মাসজিদে মিলাদ পড়া নিয়ে মহা গ্যাঞ্জাম লেগে গেলো। হুজুর ঘোষনা দিয়েছেন তিনি আর এই মাসজিদে মিলাদুন্নাবী উৎযাপন করতে দিবেন না। এমনকি বিভিন্ন সময়ে যে মিলাদ পড়ানো হয়, এখন থেকে সেটাও আর পড়াবেন না, তার ইমামতির চাকুরী থাকুক বা না থাকুক। রিজিকের মালিক আল্লাহ!
.
মাসজিদ কমিটির ২/৩ জন মুরুব্বী ও কিছু আঁতেল মুসল্লি চিৎকার চেচামেচী করা শুরু করলো। কমিটির সভাপতি বলে উঠলেন,
-এত দিন মিলাদ পড়ালেন কেন?
-এতদিন ভুল করেছি এই বিদ’আত করে। ডবল গুনাহ করেছি। প্রথম গুনাহ হলো বিদ’আত করার গুনাহ, আর দ্বিতীয় গুনাহ হলো সেই বিদ’আত করার পর আবার হাদিয়া স্বরুপ টাকা নেওয়ার গুনাহ।
-মিলাদ পড়া বিদ’আত কেন হবে?
-বিদ‘আত না হলে বলুন, এই মীলাদ পড়া সাওয়াবের কাজ না গুণাহের কাজ?
-গুনাহের কাজ কেন হবে? এখানে কি নাচ-গান হয় না ক্রিকেট খেলা হয় যে গুনাহের কাজ হয়? এখানে হামদ সানা পড়া হয়, দু’আ দরুদ পড়া হয়। এটা অবশ্যই সাওয়াবের কাজ!
-তাহলে আপনারা বলছেন যে, এটা নেকীর কাজ। তাহলে নিশ্চয়ই এই নেকীর কাজ সম্পর্কে রসুল ( ﷺ) জানতেন। কি জানতেন না?
-অবশ্যই জানতেন। এমন উদ্ভট প্রশ্ন করার মানে কি?
-আপনার কথা অনুযায়ী যেহেতু রসুল ( ﷺ ) জানতেন যে, মিলাদ পড়া একটি নেকীর কাজ, তাহলে তিনি কি তা আমাদেরকে পালন করতে নির্দেশ করেছেন?
-হ্যাঁ, নবী ( ﷺ ) তো এটা পালন করতে বলেছেন।
.
.
ইমাম সাহেব এবার একটু দম নিলেন। অতপর বলা শুরু করলেন, ‘আজ ৩০ বছর যাবৎ আমি এই মাসজিদে ইমামতি করছি। আপনাদের কত শতবার বলেছি, আমাদের অনুসরণে করতে হবে কোরআন ও হাদীছ।’
‘সভাপতি সাহেব বললেন যে, রসুল ( ﷺ ) আমাদের মিলাদুন্নাবী উৎযাপন বা মিলাদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জি আমারও ধারনা ছিলো মিলাদ পড়ার পক্ষে রাসুল ( ﷺ ) এর কোন না কোন নির্দেশ অবশ্যই আছে। না থাকলে কি আমাদের উস্তাদ, হুজুরগণ যুগ যুগ ধরে তা এমনি এমনি করে আসছেন!’
‘আমার ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে এই ৩০ বছর যাবৎ মিলাদ পড়ার নির্দেশ রসুল ( ﷺ) দিয়েছেন কিনা তা কখনও যাচাই করে দেখি নাই। আজ বেশ কিছুদিন যাবৎ যাচাই করতে গিয়ে দেখলাম রাসুল ( ﷺ) এর কোন হাদীছে এমন কোন নির্দেশ নাই যেখানে তিনি বলেছেন যে, তোমরা আমার নামে মিলাদ পড় বা আমার জন্মদিন উপলক্ষে তোমরা মিলাদুন্নাবী উৎযাপন করো।’
.
‘সভাপতি সাহেব, আমি আপনাদের ইমাম হয়ে বলছি, আমার ইলমের কমজুড়ী থাকতে পারে, মিলাদ পড়ার পক্ষে রাসুল ( ﷺ) এর আদেশ সম্বলিত হাদীছগুলো কি আপনার জানা আছে? যদি থাকে তবে সেই দলিলগুলো কি আপনি আমাকে দিতে পারবেন? দলিলগুলো পেলে আমার নিশ্চয়ই মিলাদ পড়া ছাড়া লাগবে না। হাদিয়া স্বরূপ টুপাইস কামানোর এই ধান্দাও বন্ধ হবে না।’
.
.
সভাপতি সাহেব মাথা চুলকাতে লাগলেন। তিনি মাসজিদের কতিপয় মুসল্লীকে সামনে ডেকে আনলেন। অতপর বললেন,
-আমি সাধারণ একজন মানুষ। কামেল পাশ বা দাওরা পাশ কোন আলেম নই। তবে এই মাসজিদে এমন অনেকেই আছেন যারা কামেল পাশ, দাওরা হাদীছ পাশ। উনারা আপনাদের সামনে দাড়িয়ে। আমি ইমাম সাহেব এর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য তাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
.
মাসজিদে পিনপতন নিরাবতা। কেউ কোন কথা বলছে না। দাওরা হাদীছ পাশ আলেমগনও ইমাম সাহেবে এর সাথে একমত পোষন করলেন। তাদের মধ্যকার একজন বলে উঠলেন,
-আমি ইমাম সাহেব এর সাথে একমত যে, বিশুদ্ধ হাদীছের দলিল হতে মিলাদ পড়ার পক্ষে কোন সহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। সুতরাং মিলাদ পড়া অবশ্যই বিদ’আত। যারা রাসুল ( ﷺ ) এর উপর দরুদ পড়ার হাদীছ ও কোরআন আয়াত দিয়ে মিলাদ পড়ার পক্ষে দলিল পেশ করে থাকেন তারা নিশ্চিত বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। কারণ এটা যে, মিলাদের দলিল সেটা শুধু আপনারাই কেবল বুঝলেন? আর স্বর্ণ যুগের কোন সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী, আইম্মায়ে মুজতাহিদ সালফে সালেহীনের কেউ বুঝলেন না? আবু বকর (রা), ওমর (রা), উসমান (রা), আলী (রা) কেউ সেই বুঝ বুঝলেন না? সাহাবীদের যুগের অন্য কোন মুহাদ্দীসও সেই বুঝ বুঝলো না? বুঝলো গিয়ে তাদের মৃত্যুর শত শত বছর পর কতিপয় মৌলুভী?
.
ইমাম সাহেব এবার বলে উঠলেন,
-যাযাকাল্লাহ খইরান ভাই। আশা করি সভাপতি সাহেব সহ মাসজিদের সকল মুসল্লি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন যে, মিলাদ পড়া আসলেই ইসলামের সোনালী যুগের কোন আমল নয়। রাসুল ( ﷺ ) এর মৃত্যুর প্রায় ৬০০ বছর পর আবিষ্কৃত হওয়া এই মিলাদ যে বিদ’আত তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। নাবী ( ﷺ) বিদ‘আত থেকে আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা।
অন্য হাদিছে রাসুল ( ﷺ ) আরও বলেনঃ আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা আর প্রতিটি গোমরাহীর পরিনাম জাহান্নাম!
No comments:
Post a Comment