Wednesday, October 28, 2015

“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি:-----




জীবনের শুরুতেই আমাদের সন্তানদের ঈমান ও ইসলামের রোকনগুলো তালীম দিতে হবে, যাতে তারা বড় হয়ে, তা হতে দূরে সরে না যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি:------------
১। “এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।” অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নাই আর আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে মুহাম্মদ এর আনুগত্য করা ওয়াজিব।
[ ক. ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই’ সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ হলো: আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত না করা, অন্য কাউকে না ডাকা; তাঁকে তার কেবল শরী‘আতের মাধ্যমেই ইবাদত করা; আর শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহ হতে নির্গত শরী‘আত অনুযায়ীই বিচার-ফয়সালা করা।
খ. ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ হলো: যে আদেশ তিনি দিয়েছেন তা আনুগত্য করা; যে সংবাদ তিনি এনেছেন তা বিশ্বাস করা; আর যা থেকে তিনি বিরত থাকতে বলেছেন ও সাবধান করেছেন, তা থেকে দূরে থাকা। কেননা, তার আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য।]
২। “সালাত কায়েম করা” : সালাতের আরকান ও ওয়াজিবসমূহ সহ খুশুর সাথে সালাত আদায় করা।
৩। “যাকাত প্রদান করা” : যদি কোন মুসলিম তার মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা তার সমপরিমাণ অর্থের মালিক হয়, তাহলে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে যখন তার এ সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হয়; তখন তাকে শতকরা ২.৫ টাকা যাকাত দিতে হবে। এ-ছাড়াও আরও অনেক সম্পদ আছে যেগুলোর উপর যাকাত ওয়াজিব হয়। সে সব সম্পদের যাকাত শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত হারে প্রদান করতে হয়।
৪।“বায়তুল্লাহর হজ করা” : হজ তার উপর ফরয হবে, যে হজ করার সামর্থ্য রাখে।
৫।“রমযানের রোজা রাখা:” রোজা বলতে আমরা বুঝি, নিয়ত সহকারে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানা-পিনা ও রোজার পরিপন্থী সবধরনের কাজ হতে বিরত থাকা।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক মুল্যবান উপদেশগুলো-------------------
লোকমান আ. তার ছেলেকে কতই না সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনে করীমে উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত তা আদর্শ করে রেখেছেন।এক নজরে দেখে নেয়া যাক মুল্যবান উপদেশগুলো---
প্রথম উপদেশ: তিনি তার ছেলেকে বলেন,
﴿يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ﴾
অর্থ, “হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।”
দ্বিতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ﴾ .
অর্থ, “আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে [সদাচরণের] নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে, তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন-তো আমার কাছেই।” [সূরা লোকমান: ১৪]
তৃতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে মাতা-পিতা যখন তোমাকে শিরক বা কুফরের নির্দেশ দেয়, তখন তোমার করণীয় কি হবে তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
অর্থ, “আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না। এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে করবে সদ্ভাবে। আর আমার অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে।” [সূরা লোকমান: ১৫]
“আল্লাহর নাফরমানিতে কোন মাখলুকের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য-তো হবে একমাত্র ভালো কাজে।”
চতুর্থ উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে কোন প্রকার অন্যায় অপরাধ করতে নিষেধ করেন। তিনি এ বিষয়ে তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন, মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তার বর্ণনা দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَا بُنَيَّ إِنَّهَا إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُن فِي صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمَاوَاتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ﴾ .
অর্থ, “হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা [পাপ-পুণ্য] যদি সরিষা দানার পরিমাণও হয়, অত:পর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমান সমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ।” [সূরা লোকমান: ১৬]
পঞ্চম উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে সালাত কায়েমের উপদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ﴾
অর্থাৎ, “হে আমার প্রিয় বৎস সালাত কায়েম কর”,
তুমি সালাতকে তার ওয়াজিবসমূহ ও রোকনসমূহ সহ আদায় কর।
ষষ্ঠ উপদেশ:
﴿وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
অর্থাৎ “তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ কর।”
বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও, যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সাথে কোন প্রকার কঠোরতা করো না।
সপ্তম উপদেশ: আল্লাহ বলেন,
﴿وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ﴾
“যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার উপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর।”
অষ্টম উপদেশ:
﴿وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ﴾
অর্থ, “আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।”
নবম উপদেশ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحاً﴾
“অহংকার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাটা চলা করবে না।”
দশম উপদেশ: নমনীয় হয়ে হাটা চলা করা। মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে বলেন:
﴿وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ﴾
“আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর।”
একাদশ উপদেশ: নরম সূরে কথা বলা। লোকমান হাকীম তার ছেলেকে নরম সূরে কথা বলতে আদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ﴾
“তোমার আওয়াজ নিচু কর।”
আর কথায় কোন তুমি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। বিনা প্রয়োজনে তুমি তোমার আওয়াজকে উঁচু করো না। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ﴾
“নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ।”
হে আল্লাহ ! যে সব আমলে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত হয়, আমাদের সন্তান্ দের সে বিষয়ে আমাদেরকে উপদেশ দেয়ার তাওফিক দান করুন।আমীন

No comments:

Post a Comment