এক- গুনাহ মাফ হয়:
জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে ভালোভাবে ওজু করে মসজিদে গমন করলে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من توضأ فأحسن الوضوء، ثم أتى الجمعة فاستمع وأنصت، غفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى وزيادة ثلاثة أيام، ومن مسَّ الحصى فقد لغا» [رواه مسلم، وأبو داود، والترمذي، وابن ماجة].
“যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযু করল, অতঃপর জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়ে মনোযোগ দিয়ে জুমু‘আর খুতবা শুনল এবং চুপ থাকলো, তার জন্য এ জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর স্পর্শ করল সে অনর্থক কর্ম করল”।[17]
দুই- জুমু‘আর সালাত কবিরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য গুনাহের জন্য কাফফারা:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الصلوات الخمس، والجمعة إلى الجمعة، ورمضان إلى رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر» [رواه مسلم وغيره].
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, জুমু‘আ এবং রামাদানের মধ্যবর্তী সময়ে যে সব গুনাহ হয়ে থাকে, পরবর্তী সালাত, জুমু‘আ ও রমাদান সে সব মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফফারা। যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে”।[18]
অপর একটি হাদিস- আবু আইয়ুব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি- তিনি বলেন,
«من اغتسل يوم الجمعة، ومس من طيب إن كان عنده، ولبس من أحسن ثيابه، ثم خرج حتى يأتي المسجد، فيركع ما بدا له، ولم يؤذ أحدًا، ثم أنصت حتى يصلي، كان كفارة لما بينها وبين الجمعة الأخرى» [صحيح. رواه أحمد، والطبراني، وابن خزيمة في صحيحه].
“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে, আতর-খোশবু লাগায়, যদি তার কাছে থাকে এবং সুন্দর জামা-কাপড় পরে, মসজিদে এসে সালাত আদায় করে এবং কাউকে সে কষ্ট না দেয়, তারপর সে জুমু‘আর সালাত আদায় করা পর্যন্ত চুপ থাকে, তাহলে তা তার এ জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহ সমূহের কাফফারা হবে”।[19]
তিন- আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করা হবে:
আবু মালেক আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الجمعة كفارة لما بينها وبين الجمعة التي تليها وزيادة ثلاثة أيام، وذلك بأن الله عز وجل قال: ﴿مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا﴾» [رواه الطبراني في الكبير، صحيح الترغيب رقم 682].
“জুমু‘আর সালাত তার পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহের জন্য কাফফারা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا﴾» যে কোন নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তার সাওয়াবকে দশ গুণ বাড়িয়ে দেন”।[20]
চার- জুমু‘আর সালাত জান্নাত লাভের বিশেষ আমল:
জুমু‘আর সালাত আদায় দ্বারা জান্নাত লাভ করা যায়। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন,
«خمس من عملهن في يوم كتبه الله من أهل الجنة: من عاد مريضا، وشهد جنازة، وصام يوما، وراح إلى الجمعة، وأعتق رقبة» [رواه ابن حبان في صحيحه وهو حسن، 2771 صحيح الترغيب رقم 683].
“যে ব্যক্তি কোন দিন পাঁচটি আমল করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার নাম জান্নাতীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করবেন: রোগী দেখতে যাবে, কারও জানাযায় উপস্থিত হবে, রোযা রাখবে, জুমু‘আর সালাতে গমন করবে এবং দাস মুক্ত করবে”।[21]
পাঁচ- প্রতিটি কদমে কদমে এক বছর রোজা রাখা ও কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব:
পায়ে হেঁটে জুম‘আর সালাতে গমন করলে, প্রতি কদমে এক বছর রোজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে। আউস ইবনে আওস আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
«من غسل يوم الجمعة واغتسل، وبكر وابتكر، ومشى ولم يركب، ودنا من الإمام فاستمع ولم يلغ، كان له بكل خطوة عمل سنة؛ أجر صيامها وقيامها» [رواه أحمد، وأبو داود، والترمذي " وقال: حديث حسن، والنسائي، وابن ماجة، وابن خزيمة " وابن حبان في صحيحيهما، والحاكم، وصححه الألباني].
“যে জুমু‘আর দিন গোসল করাল ও করল, সকাল সকাল নিজে মসজিদে গমন করল, অপরকে উৎসাহ দিল এবং আরোহণ না করে পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসল, অতঃপর শুনল এবং কোন অনর্থক কর্ম করল না, সে প্রতিটি কদমে এক বছর রোজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে”।[22]
ছয়- জন্তু কুরবানি করার সাওয়াব:
জুমু‘আর দিন যে ব্যক্তি যত আগে জুমু‘আর সালাতে আসবে, সে তত বেশি সাওয়াব লাভ করবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من اغتسل يوم الجمعة غسل الجنابة ثم راح في الساعة الأولى فكأنما قرب بدنه، ومن راح في الساعة الثانية فكأنما قرب بقرة، ومن راح في الساعة الثالثة فكأنما قرب كبشا أقرن، ومن راح في الساعة الرابعة فكأنما قرب دجاجة، ومن راح في الساعة الخامسة فكأنما قرب بيضة، فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر» [رواه مالك في "الموطأ" والبخاري، ومسلم، والترمذي وأبو داود وغيرهم].
“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ফরয গোসলের মত গোসল করে, তারপর প্রথম সময়ে মসজিদে গমন করে, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি উট কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি গরু কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ভেড়া কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি মুরগী আল্লাহর রাস্তায় দান করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করল। অত:পর যখন ইমাম উপস্থিত হয়, তখন ফেরেশতারাও উপস্থিত হয় এবং তার খুতবা শ্রবণ করে”।[23]
#====#
17] মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭, ২৭; আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫০ তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৮ ইবনু মাযা, হাদিস: ১০২৫, ১০৯০।
[18] মুসলিম, হাদিস: ২৩৩
[19] আহমদ, হাদিস: ২৩৫৭১; ইবনু খুজাইম, হাদিস: ১৭৬২
[20] বর্ণনায় সহীহ তাবরানী কবীর গ্রন্থে; সহীহ আত-তারগীব, হাদিস: ৬৮২
[21] সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ২৭৭১; সহীহ আত-তারগীব, হাদিস: ৬৮৩
[22] আহমদ, হাদিস: ১৬১৭৬; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৫; তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৬; নাসায়ী, হাদিস: ৯৫/৩; ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৮৭; ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৭৬৭; ইবনু হিব্বান, হাদিস: ২৭৮১; আল্লামা আলবানী হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
[23] বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৮৮১; মুসলিম, হাদিস: ৮৫০; তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৯; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫১।
No comments:
Post a Comment