১।প্রচলিত ভুলঃ প্রচলিত উযূর মধ্যে বাংলায় বা আরবীতে নাওয়াইতুআন আতআজ্জা…… নিয়্যাত হিসাবে পড়া হয়। কিন্তু সহীহ হাদীস তো দূরের কথা কোন যঈফ হাদীসেরও মুখে নিয়্যাত উচ্চারণের কথা বলা নেই।
* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর পদ্ধতিঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়্যাত করবে।’’ (সহীহুল বুখারী-১/১, সহীহ্ মুসলিম’ ৪৬) অতএব নিয়্যাত করতে হবে পড়তে হবে না। আনোয়ার শাহ্ কাশ্মিরী (রঃ) বুখারীর শরা হতে লিখেছেন; নিয়্যাত হলো- অন্তরের কার্যসমূহ। (ফয়যুল বারী-১/৮ পৃঃ)
২। প্রচলিত ভুলঃ উযূর প্রথমে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অথবা আলহামদুলিল্লাহ অথবা আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করলে বিসমিল্লাহ পাঠের সুন্নাত আদায় হয়ে যায়। (ফাতোয়ায়ে আলমগিরী, তাজ কোঃ ১/৩০ পৃঃ) তাছাড়া প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার জন্য পৃথক পৃথক দু’আর প্রচলন আছে। (বেহেশতী জেওর-১/৯৮,৯৯,১০, ফতোয়ায়ে আলমগীরী তাজ কোঃ ১/৩৪ পৃঃ)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘সে ব্যক্তির সলাত হয় না, যার উযূ নেই। আর যে ব্যক্তি উযূর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, তার উযূ হয় না। (সহীহ মুসলিম ২/৩২, তিরমিযী-১/২৯ পৃঃ ইফাবা, ইবনে মাজাহ-১/১৭৯ পৃঃ, আবু দাউদ-১/৫১ পৃঃ, মিশকাত-২/৩৭০) উল্লেখ্য যে, শুরুতে বিসমিল্লাহ ছাড়া মধ্যখানে প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার কোন আলাদা দু’আ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং কেউ তা করলে বিদ’আত হবে।
৩। প্রচলিত ভুলঃ মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা ফরয। মুথতাছার কুদুরী মাদ্রাসার ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর পাঠ্য ৮ পৃঃ ফতোয়ায়ে আলমগিরী ২৮ পৃঃ বেহেশতী জেওর ১/৪১ পৃঃ ১৫ নং মাসআলায় মাথার অগ্রভাগ পরিমাণ মাসাহ করা ফরয। (হিদায়া আলমগীরী-৪৫ পৃঃ ১/ ইফবা মাথার সম্মুখভাগ মাসাহ না করে যদি কোন ব্যক্তি মাথার পেছনের অংশ অথবা ডান বা বাঁদিকে মাথার মধ্যাংশ মাসাহ করে তবে মাসাহ দুরস্ত হবে। (তাতারখানিয়া’ ফাতোয়ায়ে আলমগীরী-১/৪৫)
৪। প্রচলিত ভুলঃ উভয় হাতের পৃষ্ঠ দ্বারা ঘাড় মাসাহ করবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ৫১ পৃঃ)
* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ ঘাড় মাসাহ করা বিদ’আত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) হতে ঘাড় মাসাহ (বিশুদ্ধ সূত্রে) প্রমাণিত নয়। সহীহ্ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নাবাবী (রঃ) একে বিদ‘আত বলেছেন। (সহীহ বুখারী তাওঃ প্র. টীকা ১১১ পৃঃ) উল্লেখ্য যে, উযূর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া সুন্নাত। (মুসলিম-২/৩৯)।
৫। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে প্রচলিত বিভিন্ন কথিত ধর্মীয় পুস্তকে উযূর পূর্বে পাঠ করার জন্য নিম্নের দু’আটি শেখানো হয়েছে- উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহেল আলিউল আযীম, ওয়ালহামদুলিল্লাহ আলা দ্বীনেল ইসলাম, আল ইসলামু হাক্কুন ওয়াল কুফরি বাতেলুন, ওয়াল ইসলামু নুরুন ওয়াল কুফরু জুলমাতুন। (মওঃ গোলাম রহমান, মকছুদুল মোমেনীন-১২৭ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ দুই নং আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দ্রষ্টব্য। এছাড়া উল্লিখিত সব বানাওয়াট বা জাল কথা এর কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। তাছাড়া ‘বেহেস্তি জেওর’ ও উল্লিখিত ‘মোকছুদুল মোমেনিন’ সহ বিভিন্ন প্রচলিত পুস্তকে উযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পাঠ করার জন্য বিশেষ দু‘আর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, হাত ধোয়ার, কুল্লি করার, নাক পরিষ্কার করার ইত্যাদি। অথচ এই দু‘আর কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা হয় তার সবই বানোয়াট বা জাল। ইমাম দারাকুতনী, ইমাম নববী, ইমাম সূযুতী, মোল্লা আলী, ক্বারী-আল-হানাফী ও অন্যান্য মুহাদ্দীসগণ সকলেই হাদীসটিকে জাল ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। (নাববী, আল-আযকার ৫৭ পৃঃ,ইবনুল কাইয়েম, আল-মানারুল মুনিফ ১২০ পৃঃ, আল ক্বারী, আল-আসরারুল মারফূআ ৩৪৫, গৃহীত, হাদীসের নামে জালিয়াত ৩৬৪ পৃঃ)
৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে কোন কোন গ্রন্থে লেখা আছে। উযূর পরে সূরা ক্বদর পাঠ করিলে সিদ্দীকের দরজা হাসিল হইবে। (মওঃ গোলাম রহমান, মোকছুদুল মোমেনীন ১৩২-১৩৩ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ ওমর ফারূক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে উযূ করবে ও কালেমায়ে ‘শাহাদাতইন’ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৯) এ দু‘আর সাথে তিরমিযী শরীকের বর্ণনায় আরো একটি দু‘আ পাওয়া যায় তা’হলঃ-
উচ্চারণঃ- ‘‘আল্লা-হুম্মাজ আলনী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্ ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহিরীন।’’ অর্থ- হে আল্লাহ আপনি আমাকে অধিক তাওবাকারী এবং পাক পবিত্র লোকদের অন্তর্ভূক্ত করেদিন। (সহীহ্ তিরমিযী-১/৪৯ পৃঃ)
৭। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লিকে দেখা যায় উযূর শেষে উল্লিখিত দু‘আ পাঠ করার সময় আসমানে দিকে তাকায়। অথচ উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীসটি ‘মুনকার’ বা যঈফ। (আলবানী, ইরাওয়াউল গালীল-১/১৩৪ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ উপরে বর্ণিত শাহাদাতাইন ও তিরমিযী বর্ণিত দু‘আটি পাঠ করা। আসমানের দিকে না তাকিয়ে। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত হা/ ২৮৯, সহীহ্ তিরমিযী-১/৪৯ পৃঃ, হা/৫৫)
৮। প্রচলিত ভুলঃ ‘‘তায়াম্মুমে দুই হাত মাটিতে মারিবে-প্রথমবার হাত দ্বারা মুখমন্ডল মুছিয়া নিবে আর দ্বিতীয়বার হাত দ্বারা কনুই সহ দুই হাত মাসাহ করিবে।’’ (কুদুরী-৪২ পৃঃ)
* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আম্মার ইবন ইয়াসার (রাঃ) গোসলের প্রয়োজনে পানি না থাকায় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সলাত আদায় করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘‘তোমার জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট ছিল’’-এ বলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) দু’হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর চেহারা ও উভয় হাত মাসাহ্ করলেন (সহীহুল বুখারী-১/৩৩৮)। এই হাদীস দ্বারা একবার পবিত্র মাটিতে হাত মারার কথা প্রমাণিত হয়। অথচ মাযহাবী বিদ্বানগণ তায়াম্মুমের জন্য দু’বার মাটিতে হাত মারার কথা উল্লেখ করে থাকেন। ইমাম বাইহাকী এ রাবীকে দুর্বল বলেছেন। ইমান নাসঈ ও দারা কুতনী তাকে মাতরুকুল হাদীস বলেছেন। তাছাড়া শরহে বিকায়ার ১ম খন্ডে দু’হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ্ করার যে পদ্ধতি বর্ণিত আছে তাতো সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কোন কোন কিতাব আংটি কিংবা চুড়ি থাকলে নাড়িয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, যদি এক গাছি লোম পরিমাণ স্থানও হাতে কিংবা মুখে মোছা না যায় তবে তায়াম্মুম হবেনা। এ সকল কথা প্রমাণহীন ও নব-আবিষ্কৃত বিদ’আত। ‘‘মাসাহা বিহিমা ওয়াজহাহু ওয়া কাফফাইহী’’ দ্বারা সঠিক অর্থ মুখমন্ডলও কব্জি মাসাহ্ করলেন যারা এর দ্বারা কনুই সহ হাত বুঝেছেন তারা ভুল করেছেন। কারণ, কনুই সহ দুই হাতের আরবী হল ‘‘যিরাউন’’ অতএব বুঝা গেল তায়াম্মুমের সঠিক তরীকা হল একবার পবিত্র মাটিতে হাত মেরে ফুঁ দিয়ে হস্তদ্বয় কব্জি পর্যন্ত এবং মুখমন্ডল একবার মাসাহ করা।
৯। প্রচলিত ভুলঃ ইক্বামাত ঠিক আযানের মত, তবে ‘‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’’-এর পর ‘‘কাদকামাতিস সলাহ’’ দুইবার বলতে হবে। (হিদায়া ইফাবা-১/৬৫ পৃঃ, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১/১১৬ পৃঃ, আল মুখতাছারুল কুদুরী মাদ্রাসার ৯ম-১০ম শ্রেণীর পাঠ্য-৬১ পৃঃ)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, ‘বিলালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সে যেন আযান জোড় অর্থাৎ দুবার দুবার দেয় এবং ইক্বামাত ক্বাদামাতিস সলাহ ব্যতীত বে-জোড় অর্থাৎ একবার দেয়। (সহীহ বুখারী ১/৮৫ পৃঃ, সহীহ মুসলিম ১/১৬৪-১৬৫ পৃঃ আবু দাউদ ১/৭৫ পৃঃ)
১০। আযানের দু’আ প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে রেডিও, টিভি ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ফিকহী গ্রন্থে কিছু অতিরিক্ত শব্দ বলা হয়, যেমনঃ ‘ওয়াদারাজাতির রাফিয়া’ এবং ‘ইন্নাকালা তুখলিফুল মি‘আদ’ (বেহেশতী জেওর, ২য় খন্ড ১২২ পৃঃ, মাসআলা-৯)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম -এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করে-আল্লা হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলা, ওয়াব‘আছহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া আত্ত্বাহ’- ক্বিয়ামাতের দিন সে আমার শাফা’আদ লাভের অধিকারী হবে।’ (সহীহুল বুখারী হা/৬১৪ পৃঃ ২৯৮) উল্লেখ্য যে, আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরুদ পড়বে অতঃপর দু’আ পাঠ করবে। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭) প্রিন্টেড.
No comments:
Post a Comment