Thursday, January 26, 2017

সমাজের প্রচলিত নামাজের ভুল ৪৬-৫০






৪৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ মাসজিদে ইমামদের দেখা যায় খুব দ্রুত ক্বিরআত পড়ে এবং রমযান মাসে তারাবীর সলাতের হাফিয সাহেবরাতো এত দ্রুত ক্বিরআত পড়ে যে, এক শ্বাসে সূরা ফাতিহা, অতঃপর মাদ্দ্ কিংবা ওয়াকফ্ ছাড়া তিলাওয়াত হয় যা কুরআন-সুন্নাহ্ পরিপন্থী।
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর ক্বিরআত কেমন ছিল? তিনি উত্তরে বললেনঃ ‘‘ তার পড়ার দীর্ঘস্বর বিশিষ্ট ছিল। তিনি তিলাওয়াত করলেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এবং ‘বিসমিল্লাহ’ ‘আর রাহমান’ ও ‘আর রাহীম’ প্রত্যেকটি দীর্ঘস্বর অর্থাৎ মাদ্দের সাথে পাঠ করতেন। (সহীহুল বুখারী-৪/হা/৪৬৭৩)। উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ক্বির‘আতসময় প্রত্যেক আয়াত পৃথক পৃথক করে পড়তেন। ‘আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন’ বলে ওয়াক্ফ করতেন। (সুনাসে দার কুতনী- ১/হা/১১৭৮) উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত পদ্ধতিতে তিলাওয়াত না করা খোদ আল-কুরআনেরও খেলাফ। আল্লাহ‘তাআলা বলেনঃ ‘‘ আর সলাতে কুরআন খুব স্পষ্ট করে ধীরে ধীরে পাঠ কর। (আল-মুয়াম্মিলঃ ৪)
.
৪৭। প্রচলিত ভুলঃ দুই ওয়াক্তের সলাত এক ওয়াক্তের মধ্যে একত্রে আদায় কোন ওজরের কারণেও করা যাবে না। সফরেও না, বাড়ীতে থাকা অবস্থায়ও না। তবে আরাফা ও মুজদালিফায় আদায় করা যাবে। (মুহীত) (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১৪৬ পৃঃ)
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সফর অবস্থায় দু’ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ সফরে দ্রুত চলার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যুহর ও আসরের সলাত একত্রে আদায় করতেন আবার মাগরিব ঈশা একত্রে আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী-১১৩৮, ই.ফা.বা- ১০৪২, সহীহ মুসলিম ই.ফা.বা- ৩/হা/ ১৪৯১ হতে ১৫২০ পর্যন্ত। তিরমিযী-ই.সে.হা/ ৫১৯,৫২০)
.
৪৮। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে প্রচলিত জানাযায় সূরা ফাতিহা পড়া হয় না এবং প্রত্যেক তাকবীর সমূহে হাত উঠানো হয় না; দলীল হিসাবে বলা হয়, ‘জানাযা পড়ার নিয়মঃ জানাযার সলাত এইভাবে পড়িবে যে, প্রথম তাকবীর বলিয়া আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণাগুণ জ্ঞাপন করিবে, অতঃপর আবার তাকবীর বলিয়া নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর উপর দরুদ পাঠ করিবে, তারপর তৃতীয় তাকবীরে পাঠ করিবে নিজের জন্য, মৃতের জন্য ও সমস্ত মুসলমানের জন্য দু’আ করিবে, সবশেষে চতুর্থ তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইবে। প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য কোন কাবীরের সময় হাত উঠাইবে না।’’ (আল হিদায়া ই.ফা.বা- ১/১৭৪ পৃঃ, আল মুখতাসারুল কুদুরী-মাদ্রাসার ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর পাঠ্য-১০৪ পৃঃ) উল্লিখিত গ্রন্থদ্বয় আমাদের দেশের কওমী ও আলিয়া মাদ্রাসার ছেলেদের পড়ানো হয়, যার মধ্যে হাদীস বিরোধী অগণিত ফাতওয়া বিদ্যমান। তাইতো আমাদের এই সিলেবাসধারী মৌলবীদের সূরা ফাতিহার কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলে এটা তো (নামায) সলাত নয় ‘দু’আ’ কারণ এতে রুকূ, সাজদাহ্ নেই। ‘‘জানাযার সলাতে কুরআন শরীফের কোন সূরা ক্বিরআত পাঠ করবে না। সূরা ফাতিহা দু‘ আর নিয়্যাতে পাঠ করাতে কোন দোষ নাই। কিন্তু ক্বিরআতের নিয়্যাতে পাঠ করা জায়েয নয়। কেননা এটা ক্বিরআতের ক্ষেত্র নয়। বরং দু‘আর ক্ষেত্র।’’ (মুহীতঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৩৯৮ পৃঃ) অথচ স্বয়ং আল্লাহতা‘আলা যে কুরআনে জানাযাকে সলাত বলেছেন, সেটা দেখার সুযোগটুকুও হয়না তাদের। কারণ তাদের সঠিকভাবে কুরআনের তালিম দেওয়া হয়না। আর কেনইবা দিবে কারণ হিদায়া গ্রন্থকে তারা কুরআনের মত মনে করে (নাউযুবিল্লাহ)। এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন এ দীন লেখকের লেখা ‘মাযহাবের স্বরূপ’ বইটি
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘(ভবিষ্যতে) উহাদের (মুশরিকদের) মধ্যে কাহারো মৃত্যু হইলে তুমি কখনও উহার জন্য (জানাযার) সলাত পড়িবে না এবং উহার কবর পার্শ্বে দাঁড়াইবে না। উহারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করিয়াছে এবং পাপাচারী অবস্থায় উহাদের মৃত্যু হইয়াছে। (আত্-তাওবা, ৯ঃ৮৪)
.
আল্লাহ বলেন- জানাযা সলাত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেন- জানাযা সলাত, অথচ আমাদের তথাকথিত সিলেবাসধারী মৌলবীরা নিজেদের লালিত ভ্রান্ত আদর্শ টিকিয়ে রাখার জন্য বলেন- এটা সলাত নয় এটা তো দু‘আ। জানাযার সলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক। কেননা, সূরা ফাতিহা হলো উত্তম দু‘আ। জানাযার সলাতে ফাতিহা পাঠ করা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত, ‘‘তালহা বিন আবদুল্লাহ বিন আউফ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘আমি আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) এর পিছনে জানাযার সলাত আদায় করেছি। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন এবং জানাযা শেষে বললেন, যেন লোকেরা জেনে নেয় যে, জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত। (সহীহ বুখারী-১/১৭৮ পৃঃ, আবু দাউদ-২/৪৫৫ পৃঃ, নাসাঈ-২৮১ পৃঃ, ইবনু মাহ-১০৮, ১০৯ পৃঃ, যা‘আদুল মা‘আদ-১/৩১২ পৃঃ)
.
জানাযার তাকবীর সমূহে হাত উত্তোলন
.
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন জানাযার সলাত পড়তেন, তখন প্রত্যেক তাকবীরে হাত উত্তোলন করতেন। (দারাকুতনী তায়ালীকসহ-১/১৯২ পৃঃ, বুখারী কিতাবুল রাফউল ইয়াদাইন-১৫৪,১৫৭ পৃঃ)।
.
৪৯। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে মহিলাদের জানাযায় শরীক করা হয়না, অথচ এটা সুন্নাহ বিরোধী
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আব্বাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) এর ইন্তিকালের পর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণরা তাঁর জানাযা মাসজিদে নিয়ে আসার জন্য সংবাদ পাঠালেন, যাতে তাঁরা তাঁর জানাযার সলাত আদায় করতে পারেন। তাঁরা তাঁর জানাযার সলাত আদায় করলেন। (সহীহ্ মুমলিম -১/৩১২, ৩১৩ পৃঃ)
.
৫০। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে শুধু ফজর এবং আসর সলাতে ইমামগণ সালাম ফিরিয়ে মুক্তাদিদের দিকে ঘুরে বসেন। (মারাকুলফালাহর, উদ্বৃতিতে আহকামে যিন্দেগী-১৪৭ পৃঃ) এটা সুন্নাহ পরিপন্থী। বরং প্রত্যেক সলাতেই ঘুরে বসতে হবে। হাদীসে শুধু ফজর এবং আসরকে নির্দিষ্ট করা হয়নি।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন কোন সলাত শেষ করতেন তখন আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন। (সহীহ্ বুখারী-১১৭ পৃঃ, সহীহ মুসলিম-২৪৭ পৃঃ, মিশকাত-মাদ্রাসার পাঠ্য-২/হা/ ৮৮৩-৮৮৫)
.
.........................................................................
বইটির নামঃ'' প্রচলিত ভুল বনাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি।''এই গ্রন্থে নামাজের ১০১ টির অধিক ভুলের দলিলসহ সমাধান পেশ করা হয়েছে।
লেখকঃ সাইখ মুরাদ বিন আমজাদ

No comments:

Post a Comment