Saturday, May 23, 2015

শা’বানের মধ্যরজনী কিছু কথা




শা’বানের মধ্যরজনী কিছু কথা
=====================
আবু মূসা আল আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ
তা‘আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে
আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত
ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত
সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার
সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০),এবং
তাবরানী তার মু’জামুল কাবীর
(২০/১০৭,১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
তাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে
আল্লামা হাইসামী (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি) মাজমা‘ আয যাওয়ায়েদ
(৮/৬৫) গ্রন্থে বলেনঃ ত্বাবরানী
বর্ণিত হাদীসটির সনদের সমস্ত
বর্ণনাকারী শক্তিশালী। হাদীসটি
ইবনে হিব্বানও তার সহীহতে বর্ণনা
করেছেন। এ ব্যাপারে দেখুন,
মাওয়ারেদুজ জাম‘আন, হাদীস নং
(১৯৮০), পৃঃ (৪৮৬)।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
^^^^^^^^^^^^^^
এই সূত্রেই অনেক হাদীসবিদ শাবানের
মধ্যরাতের ফযীলত রয়েছে বলে মত
প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে
রয়েছেনঃ

ইমাম আহমাদ (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি)। [ইবনে তাইমিয়া তার
ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে
(২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]

ইমাম আওযায়ী (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি)। [ইমাম ইবনে রাজাব তার
‘লাতায়েফুল মা‘আরিফ’ গ্রন্থে
(পৃঃ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা
করেছেন]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
[ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম
২/৬২৬,৬২৭, মাজমু‘ ফাতাওয়া ২৩/১২৩,
১৩১,১৩৩,১৩৪]।

ইমাম ইবনে রাজাব আল হাম্বলী
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। [তার
লাতায়েফুল মা‘আরিফ পৃঃ১৪৪ দ্রষ্টব্য]।

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা
নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
[ছিলছিলাতুল আহাদীস আস্সাহীহা
৩/১৩৫-১৩৯]

উপরোক্ত মুহাদ্দিসগনসহ আরো অনেকে এ
রাত্রিকে ফযীলতের রাত বলে মত
প্রকাশ করেছেন।
= শা’বানের মধ্যরাত্রি উদযাপন করা
যাবে কিনা?
================================
উত্তরঃ শা’বানের মধ্যরাত্রি পালন
করার কি হুকুম এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে
তিনটি মত রয়েছে:

এক. শা‘বানের মধ্য রাত্রিতে
মাসজিদে জামাতের সাথে নামায ও
অন্যান্য ইবাদত করা জায়েয । প্রসিদ্ধ
তাবেয়ী খালেদ ইবনে মি‘দান, লুকমান
ইবনে আমের সুন্দর পোশাক পরে, আতর
খোশবু, শুরমা মেখে মাসজিদে গিয়ে
মানুষদের নিয়ে এ রাত্রিতে নামায
আদায় করতেন। এ মতটি ইমাম ইসহাক
ইবনে রাহওয়ীয়াহ থেকেও বর্ণিত
হয়েছে। (লাতায়েফুল মা‘আরেফ
পৃঃ১৪৪)। তারা তাদের মতের পক্ষে
কোন দলীল পেশ করেননি। আল্লামা
ইবনে রাজাব (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি) তাদের মতের পক্ষে দলীল
হিসাবে বলেনঃ তাদের কাছে এ
ব্যাপারে ইসরাইলি তথা পূর্ববর্তী
উম্মাতদের থেকে বিভিন্ন বর্ণনা
এসেছিল, সে অনুসারে তারা আমল
করেছিলেন। তবে পূর্বে বর্ণিত
বিভিন্ন দুর্বল হাদীস তাদের দলীল
হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকবে।

দুই. শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে
ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত বন্দেগী করা
জায়েয। ইমাম আওযা‘য়ী, শাইখুল ইসলাম
ইবনে তাইমিয়া, এবং আল্লামা ইবনে
রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম) এ মত
পোষণ করেন। তাদের মতের পক্ষে
তারা যে সমস্ত হাদীস দ্বারা এ
রাত্রির ফযীলত বর্ণিত হয়েছে সে
সমস্ত সাধারণ হাদীসের উপর ভিত্তি
করে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করাকে
জায়েয মনে করেন।

তিন: এ ধরণের ইবাদত সম্পূর্ণরূপে বিদ’আত
— চাই তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা
সামষ্টিকভাবে। ইমাম ‘আতা ইবনে
আবি রাবাহ, ইবনে আবি মুলাইকা,
মদীনার ফুকাহাগণ, ইমাম মালেকের
ছাত্রগণ, ও অন্যান্য আরো অনেকেই এ মত
পোষণ করেছেন। এমনকি ইমাম আওযায়ী
যিনি শাম তথা সিরিয়াবাসীদের
ইমাম বলে প্রসিদ্ধ তিনিও এ ধরনের ঘটা
করে মাসজিদে ইবাদত পালন করাকে
বিদ‘আত বলে ঘোষণা করেছেন।
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
""""""""""""
শা’বানের মধ্যরাত্রি উদযাপন করা
যাবে না তাদের মতের পক্ষে যুক্তি
হলো :

১.এ রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন
দলীল নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ রাত্রিতে
কোন সুনির্দিষ্ট ইবাদত করেছেন বলে
সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়নি।
অনুরূপভাবে তার কোন সাহাবী
থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নি।
তাবেয়ীনদের মধ্যে তিনজন ব্যতীত আর
কারো থেকে বর্ণিত হয়নি। আল্লামা
ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
বলেনঃ শা‘বানের রাত্রিতে রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অথবা তার সাহাবাদের থেকে কোন
নামায পড়া প্রমাণিত হয়নি। যদিও
শামদেশীয় সুনির্দিষ্ট কোন কোন
তাবেয়ীন থেকে তা বর্ণিত হয়েছে।
(লাতায়েফুল মা‘আরিফঃ১৪৫)। শাইখ
আব্দুল আযীয ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি) বলেনঃ ‘এ রাত্রির ফযীলত
বর্ণনায় কিছু দুর্বল হাদীস এসেছে যার
উপর ভিত্তি করা জায়েয নেই, আর এ
রাত্রিতে নামায আদায়ে বর্ণিত
যাবতীয় হাদীসই বানোয়াট, আলেমগণ
এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন’।

২. হাফেজ ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি) যিনি কোন কোন
তাবেয়ীনদের থেকে এ রাত্রির
ফযীলত রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন,
তিনি বলেছেনঃ ঐ সমস্ত
তাবেয়ীনদের কাছে দলীল হলো যে
তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলি
কিছু বর্ণনা এসেছে। তাহলে আমরা
দেখতে পাচ্ছি যে, যারা এ রাত
পালন করেছেন তাদের দলীল হলো, যে
তাদের কাছে ইসরাইলি বর্ণনা
এসেছে, আমাদের প্রশ্নঃ ইসরাইলি
বর্ণনা এ উম্মাতের জন্য কিভাবে দলীল
হতে পারে?

৩. যে সমস্ত তাবেয়ীনগণ থেকে এ রাত
উদযাপনের সংবাদ এসেছে তাদের
সমসাময়িক প্রখ্যাত ফুকাহা ও
মুহাদ্দিসীনগণ তাদের এ সব কর্মকান্ডের
নিন্দা করেছেন। যারা তাদের
নিন্দা করেছেন তাদের মধ্যে প্রখ্যাত
হলেনঃ ইমাম আতা ইবনে আবি রাবাহ,
যিনি তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট মুফতি
ছিলেন, আর যার সম্পর্কে সাহাবী
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা) বলেছিলেনঃ তোমরা আমার
কাছে প্রশ্নের জন্য একত্রিত হও, অথচ
তোমাদের কাছে ইবনে আবি রাবাহ
রয়েছে। সুতরাং যদি ঐ রাত্রি
উদযাপনকারীদের পক্ষে কোন দলীল
থাকত, তাহলে তারা ‘আতা ইবনে
আবি রাবাহর বিপক্ষে তা অবশ্যই পেশ
করে তাদের কর্মকাণ্ডের যথার্থতা
প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন, অথচ এরকম
করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি।

৪. পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যে সমস্ত
দুর্বল হাদীসে ঐ রাত্রির ফযীলত বর্ণিত
হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র সে রাত্রিতে
আল্লাহর অবতীর্ণ হওয়া এবং ক্ষমা করা
প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে কিছুই
বর্ণিত হয়নি। মুলতঃ এ অবতীর্ণ হওয়া ও
ক্ষমা চাওয়ার আহবান প্রতি রাতেই
আল্লাহ তা’আলা করে থাকেন। যা
সুনির্দিষ্ট কোন রাত বা রাতসমূহের
সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এর বাইরে দুর্বল
হাদীসেও অতিরিক্ত কোন ইবাদত করার
নির্দেশ নেই।

৫. আর যারা এ রাত্রিতে
ব্যক্তিগতভাবে আমল করা জায়েয বলে
মন্তব্য করেছেন তাদের মতের পক্ষে
কোন দলীল নেই, কেননা এ রাত্রিতে
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) থেকে বা তার সাহাবা
কারো থেকেই ব্যক্তিগত কিংবা
সামষ্টিক কোন ভাবেই কোন প্রকার
ইবাদত করেছেন বলে বর্ণিত হয়নি। এর
বিপরীতে শরীয়তের সাধারণ অনেক
দলীল এ রাত্রিকে ইবাদতের জন্য
নির্দিষ্ট করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা
করছে, তম্মধ্যে রয়েছেঃআল্লাহ
বলেনঃ“আজকের দিনে আমি
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে
পরিপূর্ণ করে দিলাম”। (সূরা আল-
মায়েদাহঃ ৩)।রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
(যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন
নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে
নেই, তা তার উপর নিক্ষিপ্ত হবে)।
(বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭)।তিনি আরো
বলেছেনঃ (যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ
করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে
কোন নির্দেশ নেই তা অগ্রহণযোগ্য)।
(মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮)।শাইখ আব্দুল
আজীজ ইবনে বায (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি) বলেনঃ আর ইমাম আওযা‘য়ী
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) যে, এ
রাতে ব্যক্তিগত ইবাদত করা ভাল মনে
করেছেন, আর যা হাফেয ইবনে রাজাব
পছন্দ করেছেন, তাদের এ মত অত্যন্ত
আশ্চার্যজনক বরং দুর্বল; কেননা কোন
কিছু যতক্ষন পর্যন্ত না শরীয়তের
দলীলের মাধ্যমে জায়েয বলে সাব্যস্ত
হবে ততক্ষন পর্যন্ত কোন মুসলিমের পক্ষেই
দ্বীনের মধ্যে তার অনুপ্রবেশ ঘটাতে
বৈধ হবে না। চাই তা ব্যক্তিগতভাবে
করুক বা সামষ্টিক- দলবদ্ধভাবে। চাই
গোপনে করুক বা প্রকাশ্য। কারণ
বিদ‘আতকর্ম অস্বীকার করে এবং তা
থেকে সাবধান করে যে সমস্ত
প্রমাণাদি এসেছে সেগুলো
সাধারণভাবে তার বিপক্ষে অবস্থান
নিচ্ছে। (আত্তাহযীর মিনাল
বিদ‘আঃ১৩)।

৬. শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো
বলেনঃ সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত
হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা
জুম‘আর রাত্রিকে অন্যান্য রাত থেকে
ক্বিয়াম/ নামাযের জন্য সুনির্দিষ্ট
করে নিও না, আর জুম‘আর দিনকেও
অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা করে
রোযার জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না,
তবে যদি কারো রোযার দিনে সে
দিন ঘটনাচক্রে এসে যায় সেটা ভিন্ন
কথা”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৪,
১৪৮)।যদি কোন রাতকে ইবাদতের জন্য
সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো তবে
অবশ্যই জুম‘আর রাতকে ইবাদতের জন্য
বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট করা জায়েয
হতো; কেননা জুম‘আর দিনের ফযীলত
সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে, “সুর্য যে
দিনগুলোতে উদিত হয় তম্মধ্যে সবচেয়ে
শ্রেষ্ট দিন, জুম‘আর দিন”। (সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ৫৮৪)।সুতরাং যেহেতু রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
জুম‘আর দিনকে বিশেষভাবে ক্বিয়াম/
নামাযের জন্য সুনির্দিষ্ট করা থেকে
নিষেধ করেছেন সেহেতু অন্যান্য
রাতগুলোতে অবশ্যই ইবাদতের জন্য
সুনির্দিষ্ট করে নেয়া জায়েয হবে না।

তবে যদি কোন রাত্রের ব্যাপারে
সুস্পষ্ট কোন দলীল এসে যায় তবে সেটা
ভিন্ন কথা। আর যেহেতু লাইলাতুল
ক্বাদর এবং রমযানের রাতের ক্বিয়াম/
নামায পড়া জায়েয সেহেতু রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
থেকে এ রাত গুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট
হাদীস এসেছে।

No comments:

Post a Comment