ভুল ৪১ - ৪৫
.
৪১। প্রচলিত ভুলঃ কাদ্কামাতিস সলাহ্ বলার সামান্য পূর্বে ইমাম তাকবীর বলবে (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১৫৭)
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রোগের কারণে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তিনদিন পর্যন্ত ঘরের বাইরে আসেন নি। এসময় একবার সলাতের ইক্বামাত দেওয়া হলে। আবু বক্বর (রাঃ) ইমামতির জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ঘরের পর্দা ধরে উঠলেন।....তিনি হাতের ইশারায় আবু বক্বর (রাঃ)-কে ইমামতির জন্য ইশারা করলেন ও পর্দা ফেলে দিলেন। (সহীহ বুখারী-২/হা/৬৪৭) এই হাদীসে ইক্বামাত শেষ হবার পরই আবু বক্বর (রাঃ) ইমামতির জন্য অগ্রসর হবার কথা বর্ণিত। উপরন্তু ইমাম মুক্তাদী সকলকেতো ইক্বামাতেরও জবাব দিতে হয়। তাহলে কাদ্কামাতিস সলাহ্ বলার সাথে সাথে ইমাম তাকবীর বললে বাকী শব্দগুলোর জবাব তিনি কখন দিবেন? মুক্তাদীরা তাকবীর শেষ হবার পর ইমামকে অনুসরণ করে সলাত শরু করবে না মুয়ায্যিনের ইক্বামাতের অবশিষ্ট কালিমাগুলো শুনে জবাব দিয়ে তারপর সলাত শুরু করবে? এর মধ্যে তো ইমামের সানা শেষ হয়ে কিরআত শুরু হয়ে যাবে। তাহলে মুক্তাদিরা কখন সানা পড়বে? এসব হাদীস বিরোধী ফাতওয়ার কি কোন প্রয়োজন ছিল? না এসব ফাতওয়া প্রদান করে হাদীসকে উপেক্ষা করে সলাতে বিদ’আত ঢুকানো হয়েছে?
.
৪২। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে পুরুষ ও মহিলাদের সলাতের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। অথচ এটা সহীহ্ হাদীস পরিপন্থী বিদ‘আত।
.
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) পুরুষ ও মহিলালে সলাতে কোন পার্থক্য বর্ণনা করতেন না। বরং (মহিলা সাহাবী) উম্মু দারদা (রাঃ) বলেনঃ‘‘ আমরা পুরুষদের মতই সলাতে বসতাম (অর্থাৎ পুরুষের মত সলাত আদায় করতেন) অথচ তিনি ছিলেন ফকীহা বা দ্বীন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানী। কিন্তু লোকেরা পুরুষ-মহিলার সলাতে পার্থক্য বর্ণনা করে থাকে (সহীহ্ বুখারী-১/৩৫৫) আল্লামা আইনী হানাফী, উম্মু দারদা (রাঃ) এর উক্ত রেওয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন, ‘মহিলাদের জন্যও পুরুষদের ন্যায় বসা মুস্তাহাব। আর তা হল, ডান পা খাড়া রাখবে এবং বাম পা বিছিয়ে রাখবে। এটাই ইমাম নাসাঈ, ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম মালিক রাহিমাল্লাহুগণের উক্তি। (আইনী ৩/১৬৫)
.
৪৩। প্রচলিত ভুলঃ মাহিলাদের জন্য জাম’আতে শরীক হওয়া মাকরূহ। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী- ২২৭)
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর যুগে নারীগণ মাসজিদে জাম’আতে উপস্থিত হয়ে সলাত আদায় করতেন-আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাত আদায় করতেন আর তার সঙ্গে অনেক মুমিনা মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হত। অতঃপর তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেত আর তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না। (সহীহ্ বুখারী-১/হা/৮১৫-৮২৪ ই.ফা.বা, তিরমিযী-১/৫৩২ পৃঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) মহিলাদের জামাআতে শরীক হওয়ার অনুমতি দিবার পর কেউ যদি তা রহিত করে সেটা কি ওহীর বিরুদ্ধাচারণ করা হলো না? ফিতনার যুগের অজুহাত পেশ করে মাসজিদে যেতে নিষেধের ফাতওয়া দেওয়া হয়, আর হাট-বাজার, মার্কেট, ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত এমনকি মন্ত্রী হয়ে বেপর্দায় বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও আপত্তি থাকেনা। এমনটি তো আশ্চর্য ব্যাপার। অথচ মাসজিদে পৃথকভাবে পর্দার সাথে সর্বাঙ্গ ঢেকে আল্লাহর ইবাদতে শামিল হওয়া তো সব থেকে নিরাপদ। ফিতনা-ফাসাদ মুক্ত মাসজিদ তো দুনিয়ার সব থেকে নিরাপদ স্থান। সেখানে আল্লাহর বান্দীরা প্রবেশ করলে কেন ফিতনার কারণ বা আশংকা হবে? অথচ যেখানে শয়তানের পদচারণা সেই মার্কেট আর বাজারে নারীর আহবান উচ্চ কন্ঠে। এখানেই তো ফাতওয়া জোরদার হওয়া উচিৎ ছিল। আল্লাহর বিধান ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতির উপর হস্তক্ষেপ আদৌ কল্যাণকর নয় বরং বিপজ্জনক। আমার বুঝে আসে না, নারীরা তাদের অধিকার আদায়ে যখন সোচ্চার তখন এই মৌলিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে নিশ্চুপ কেন?
.
৪৪। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসল্লীকে দেখা যায় মাসজিদে গিয়ে প্রথমে বসেন অতঃপর দাঁড়িয়ে সুন্নাত বা নফল সলাত আদায় করেন। অথচ এটা সহীহ্ হাদীসের পরিপন্থী এবং বসাই যাবেনা দু’রাক’আত আদায় ব্যতীত।
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মাসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত দু’রাক’আত সলাত না পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত যেন না বসে। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেনঃ ‘‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ মাসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক‘আত সলাত পড়ে (সহীহ্ বুখারী-১/৬৩, ১৫৬ পৃঃ)। লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় সলাত পড়া নিষেধ-তাহলে একজন লোক মাসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে লাল বাতি জ্বলছে তাবে সে উপরে বর্ণিত সহীহ্ হাদীসের নির্দেশ অনুযায়ী দু’রাক‘আত সলাত পড়বে না লাল বাতির নির্দেশ মানবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ পালন করা কর্তব্য না ব্যক্তি বিশেষের বা ইমাম সাহেবের বিদ’আতী বা নাজায়েয নির্দেশ মানা কর্তব্য? সাধারণত দেখা যাচ্ছে সাধারণ লোকেরা দু’রাক‘আত সলাত না পড়েই বসে পড়েন। এখন ঐ ব্যক্তি সলাত না পড়ে রাসূলের নির্দেশিত সুন্নাতের খেলাফ করার জন্য কে দায়ী হবে? একথা কি আমাদের শ্রদ্ধেয় ইমাম সাহেবরা একবারও চিন্তা করেছেন? ফলাফল কি হল? একটা সুন্নাত বর্জিত হল আর একটা বিদ’আত স্থান করে নিল। সমাজে এভাবেই তো বিদ’আতের অনুপ্রবেশ ঘটে।
.
৪৫। প্রচলিত ভুলঃ জুমু‘আর খুতবা পাঠ আরম্ভ হলে কেবল ঐ দিনকার ফজরের সলাতের কাজা ব্যতীত অন্য কোন সলাত.... জায়েয নেই। (সহীহ্ মোকছুদুল মোমেনীন বা বেহেশতের কুঞ্জি-১৯২ পৃঃ মাসলাহ-৫) অনুরূপভাবে আমাদের দেশে জুমু‘আর দিনে মাসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে বসে তারপর দাঁড়িয়ে সুন্নাত পড়ে’ এটা সুন্নাহ বিরোধী। বরং মাসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বেই কমপক্ষে দু’রাক‘আত সলাত পড়তে হবে। খুতবার সময় মাসজিদে প্রবেশ করলেও দু’রাক‘আত পড়ে বসতে হবে।
.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ প্রমাণ হলোঃ জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ কোন এক জুমু‘আর দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন করল। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, ‘‘হে অমুক তুমি কি সলাত আদায় করেছ? সে বলল, না। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘‘উঠ, সলাত আদায় কর।’’ অপর এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) খুতবা দেওয়া অবস্থায় বলেনঃ ‘‘যখন তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় মাসজিদে আগমন করে সে যেন সংক্ষিপ্ত করে দু’রাক‘আত সলাত পড়ে নেয়। (সহীহুল বুখারী-১/১২৭, ১৫৬ পৃঃ, সহীহ মুসলিম- ২৮৭ পৃঃ, আবু দাউদ-১৫৯ পৃঃ, তিরমিযী-৬৭ পৃঃ নাসাঈ-২০৭ পৃঃ, ইবনু মাজাহ-৭৯ পৃঃ, মিশকাত-১২৩ পৃঃ)
.
.........................................................................
বইটির নামঃ'' প্রচলিত ভুল বনাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি।''এই গ্রন্থে নামাজের ১০১ টির অধিক ভুলের দলিলসহ সমাধান পেশ করা হয়েছে।
লেখকঃ সাইখ মুরাদ বিন আমজাদ
No comments:
Post a Comment