Thursday, September 27, 2018

মাযহাব_কী? #মাযহাবের_উৎপত্তি_কোথা_হতে? #মাযহাব_মানা_কী_ফরজ??



Image may contain: text

মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'য়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَىْءٍ ۚ إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন।
📖 {সূরা আন'আম, আয়াতঃ ১৫৯}।

ইমাম আবু হানীফা কি যা বলেছেন তাই মানতে হবে? আল কুরআন ও সহীহ হাদীসের সাথে কি মিলানোর কোন দরকার নেই? উনি কি ভুলের উর্ধ্বে কোন স্বর্গীয় মানব?
আলেম ওলামারা সাধারণত বলে থাকেনঃ তোমাদের অত ডিপে যাওয়ার দরকার নেই; আবু হানীফা ছিলেন অনেক বিদ্বান লোক তাঁর দেওয়া ফতোয়ার কোন বিকল্প নেই সুতরাং বেশি বুঝতে যেও না। ফেকাহ শাস্ত্রের বাইরে গেলে ইসলাম থেকে তোমরা খারিজ হয়ে যাবে!!
আসুন জেনে নিই কি এই ফেকাহশাস্ত্র কোথা থেকে এল, কারা এর প্রণেতা এবং মাযহাবের ইতিহাস কি?
কুরআনের আয়াত সমূহ নাজিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা মুখস্থ করা ও যথারীতি লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’র সমস্ত হাদীস সঙ্গে সঙ্গেই লিপিবদ্ধ করা হয় নি। বিশেষ বিশেষ হাদীস রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এঁর নির্দেশক্রমে অবশ্য লিখে রাখা হতো। সব হাদীসই সাহাবাগণ মুখস্থ করে রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এঁর মৃত্যুর পরেও বহুদিন অনুরূপভাবে হাদীস মুখস্থ রাখার রীতি চালু ছিল।

১০১ হিজরী সনে দামেস্কের খলীফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রাঃ)’র নির্দেশে মক্কা, মদিনা সহ মুসলিম জাহানের সর্বত্র হাদীস সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করার ধুম পড়ে। সংগৃহীত হাদীসগুলী গণনা করে দেখা যায় উহার সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ ছিল। দুষ্টু লোকেরা অসংখ্য মিথ্যা ও জাল হাদীস তৈরী করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’র হাদীস বলে চালিয়ে দেয়।
১০১ হিজরী হইতে ২২০ হিজরী পর্যন্ত ফেকাহ শাস্ত্রবিদ ১০/১২ জন আলেম বা ইমামগণ ঐ প্রমাণহীন হাদীস সমূহের উপর নির্ভর করিয়াই নিজ নিজ ফেকাহ শাস্ত্র তৈরী করেন। ইমাম সাহেবদের মৃত্যুর পরে তাঁদের ভক্ত অনুাক্তগণ নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন মসলা ও ফতোয়া নিয়ে আপোষে দলাদলীর সূত্রপাত করেন। ফলে, পরবর্তীকালে ইসলামের শত্রুদের প্ররোচনায় ভিন্ন ভিন্ন নামে এই “মাযহাব” আত্মপ্রকাশ করে।
মাযহাবী ঝগড়াই যে মুসলিম সমাজের পতনের আসল কারণ একথার ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে। মাযহাবের অনুসারীগণ তা অস্বীকার করলেও, ইতিহাস কোনদিন তা অস্বীকার করবে না। 
এই মাযহাবপন্থীদের গোঁড়ামি, ঝগড়া-বিবাদ আর হঠকারিতার ফলেই যে তাতারীরা সুযোগ পেয়ে মুসলিম সাম্রাজ্য ধ্বংস করেছিল, নিযামিয়া ইউনিভার্সিটি ভেঙ্গে চুরমার করেছিল, সাড়ে পাঁচশত বছরের সঞ্চিত দূর্লভ গ্রন্থরাজী জ্বালিয়ে পুঁড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল, চল্লিশ লক্ষ মুসলমান নর-নারীকে কতল করেছিল-এ কথা ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে।

রাসায়েলে কুবরার ২য় খন্ডের ৩৫২ পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছেঃ 
পূর্বদেশগুলোয় তাতারীদের যে প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার কারণ হলো মাযহাব নিয়ে ফিরক্বা পরস্তদের অতি মাত্রায় গন্ডগোল। ইমাম শাফেয়ীর সাথে যারা সম্পর্ক রাখে তারা, যারা ইমাম আবু হানিফার সাথে সম্পর্ক রাখে তাদের উপর ভীষনভাবে বিদ্বেষ পরায়ণ, এতদূর পর্যন্ত যে তারা হানাফীদেরকে ইসলাম থেকেই খারিজ করে রেখেছে। হানাফীরাও নিজেদের মাযহাবের অন্ধ গোঁড়ামির দরুন শাফেয়ীর প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ। এমনকি তাদেরকেও হানাফীরা ইসলাম থেকে খারিজ করে রেখেছে। আবার ইমাম আহমদের সাথে যারা সম্পর্ক রাখে তারাও মুসলমানদের অন্যান্য মাযহাবের উপর ভীষন চটা। ঐরূপ পশ্চিম দেশগুলোর ইমাম মালেকের সাথে যারা সম্পর্ক রাখে তারাও নিজেদের মাযহাবের অন্ধ গোঁড়ামির দরুন অন্যান্য মাযহাবের লোকদের প্রতি বিদ্বেষ-পরায়ণ, আর অন্যান্য মাযহাবপন্থিদের মালেকীদের উপরও কম নয়। (রাসায়েলে কুবরা ২য় খন্ড ৩৫২পৃঃ)

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী তাঁর ইযালাতুল খাফা গ্রন্থে লিখেছেনঃ
বনী উমাইয়াদের শাসনের অবসানকাল (১৫০ হিজরী) পর্যন্ত কোন মুসলমান নিজেকে হানাফী শাফেয়ী বলতেন না। স্ব-স্ব গুরুজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা করতেন। আব্বাসী খলিফাদের শাসন যুগের মধ্য ভাগে প্রত্যেকেই নিজের জন্য একটি করে নাম নির্দিষ্ট করে বাছাই করে নিলেন। আর আপন গুরুজনের কথা না পাওয়া পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ পালন করার নীতি বাদ দিয়ে দিলেন। কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল, এখন সেই মতভেদ মাযহাবের বুনিয়াদে পরিনত হলো।
আরব রাজত্বের অবসানের পর (৬৫৬হিঃ) মুসলমানগণ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেন, প্রত্যেক নিজ নিজ মাযহাবের যতটুকু খেয়াল রাখতে পেরেছিলেন-তাকেই ভিত্তিরূপে গ্রহণ করলেন। আর যা পূর্ববর্তীদের কথার দ্বারা পরিকল্পিত হয়েছিল, এখন তা আসল সুন্নাহরূপে গৃহীত হলো। এদের বিদ্যা হচ্ছে এক অনুমানের উপর আর এক অনুমান, এক পরিকল্পনার উপর আর এক পরিকল্পনা। আবার সেই অনুমানকে গ্রহণ করে আর এক অনুমান। এদের রাজত্ব অগ্নিপূজকদের ন্যায়, তফাৎ শুধু এটুকু যে, এরা নামায পড়ে, কালেমা উচ্চারণ করে।
২২০ হিজরী হইতে ন্যূন্যাবিধ ৩০০হিজরী পর্যন্ত উক্ত সংগৃহীত হাদীস সমূহকে যাচাই-বাছাই করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’র খাঁটি হাদীসগুলী বাহির করে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ চরম জোরদার হয়। 
ফলে সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও ইবনে মাজা এই ছয়খানা সহিহ হাদীসের কেতাব যথারীতি লিপিবদ্ধ হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’র রেখে যাওয়া সহিহ হাদীসগুলি সুসংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয়-পূর্বে সৃষ্ট দল বা মাযহাবগুলি এই সহীহ হাদীসের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে তাহাদের নিজ দলের প্রাধান্য বৃদ্ধির কাজে লিপ্ত থাকে। পরবর্তীকালে মালেকী ও হানাফী মাযহাবের লোকদের মধ্যে মাযহাবী কোন্দল নিয়ে বাগদাদেও অনুরূপ ভিন্ন ভিন্ন মাযহাব পন্থিদের মধ্যে বহুস্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। 
অতঃপর ৮০৯ হিজরীতে কাবার ইব্রাহিমী মুসাল্লাতে দাঁড়াই ইমামতি নিয়ে ১০/১১টি মাযহাবী দলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাঁধে। তাহাতে বহু মুসলমান হতাহত হয়। জাহল বাদশা ফারহা ইবনে বয়কুফ সংঘর্ষ মিটাবার উদ্দেশ্যে বিবাদরত দলগুলির মধ্যে হতে চারটি দলকে কাবার চার পার্শ্বে খাড়া করিয়া দিলেন। অন্যান্য দল এই চার মাযহাবের মধ্যে মিশিয়া গেল। ফলে কাবাঘরের চার কোণে চার মাযহাবের চারখানা ভিন্ন ভিন্ন মুসাল্লাহ তৈরী হইল। প্রতি ওয়াক্তে চার মাজহাবের চার ইমাম চার মুসাল্লায় দাঁড়িয়ে পর্যায়ক্রমে নামাজ আদায় করিতে থাকেন। এই নিয়ম প্রায় ৫০০ বৎসর পর্যন্ত চালু থাকে।

এইভাবে এক ইসলামের মধ্যে জাহেলিয়াত ঢুকে নতুন চার মাযহাবের সৃষ্টি হয়।
আসুন এখন আমরা অনুধাবন করার চেষ্টা করি আসলেই কি মাযহাব মানা ফরজ??

No comments:

Post a Comment