Wednesday, May 16, 2018

“সন্তান-সন্ততি এবং অর্থ-সম্পদ আমাদের জন্য পরীক্ষা” এ কথার ব্যাখ্যা কি?



No automatic alt text available.

“সন্তান-সন্ততি এবং অর্থ-সম্পদ আমাদের জন্য পরীক্ষা” এ কথার ব্যাখ্যা কি?

প্রশ্ন: কুরআনের আয়াত থেকে আমরা জানি যে, পার্থিব জীবনের ধন-মাল এবং সন্তান-সন্ততি আমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। আমার প্রশ্ন হল এ পরীক্ষাটা আসলে কী রকম? দয়া করে বুঝিয়ে বলবেন।
উত্তর:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ ۚ
“তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ।” (সূরা আনফাল: ২৮ ও সূরা তাগাবুন: ১৫ নং আয়াত)
উক্ত আয়াতে ফিতনা শব্দের অর্থ হল, পরীক্ষা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সন্তান-সন্ততি এবং অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করতে চান যে, এ সব পেয়ে কি আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি না কি এগুলো পেয়ে আত্ম অহমিকা ও অহংকারে ডুবে যাই এবং শেষ পর্যন্ত এ সব পার্থিব নিয়ামতের পেছনে পড়ে এ সব নিয়ামত দানকারী স্বয়ং মহান আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের কথাই ভুলে যাই!!
 বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ এ পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার পরিচয় দিচ্ছে। দুনিয়া অর্থ-সম্পদ, স্ত্রী-সন্তান সহ সুখে জীবন-যাবন করার অভিপ্রায়ে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বানিয়ে ছেড়েছে! সুদ, ঘুস, চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, অবৈধ পণ্যের ব্যবসা সব বিভিন্ন হারাম উপার্জনের পেছনে ছুড়ে বেড়াচ্ছে উদভ্রান্ত পাগলের মত! তাদের নামায, যাকাত, রোযা, হজ্জ, জিকির, তাসবীহ, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন অধ্যয়ন করার সময় নাই!! সন্তানদের ক্যারিয়ার গঠনের চিন্তায় তাদেরকে দ্বীন শেখানোর কথা ভুলে গেছে!! এভাবে মানুষ এই পরীক্ষায় স্পষ্ট অকৃতকার্য হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে গেছে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অথচ আল্লাহর বিধান মেনে অর্থ-সম্পদ কামানো, আয়-উন্নতি করার ব্যাপারে ইসলাম বাধা দেয়া না। তবে সম্পদের হক আদায় করতে হবে। যাকাত, সদকা, দ্বীনের কাজে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা, গরীব-অসহায় মানুষের কল্যাণে অবদান রাখার মাধ্যমে সে এ সম্পদ দ্বারা দ্বীন ও দুনিয়া উভয় দিকে দিয়ে কল্যাণ অর্জন করতে সক্ষম হত।
অনুরূপভাবে সন্তানদের উন্নত জীবন ও ক্যারিয়ার গঠনে ইসলাম বাধা দেয় না। কিন্তু তা করতে হবে আল্লাহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে। দ্বীন থেকে দুরে সের গিয়ে সন্তানদেরকে গড়ে তুললে এরাই তাদের পিতামাতাকে পদপিষ্ট করে জাহান্নামের আগুনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এ সন্তানরাই কিয়ামতের দিন তাদের গোমরাহির জন্য তাদের অভিভাবকদেরকে দায়ী করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا اللَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ
“কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়।” (সূরা ফুসসিলাত: ২৯)
পক্ষান্তরে এ সন্তানদেরকে দ্বীনের উপর গড়ে তুললে তাদের প্রাণখোলা দুআ ও চোখের পানি পিতামাতার গুনাহ মোচন ও জান্নাতে যাওয়ার কারণ হতে পারে যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
 মোটকথা, এই সন্তান-সন্ততি এবং অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে দেয়া হয়েছে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে। সুতরাং আমরা যদি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাই, তাহলে সর্তক হতে হবে যেন, এগুলো আমাদেরকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে না দেয় বরং এগুলোই যেন আমাদের জান্নাতে যাওয়ার কারণ হয়। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন
আল্লাহু আলাম।
●●●●●●●●●●●
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, KSA
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA

No comments:

Post a Comment