Wednesday, April 15, 2015

বিদায় হজ্জের ভাষণ




আসসালামু আলাইকুম
-----
^^^ বিদায় হজ্জের ভাষণ ^^^^^^
যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে তারবিয়ার দিন নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মিনায় গমন করেন এবং তথায় ৯ই যিলহজ্জের সকাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ফজর এ পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করেন। অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। অতঃপর আরাফার দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং সেখানে যখন পৌঁছেন তখন ওয়াদীয়ে নামেরায় তাঁবু প্রস্তুত হয়েছিল। সেখানে তিনি অবতরণ করলেন। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে ঢলে গেল তখন নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশে কাসওয়া নামক উটের পিঠে হাওদা চাপানো হল। এরপর তিনি বাতনে ওয়াদীতে গমন করলেন। ঐ সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন এক লক্ষ চল্লিশ কিংবা এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজারের এক বিশাল জনতার ঢল। এ বিশাল জনতার উদ্দেশ্যে তিনি এক ঐতিহাসিক এবং মর্মস্পর্শী ভাষণ প্রদান করেন।সমবেত জনতাকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন
, (أَيُّهَا النَّاسُ، اِسْمَعُوْا قَوْلِيْ، فَإِنِّيْ لَا أَدْرِيْ لَعَلِّىْ لَا أَلْقَاكُمْ بَعْدَ عَامِيْ هٰذَا بِهٰذَا الْمَوْقِفِ أَبَداً).
'ওহে সমবেত লোকজনেরা! আমার কথা শোন। কারণ, আমি জানি না এরপর আর কোন দিন তোমাদের সঙ্গে এ স্থানে মিলিত হতে পারব কিনা।( ইবনু হিশাম ২য় খণ্ড ৬০৩ পৃঃ,)

(إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هٰذَا، فِيْ شَهْرِكُمْ هٰذَا، فِيْ بَلَدِكُمْ هٰذَا. أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَيَّ مَوْضُوْعٌ، وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعَةٌ، وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٌ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيْعَةَ بْنِ الْحَارِثِ ـ وَكَانَ مُسْتَرْضِعاً فِيْ بَنِيْ سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ ـ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعٌ، وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ مِنْ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، فَإِنَّهُ مَوْضُوْعٌ كُلُّهُ).

তোমাদের রক্ত এবং তোমাদের ধন সম্পদ অন্যদের জন্য এমনিভাবে হারাম যেমনটি তোমাদের আজকের দিন, চলতি মাস এবং এ বরকতপূর্ণ শহরের হুরমত রয়েছে। শুনে রাখো, অন্ধকার যুগের প্রত্যেকটি রেওয়াজ রসম আমার পদতলে পিষ্ট হয়ে গেল। জাহেলিয়াত যুগের শোনিত প্রসঙ্গের পরিসমাপ্তি ঘটল। আমাদের রক্তের মধ্যে প্রথম রক্ত যা আমি নিঃশেষ করছি তা হচ্ছে রাবিয়া বিন হারিসের ছেলের রক্ত। এ সন্তান বনু সা'দ গোত্রে দুগ্ধ পান করছিল এমন সময় হোজাইল গোত্র তাকে হত্যা করে। অন্ধকার যুগের সুদ শেষ করা হল এবং আমাদের সুদের মধ্যে প্রথম সুদ যা আমি শেষ করছি তা আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। এখন থেকে সুদের সকল প্রকার কাজ কারবার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হল।

(فَاتَّقُوْا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوْهُنَّ بِأَمَانَةِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوْجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَلَّا يُوْطِئَنَّ فِرَشَكُمْ أَحَداً تَكْرَهُوْنَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذٰلِكَ فَاضْرِبُوْهُنَّ ضَرْباً غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ).

হ্যাঁ, মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ, তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে হালাল করে নিয়েছ। তাদের উপর তোমাদের প্রাপ্য হল তারা তোমাদের বিছানায় এমন কোন ব্যক্তিকে আনতে দেবে না যারা তোমাদের সহ্যের বাইরে হবে। যদি তারা এরূপ কোন অন্যায় করে বসে তাহলে তাদেরকে তোমরা মারধর করতে পারবে। কিন্তু গুরুতরভাবে আঘাত করবে না। তোমাদের উপর তাদের প্রাপ্য হল তোমরা তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে খাওয়াবে ও পরাবে।

(َوَقَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا لَنْ تَضِلِّوْا بَعْدَهُ إِنْ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ، كِتَابُ اللهِ).

আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যা শক্ত করে ধরে রাখলে তোমরা কখনোও পথহারা হবে না এবং তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।( সহীহ মুসলিম নাবীর হজ্জের অধ্যায় ১ম খণ্ড ৩৯৭ পৃঃ।)

(أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ، وَلَا أَمَّةَ بَعْدَكُمْ، أَلَا فَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ، وَصَلُّوْا خَمْسَكُمْ، وَصُوْمُوْا شَهْرَكُمْ، وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ، طِيْبَةً بِهَا أَنْفُسُكُمْ، وَتَحُجُّوْنَ بَيْتِ رَبِّكُمْ، وَأَطِيْعُوْا أُوْلَاتِ أَمْرَكُمْ، تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبَّكُمْ)
হে লোকজনেরা! স্মরণ রেখ আমার পরে আর নাবী আসবে না। কাজেই তোমাদের পরে অন্য কোন উম্মতের প্রশ্নও থাকবে না। অতএব, আল্লাহ তা'আলার ইবাদত কর, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করো, রমাযান মাসে রোযা রেখো, সন্তুষ্ট চিত্তে নিজ সম্পদের যাকাত প্রদান করো, নিজ প্রভূর ঘরের হজ্জ পালন করো এবং সৎ নেতৃত্বের অনুসরণ করো। নিষ্ঠার সঙ্গে এ সব কাজ করলে ওয়াদা মোতাবেক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
( ইবনু মাজা, ইবনু আসাকের, রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খণ্ড ২২৩ পৃঃ।)(وَأَنْتُمْ تَسْأَلُوْنَ عَنِّيْ، فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُوْنَ؟)

আমার সম্পর্কে যদি তোমাদের জিজ্ঞেস করা হয় তখন তোমরা কী উত্তর দিবে?সাহাবীগণ বললেন, 'আমরা সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব আপনি যথাযথভাবে পালন করেছেন, ইসলামী দাওয়াতের যে আমানত আপনার উপর অর্পণ করা হয়েছিল তা যথাযথ ভাবে মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন এবং বান্দাদের জন্য কল্যাণ কামনার হক্ব আদায় করেছেন।সাহাবীগণ (রাযি.)-এর মুখ থেকে এ কথা শ্রবণের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) শাহাদত আঙ্গুলটি আকাশের দিকে উত্তোলন করলেন এবং মানুষের দিকে তা নুইয়ে দিয়ে তিন বার বললেন
,(اللهم اشْهَدْ) (اللهم اشْهَدْ) (اللهم اشْهَدْ)'হে আল্লাহ সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ সাক্ষ্য থাক।( সহীহ মুসলিম ১ম খণ্ড ৩৯৭ পৃঃ।)নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বাণীসমূহকে রাবীয়া বিন উমাইয়া বিন খালফ উচ্চৈঃস্বরে লোকজনদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছিলেন।( ইবনু হিশাম ২য় খণ্ড ৬০৫ পৃঃ।) রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) যখন তাঁর ভাষণ হতে ফারেগ হলেন তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন,

{الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيْنًا}
[المائدة: ৩]

'আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নি'মাত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবূল করে নিলাম।' [আল-মায়িদাহ (৫) : ৩]এ আয়াত শ্রবণ করা মাত্রই ওমর (রাঃ) ক্রন্দন করতে লাগলেন। তাঁর ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, 'আমি এ জন্য কাঁদছি যে পূর্ণতার পর অসম্পূর্ণতাই তো থাকে।( বুখারী ইবনু ওমর হতে দ্র: রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খণ্ড ২৬৫ পৃঃ।)আর-রাহিকুল মাখতুম -অণুচ্ছেদ বিদায় হজ্জ প্রিস্থা-৫২২-৫২৪

No comments:

Post a Comment