Saturday, December 23, 2017

বিবেক উম্মোচন পর্ব:০২ বিষয়: ইমাম আবু হানিফা



No automatic alt text available.


🔮বিবেক উম্মোচন পর্ব:০২
বিষয়: ইমাম আবু হানিফা

📓প্রশ্ন:০৫: ইমাম আবু হানিফা (রহ:) কি আসলেই এশারের এক ওযু দিয়ে ৪০ বছর পর্যন্ত ফযর ছলাত পড়েছিলেন? 
📝সাইফুল্লাহ্ বিন নূরুল ইসলাম

📚উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'লার।
আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত এই ধারনা টি কুরআন ও সহীহ হাদিস দ্বারা কতক্ষানি যৌক্তিক ভেবে দেখার বিষয়...!
কারণ আমরা এমন কোন আমলই করবোনা, যেটাতে রাসূলের নিষেধ রয়েছে।
🔜আসুন স্পর্শকাতর বিষয়টি হাদিসের মাধ্যমে যাচাই করে দেখি:
📗আনাস (রাঃ)বর্ণনা করেন:
তিন ব্যক্তি নবী ( স:)-এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী (স:)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন।
অতঃপর যখন তাদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তারা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নবী (স:)-এর তুলনা কোথায়?
তার তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন ক’রে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তার চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।’
🔸সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, 
‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব৷”

🔸দ্বিতীয়জন বললেন,‘আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না।’
🔸তৃতীয়জন বললেন, ‘আমি নারী থেকে দূরে থাকব। জীবনভর বিয়েই করব না।’
🔻অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( স:) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা এই এই কথা বলেছ?
📣 শোনো... ! আল্লাহর কসম... !
আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি।
🚨সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।”
(বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ৩৪৬৯নং)
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৫

🔴এখন চলুন দেখি
যারা বলে ইমাম আবু হানিফা এশারের ছলাতের এক ওযু দিয়ে ৪০ বছর ফযর ছলাত পড়েছেন কথাটি সহীহ হাদিসভিত্তিক কিনা।
উক্ত হাদিসে বলা হয়েছে যদি কেউ বলে সারা জীবনবর নামায পড়বে তাহলে সে রাসূলের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারন রাসূল (স:) বলেছেন:
"আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি।"
তাহলে কেউ যদি রাসূলের চেয়ে বড় বুজুর্গ গিরী দেখায় নিশ্চয় সে ভন্ড ছাড়া আর কেউ নয়। কিন্তু আমরা জানি, ইমাম আবু হানিফা শ্রেষ্ঠ ফকীহদের একজন। তাহলে এখানে ভন্ডামি টা করলো কে?
ইমাম আবু হানিফার কোন কিতাবে এটা লিখা আছে? .... না নেই। কারণ কিনি তার মতামত লিখতে নিষেধ করতেন। তবুও ওনার প্রিয় ছাত্র "আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ "ইমাম আবু হানিফার মতামত সমন্ধে অনেক তথ্যই দিয়েছেন। তাঁর প্রিয় এদুজন ছাত্রের কেহ ই এমন কথা বলেন নি ও লিখেন ও নি।
তাহলে এই মিথ্যে গুলো প্রচার করলো কে? এত্ত বড় একজন স্কলারের নামে? 
ইলিয়াসি তাবলীগ নয় তো...!?

🔵এখন চলুন কিছুক্ষনের জন্য মেনে নেই । 
তিনি ৪০ বছর ফযরের ছলাত আদায় করেছেন এশার ছলাতের ওযু দিয়ে। তার মানে তিনি ঘুমান নি, সারারাত ইবাদত করেছেন।

এখন আমার প্রশ্ন হলো , ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর (রহ:) স্যারের ফিকহুল আকবর বই থেকে জানতে পারি যে ইমাম আবু হানিফার স্ত্রী ছিল, সন্তানাদি ও ছিল। এবং তিনি কোরআন হাদিস শিক্ষার আগ্রহ করেন, যখন তিনি ব্যবসা ভালভাবে বুঝেন। তার মানে তিনি তখন কিশোর/ যুবক ছিলেন।
তাহলে এই সময় থেকে আগামী ৪০ বছরের মাঝে নিশ্চয় বিয়ে করেছেন নিশ্চয়? 
এমনকি স্ত্রী ও ছিল।

🔻যদি তিনি সারা রাত ইবাদত করে থাকেন , তাহলে নিজের স্ত্রীর হক কখন আদায় করছেন? কারন আপনার ওপর স্ত্রীর হক ও তো রয়েছে..?
🔥অনেক তাবলীগি ভাইদের যখন প্রশ্নটি করি, তারা দলীল ছাড়া উত্তর দিয়ে বলে যে, তিনি স্ত্রী কে সময় দিতেন দিনের বেলা...! 
কিন্তু যখন দলীল চাই, তখন চুপ.!...!!

আচ্ছা ঠিক আছে মেনে নিলাম তিনি দিনের বেলায় স্ত্রীর হক আদায় করতেন..!
এখন বলেন, যদি তিনি সারা রাতই ইবাদত করে তাহলে তাঁর অংগ প্রতঙ্গের হক কিভাবে আদায় করেছেন? রাসূল তো নিদ্রা যাওয়ার কথা ও বলেছেন? আর বলেছেন, আমাদের উপর আমাদের অঙ্গ প্রতঙ্গের ও হক রয়েছে...!
যা নিচের হাদিস টি প্রমাণ করে:
📓আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইব্ন আস (রাঃ) বর্ণনা করেন:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ( স:)-এর কাছে সংবাদ পৌছল যে, আমি সর্বদা সাওম (রোযা) পালন করে থাকি এবং সারা রাত্র সালাত আদায় করে থাকি।
তখন নবী ( স:)তার কাছে সংবাদ পাঠালেন কিংবা তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন।
🚨নবী (স:)বললেনঃ 
আমাকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, 
"তুমি সর্বদা সাওম (রোযা) পালন কর; 
সাওম (রোযা) ভঙ্গ কর না এবং সারা রাত্র সালাত আদায় করে থাক।"

তুমি এরূপ করবে না। কেননা,
তোমার চক্ষুর জন্য তোমার উপর হক রয়েছে। তোমার শরীরের জন্য তোমার উপর হক রয়েছে। তোমার স্ত্রীর জন্য তোমার উপর হক রয়েছে।

তুমি কখনো কখনো সাওম (রোযা) পালন করবে আবার কখনো সাওম (রোযা) ভঙ্গও করে ফেলবে। এবং রাত্রের কিছু সময় সালাত আদায় করবে আর কিছু সময় নিদ্রা যাবে।
🔘তুমি প্রত্যেক দশ দিনে একদিন সাওম (রোযা) পালন করবে, তাহলে তোমার জন্য অবশিষ্ট নয় দিনের সওয়াবও লেখা হবে।
🔸আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ( স:) আমি তো এর চেয়েও অধিক সাওম (রোযা) পালন করার সামর্থ রাখি।
তিনি বলেন, তাহলে তুমি দাউদ ( স:)-এর সাওম (রোযা) পালন কর।
🔸তিনি বলেনঃ দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাওম (রোযা) কিরূপ ছিল ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ( স:)?
তিনি বলেন, দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন সাওম (রোযা) পালন করতেন আর তিনি একদিন সওম ভঙ্গ করতেন আর তিনি শত্রুর মুখোমুখী হলে পলায়ন করতেন না।
তিনি বললেন যে, ইয়া নবীয়্যাল্লাহ (স: ) আমার সেই শক্তি কোথায়? ( সুবহান আল্লাহ)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪০১
🔴এমন উচু মানের একজন আলেম কিভাবে রাসূলের আদেশ অমান্য করতে পারে...! 
যেখানে সাহাবীরাই এমন টি করার অধিকার পায়নি, অথচ তাদের মর্যাদা কত ছিল..!
(সুবহান আল্লাহ্)

নিশ্চয় ইমাম আবু হানিফা একজন বিখ্যাত পন্ডিত। আজ কিছু পথভ্রষ্ট ও ব্যক্তি পুজারী আলেম রা যাচাই না করেই এসব গল্প বানিয়ে থাকে ওনার সম্মার্থে, অথচ এতে করে ইমাম আবু হানিফা কে কেবল অপমান আর ছোটই করা হচ্ছে।
🚫এমন কি মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। আবার বলে এরা নাকি "হানাফী"। ছি: ছি:। লজ্জা হওয়া উচিত।
📖আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা বলেন:
"যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। " 
সূরা আহযাব আয়াত : ৫৮

🔴এধরনের আরো কিছু ভিত্তীহীন মিথ্যা অপবাদ: যার কোন অস্তিত্ব নেই
🔘ইমাম আবু হানিফা আল্লাহ ৯৯ বার স্বপ্ন দেখেছেন । ( নাওযুবিল্লাহ্)
🔘 ইমাম আবু হানিফা স্বপ্নে আল্লাহর সাথে কথা বলতেন। ( নাওযুবিল্লাহ্)
🔘 ইমাম আবু হানিফার কোন ভুল ছিলনা। ( নাওযুবিল্লাহ্)

🔘ঈসা (আ:) হানাফী মাযহাবের হয়ে আসবেন, আর তিনি তা জোড়ালো ভাবে প্রতিষ্ঠা করবেন ।
🔘 তিনি যখন একটা হাদিস পেতেন তখন তা নিয়ে তিনি রাসূলের কবরের পাশে যেতেন, যতক্ষন না রাসূল (স:) বলতো যে, তোমার পাওয়া হাদিসটি সহীহ বা ভুল ততক্ষণ তিনি রওযা থেকে আসতেন না। ( নাওযুবিল্লাহ্)
উপদেশ: এইসব গাজাখুরী গল্প শুনে শুনে প্রচার করা থেকে বিরত থাকুন। একটা গল্প শুনেই যাচাই না করে "সুবহান আল্লাহ" বলতে যাবেনা। এমনি তে সারা দিন যিকির করেন, কিন্তু গল্প ও মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী শুনে নয়।
পৃথিবীর যে কেহ যে কোন বুজুর্গ হোক, কুরআন ও হাদিস দিয়ে পরীক্ষা করুন, টিকে গেলে মেনে নিন। অন্যথায় ছুড়ে মারুন।
 মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'লা ইমাম আবু হানিফা (রহ:) কে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক। আর মিথ্যাবাদীরা সংশো ধন হোক, নয়তো আল্লাহ্ তাদের ধ্বংশ করে দিক।
এমন কি আমি মিথ্যাবাদি হলে, আমাকে ও। আমীন। সুম্মা আমীন।

No comments:

Post a Comment