Sunday, November 22, 2015

" রাগ " শয়তানের প্রবেশদ্বার !




" রাগ " শয়তানের প্রবেশদ্বার !
মানুষ মাত্রেই তার রাগ-ক্রোধ থাকবেই। কিন্তু এ রাগ যে দমন করতে পারে, রাগের সময় যে নিজের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারে আর নিজেকে সংযত রাখে, সেই প্রকৃত বীর এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তি। রাগের মাথায় নিজের ক্ষতি করে পরবর্তীতে আফসোস করা বুদ্ধিমানের পরিচায়ক নয়।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الغَضَبِ»
‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কুস্তিতে নেমে অন্যকে ধরাশায়ী করতে পারে; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে’। [বুখারী : ৬১১৪]
রাগ হলো শয়তানের প্রবেশদ্বার। এ পথে প্রবেশ করে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি নিয়ে সে খেলা করে। বেশি রাগলে শয়তান মানুসকে দিয়ে এমন কিছু করিয়ে নেয় যা সে স্বাভাবিক অবস্থায় মোটেও করত না। রাগ পাপ কাজের দ্বার উন্মুক্ত করে। সমাজে বিরাজমান পারস্পরিক আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যকে ভেঙে দিয়ে বিশৃঙ্খলা ও অমানবিকতা সৃষ্টি করে। রাগ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কেননা অত্যধিক রাগ শরীরের নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্কে আঘাত হানে। ফলে তা বহুমূত্র, রক্তচাপ ও হার্টের দুর্বলতাসহ অনেক রোগের কারণ হয়। রাগের পরিণাম হলো, নিজের সম্পদ ধ্বংস করা এবং মানুষের রোষানলে পতিত হওয়া। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার প্রশ্ন করা সত্ত্বেও রাগ দমনের উপদেশ দিয়ে এর গুরুত্ব তুলে
ধরেছেন এই হাদিসে-------
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوْصِنِي، قَالَ: «لاَ تَغْضَبْ» فَرَدَّدَ مِرَارًا، قَالَ: «لاَ تَغْضَبْ»
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সালালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। রাসূল সালালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগান্বিত হয়ো না। সে ব্যক্তি বারবার উপদেশ চাইলে রাসূল (একই উত্তর দিয়ে) তাকে বললেন, রাগান্বিত হয়ো না’। [বুখারী : ৫৬৫১]
সুতরাং রাগ দমন করতে পারা অবস্য ই একটি বড় গুণ এবং নেকীর কাজ। রাগ দমনকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
﴿ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٣٤ ﴾ [ال عمران: ١٣٤]
‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪}
রাগ থেকে বাঁচার কিছু উপায় :
(ক) যে সমস্ত কারণে রাগ সৃষ্টি হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকা।
(খ) মুখ ও অন্তর দ্বারা আল্লাহর জিকির করা। কেননা, ক্রোধ হল শয়তানের কুপ্রভাবের বিষক্রিয়া।
তাই যখন মানুষ আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তানের প্রভাব মুক্ত হয়ে যায়।
(গ) ক্রোধ পরিত্যাগ ও মানুষকে ক্ষমার সওয়াবের কথা স্মরণ করা।
(ঘ) ক্রোধের মন্দ পরিণতির কথা স্মরণ করা।
(চ) ক্রুদ্ধ ব্যক্তির অবস্থান পরিবর্তন করা, যে অবস্থায় ছিল তার পরিবর্তে অন্য অবস্থা গ্রহণ করা।
(ছ) ওযু করা, তা এই জন্য যে ক্রোধ মূলত শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি।
আর আগুন নেভাতে পানি।
(জ) যখন ক্রোধ আসবে, তখন আউযুবিল্লাহি মিনাশ-শাইতানির রাজীম পড়া।
*যাযাকাল্লাহ খাইর*

No comments:

Post a Comment