وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:مَقَامُ الرَّجُلِ بِالصَّمْتِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سَنَةً
১) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির নীরব থাকায় যে মর্যাদা লাভ হয়, তা ষাট বছরের নফল ‘ইবাদাতের চেয়েও উত্তম।[
[ সহীহ : আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসে (بالصمت) শব্দটি تصحيف (তাসহীফ) বা ভুল করে বানানো হয়েছে। মিশকাত গ্রন্থকার এ অধ্যায়ে হাদীসটিকে দলীল হিসেবে পেশ করাতে বুঝা যাচ্ছে তিনি তাসহীফ তথা লিখতে ভুল করেছেন। সঠিক হলো : الصف। দারিমী, হাকিম সহ অন্যরা এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আর তাদের সেই বর্ণনাগুলো সহীহ। যেমনিভাবে আমি (আলবানী) ‘‘আস্ সহীহাহ্’’ এর ৯০২ নং এ বর্ণনা করেছি। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৩৯০ পৃঃ, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৫৩। ]
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ (مَقَامُ الرَّجُلِ بِالصَّمْتِ) কোন ব্যক্তির জন্য অনর্থক কাজের চেয়ে চুপচাপ থাকা তথা নিরবতা অবলম্বন করা। (أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّينَ سنة) ষাট বছর ‘ইবাদাতের চেয়ে উত্তম তথা ‘ইবাদাতের পাশাপাশি অধিক কথা বলা এবং সৎকাজে সুপ্রতিষ্ঠিত না থাকার চেয়ে চুপ থাকাই উত্তম।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘ইবাদাত করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় আর নিরবতা অবলম্বন করলেই তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যেমন- হাদীসে এসেছে, مَنْ صَمَتَ نَجَا যে চুপ থাকল সে পরিত্রাণ পেল। [গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-২৫ঃ শিষ্টাচার (كتاب الآداب) হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬৫]
وَعَنْ أَسْلَمَ قَالَ: إِنَّ عُمَرَ دَخَلَ يَوْمًا عَلٰى أَبِىْ بَكْرِ الصِّدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَهُوَ يَجْبِذُ لِسَانَهٗ. فَقَالَ عُمَرُ: مَهْ غَفَرَ اللهُ لَكَ. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: إِنَّ هٰذَا أَوْرَدَنِى الْمَوَارِدَ. رَوَاهُ مَالِكٌ
২ ] আসলাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ‘উমার (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট আসলেন, তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) নিজের জিহবা টানছিলেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ থামুন, দেখি! আপনি কি করছেন? আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেনঃ এ জিহবাই আমাকে ধ্বংসের স্থানসমূহে নিক্ষেপ করেছে। [সহীহ : মালিক ৩৬২১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮৭৩, হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/৩৩। ]
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ عُمَرَ دَخَلَ يَوْمًا على أَبِىْ بكر الصِّدّيق) একদিন ‘উমার আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করলেন। এমতাবস্থায় যে, তিনি তার জিহ্বাকে টেনে ধরে আছেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, (مَهْ) এ কাজ থেকে বিরত হোন। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তিনি দু‘আ অর্থে এটা বলেছেন অথবা তার ব্যাপারে যা শুনেছেন সে ব্যাপারে সংবাদমূলক। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) তাকে বললেন- নিশ্চয় এই জিহ্বাই জিহ্বার প্রতি ইঙ্গিত করে বলার উদ্দেশ্য হলো এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন অথবা তাকে তুচ্ছকরণ।
(أَوْرَدَنِي الْمَوَارِدَ) আমাকে ধ্বংসের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে বা আমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
বায়হাক্বীর বর্ণনায় এসেছে- তিনি বলেন, নিশ্চয় এটি আমাকে ধ্বংসের অনিষ্টতায় প্রবেশ করিয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে কেবল জিহ্বাই তার কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহর নিকট অভিযোগ করবে।
ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি নিজেকে অহেতুক কথা বলা থেকে বিরত রাখার জন্য মুখে পাথরকুচি রাখতেন এবং তিনি তার জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করে বলতেন- এটাই আমাকে ধ্বংসের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে। [মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ৪৮৫৯]
No comments:
Post a Comment