলীর মাজারসহ সারা দেশের হাজারো মাজারের অবস্থা দেখলে
আমি অস্থিরচিন্তায় ভুগি। আল্লাহর নির্দেশ কি আর আমরা করছি কি?
.
অথচ পিস টিভি চ্যানেলে এসব শিরক বিদ‘আত সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর আলেম নামধারী লোক এসব জিইয়ে তাদের রুজি রুটির অবস্থা ঠিকই বহাল রেখেছেন। অথচ আল্লাহ
সব ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বললেন:
.
(হে রাসূল) আপনি বলে দিন! হে আহলে কিতাব, এসো সে কথায় আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক ও অভিন্ন। তাহল আমরা যেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত না করি। কোনো কিছুতেই যেন তার শরীক সাব্যস্ত না করি এবং আমাদের কেউ যেন কাউকে পালনকর্তারূপে
গ্রহণ না করি আল্লাহকে ত্যাগ করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমরা বল, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা তো মুসলমান (সূরা আলে ইমরান : ৬৪)
.
কাজেই আমাদের শিরক সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। জীবনের
চলার পথে আমরা যে আমাদের অজান্তে কত প্রকার শিরকে লিপ্ত হচ্ছে তার সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আর এ জন্য আমাদের দ্বীনি জ্ঞানের অভাবই একমাত্র কারণ। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথাও
দীনি জ্ঞান শিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। তার ফলশ্রুতিতে আমরা কেউ ধর্মহীন হয়ে পড়ছি আবার কেউ ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীর প্রবক্তা হচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থায় কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান চর্চার
ব্যবস্থা থাকলে এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হতনা। আমাদের শাসনব্যবস্থা,
বিচারব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কোথাও দীনের লেশমাত্র নেই।
.
এজন্য দরকার দীনি আলেমদের ঐক্যবদ্ধতা। কিন্তু সেখানেও নানান মত
ও পথের দিশা দেখতে পাওয়া যায়। আমরা মাজহাবী আকীদার উর্দ্ধে
উঠে নির্ভেজাল কুরআন ও হাদীসের আলোকে সমাজ পরিবর্তনের
চিন্তা ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারছিনা।
.
আমরা সমাজে শির্কের পর যদি বিদ‘আতের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে
আমরা আরও ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাব। বিদ‘আত সম্পর্কে রাসূূলুল্লাহ
(সা) এরশাদ করেন।
.
যে ব্যক্তি আমার এই দীনের মাঝে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত। তিনি আরও বলেন,
.
প্রত্যেকটি নব উদ্ভাবিত জিনিষই পথভ্রষ্টতা আর পথভ্রষ্টতা দোজখের দিকে নিয়ে যায়। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা স্পষ্টভাবে
আল কুরআনে উল্লেখ করেছেন :
.
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।
আমার নিয়ামত পূর্ণরূপে তোমাদেরকে প্রদান করলাম। ইসলামকে দীন
হিসাবে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা : ৩)
.
রাসূলুল্লাহ (সা) তেইশ বছরের নবুওতী জিন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহ তার
দীনকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন। এখন এ দীনের মধ্যে কোন সংযোজন বা বিয়োজনের অবকাশ নেই। অথচ এখন এই সংযোজন ও বিয়োজনের
কাজটিই চলছে। চলছে দীনের মধ্যে বহু নতুন নতুন অনুষ্ঠান চালুর কাজ।
আর এই কাজটি চলছে এক শ্রেণীর আলেম ও ইমামের ছত্রছায়ায়।
.
মিলাদ মাহফিল, কুল খানি, চেহলাম, খতমে খাজেগান, ইদ-ই-
মিলাদুন্নবী, শবে মিরাজের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। তাছাড়াও আছে
জন্মবার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকী, পালনের হিড়িক। আরও আছে বিবাহের
নামে, ওয়ালিমার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয়ের এক বিশাল আয়োজন। আমরা সমাজে মিলাদ মাহফিল এমনভাবে প্রচলন করেছি যে, কোন কাজ শুরুর আগে মিলাদ পড়িয়ে নিজেদেরকে পূতঃপবিত্র করার এক মহা সুযোগ। এর মাধ্যমে অতিথিদের যেমন মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা হয় তেমনি ইমাম সাহেবদের পকেটে কিছু অর্থ জমা হয়। দীনের
নামে ছাওয়াবের নামে আমরা বেশ ভালই রীতি চালু করেছি।
.
আর সেই সব মিলাদে যে সমস্ত দরূদ পাঠ করা হয় তা কোন সহীহ হাদীস সম্মত নয়।
তাছাড়া সেই মাহফিলে রাসূলুল্লাহ (সা) এর আগমন ঘটে ভেবে আমরা
কিয়াম করে তাঁকে সম্মান প্রদর্শনের যে নিয়ম চালু করেছি তাও কতটা
শরীয়ত সম্মত তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আজ সমাজে কুলখানির প্রচলন
এমনভাবে চালু হয়েছে তা ভেবে আমাদের মাথা হেট হয়ে আসে। সারা
জীবন যে লোকটি আল্লাহ এবং তদীয় রাসূল (সা) এর আদর্শের অনুসারী
হওয়া তো দূরের কথা বরং তার বিরোধিতা করতে আদাজল খেয়ে
লেগেছিল, সেই লোকটি মারা যাওয়ার পরে আমরা তার জন্য কুলখানি
করছি , আবার কেউ তার জন্য চল্লিশাও করছে। সমাজে এমন বৈপরিত্য
দেখে সচেতন লোকজন অবাক না হয়ে পারেনা। আল্লাহ তাঁর দীনকে
মানুষের সামগ্রিক জীবনে পালনের নির্দেশ দিলেন এবং তাঁর প্রিয়নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন (সা) জীবনে যা বাস্তবায়িত করে
দেখিয়ে গেলেন তার ধারে কাছে না গিয়ে আমরা নিজেদের মনগড়া এমনকিছু সমাজে চালু করলাম নবী (সা) নিজে পালন করেননি। তার সাহাবায়ে কেরাম পালন করেননি, তাবেয়ীগণ পালন করেননি, আইম্মায়ে মুজতাহেদীস গণ পালন করেন নি। আজ ঈদ ই-মিলাদুন্নবীকে এমন সব নামে অভিহিত করা হচ্ছে যা আমাদেরকে কুফরীর পথে নিয়ে যায়। সব ঈদেরই সেরা ঈদ-ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। আর সেই মিলাদুন্নবী
উপলক্ষে জশনে জুলুস করা হচ্ছে। বিশাল বিশাল ব্যানার নিয়ে তথাকথিত আশেকানে রাসূলদের যে মহা সমাবেশ হচ্ছে তার মধ্যে কয়জনের নামায রোযার সঙ্গে সম্পর্ক আছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
আমরা কোন কোন পীর সাহেবের দরবারকে বাবে রহমত বলতেও কুন্ঠা বোধ
করছিনা।
.
আজ সমাজে শিরক এবং বিদ‘আতের সয়লাব এমনভাবে চলছে এটা যেন
রোধ করার কেউ নেই। পিস টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সহীহ হাদীস ভিত্তিক কিছু দিক নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও এর শ্রোতার সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। বিশেষ করে আমাদের যে শ্রেণীর
লোকজন এসব শিরক ও বিদ‘আতের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে তাদের
অধিকাংশই টিভি চ্যানেল দেখার সুযোগ পায়না। আবার পেলেও তারা
ইসলামী অনুষ্ঠান দেখা থেকে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়াল
দেখার প্রতি আগ্রহী। বিশেষ করে যুবক ও যুবতীদের মাঝে এসব হক কথা
প্রচারের কোন ব্যবস্থাই আমরা করতে পারছি না। ফলে যুব সমাজের
মাঝে কোন নৈতিকতা বোধ গড়ে উঠছেনা। মুল্যবোধের অবক্ষয়ের
কারণে তারা নানা প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে
পড়ছে। পিতামাতার অবৈধ সম্পদ থাকার কারণে তারা সহজে বিপথে
চলে যাচ্ছে। মাদকের প্রতি তাদের আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা
থার্টি ফার্ষ্ট নাইট, লাভ ডে, পয়লা বৈশাখ ইত্যাদির প্রতি বেশী
আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। অথচ আল্লাহ সাবধান বাণী উচ্চারণ করে
আমাদেরকে বলেন :
.
যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুকে দীন হিসাবে অনুসন্ধান করবে, তার নিকট থেকে তা কবুল করা হবেনা। আর আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আলে ইমরান : ৮৫
.
আল্লাহর এই সাবধান বাণী যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব
আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে যে দীন
পাঠিয়েছেন এবং যে দীন তাঁর প্রিয় নবী জীবদ্দশাতে তাঁর সমাজ ও
রাষ্ট্রে বাস্তবায়িত করে গেছেন তাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য। এবং এর
অন্যথা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। অথচ আজ দীনের নামে কত কিছু যে
সন্নিবেশিত হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। এ থেকে বাঁচার জন্য
আমাদেরকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
আজ শির্ক ও বিদ‘আতের সর্বগ্রাসী ছোবল সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে
খাচ্ছে। যার ফলে আজ আমাদের নামায রোযা, হাজ্জ, যাকাত,
কুরবানী, দান খয়রাত কোনটার মধ্যে কোন বরকত পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
.
সেজন্য আমাদেরকে সেই পথ খুঁজে পেতে হবে যে পথে আল্লাহর
আন্বিয়ায়ে কেরাম তাঁদের দীনের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন। আমরা
জানি রাসূলুল্লাহ (সা) শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দীনের দাওয়াতের
পথে কখনও নিরব থাকেননি, নীথর হয়ে পড়েননি, যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ
তাঁর মাধ্যমে দীনকে প্রতিষ্ঠিত না করেছেন। এবং আল্লাহ স্বীয়
করুনা ও বরকতের দ্বারা তার দীনের দাওয়াতকে বিশ্বের সাত
গোলার্ধে পেঁৗঁছে না দিয়েছেন ততদিন পর্যন্ত দাওয়াতে দীনকে
ক্ষান্ত করেননি। 
.
রাসূল (সা) আল্লাহর দিকে, তাঁর একত্ববাদের দিকে আহ্বান জানিয়ে সহীহ আমল পালনের উপর তাগিদ দিয়েছেন। কেননা,
যাবতীয় আমল কবুল হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে তাওহীদের উপর অচল ও
অটল থাকার উপর। আর প্রত্যেকটি আমল রাসূল (সা) এর নির্দেশিত পথে
হতে হবে। বানানো কোন জাল হাদীস বা যঈফ হাদীসের উপর আমল
করলে চলবে না।
.
তাই আজ সময় এসেছে সমাজের ব্যক্তিদের উপর, বিশেষ করে আলেম
সমাজের উপর। তাঁরা যেন সমাজের প্রচলিত শিরক ও বিদ‘আতের
বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন। তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেন দীনের
প্রকৃত রূপ সাধারণ মানুষ জানতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে
পারে। বাংলাদেশর শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ মুসলমান। কিন্তু তাদের
ঈমান ও আকীদা নিয়ে আজ ছিনিমনি খেলা হচ্ছে। আলেমরাই হচ্ছে
নবীদের উত্তরাধিকার। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :
.
আলেমগণ হচ্ছেন নবীদের উত্তরাধিকার। তাঁরা দিনার কিংবা দিরহাম
উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি। বরং তারা উত্তরাধিকার সূত্রে ইলম
পেয়েছেন। যে ব্যক্তি সেই ইলমকে আঁকড়ে ধরেছেন তিনি এক বিরাট
অংশ পেয়েছেন। আর তাই আলেমদের দায়িত্ব সর্বাধিক, আলেমগণ
শরীয়ত বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন
করে এসেছেন। আজও সেই হক্কানী আলেমদেরকেই শিরক ও বিদ‘আত
সমাজ থেকে উচ্ছেদ করার আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
আর এর জন্য হয়ত ঃ তাদেরকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কারণ
সমাজের লোকদের মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণাসমূহ বদ্ধমূল হয়ে গেছে তা
উৎখাত করতে গেলে স্বার্থান্ধ ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে বিভিন্ন
বাধা বিপত্তি আসতে পারে। ফতওয়া বাজী পরিহার করে সমাজের
সামনে ইসলামের সুমহান ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। আর এজন্য
প্রয়োজনবোধে কলমযুদ্ধ বা বাকযুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। আর তাই
রাসূলুল্লাহ (সা) যথার্থ বলেছেন :

যে ব্যক্তি সমাজের অন্যায় উৎখাতের জন্য হাত দিয়ে প্রচেষ্টা চালাবে, সে একজন প্রকৃত ঈমানদার, যে মুখের দ্বারা প্রচেষ্টা চালাবে সেই প্রকৃত ঈমানদার অথবা যারা তা পারবেনা তাহলে অন্তঃকরণে ঐসব বদ রসম- রেওয়াজকে ঘৃণা করবে সেও ঈমানদার। এর বাইরে ঈমানের সরষে পরিমাণ দানাও অবশিষ্ট নেই। আসুন আমরা সবাই মিলে সমাজের শিরক ও বিদ‘আত গুলি উৎখাতের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাই। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোক। 

No comments:

Post a Comment